পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
চতুর্দশ অধ্যায় প্রশ্ন : বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পরিবেশের ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলে বলে তুমি মনে কর? ৫টি বাক্যে লেখো। উত্তর : বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পরিবেশের ওপর নিম্নরূপ প্রভাব ফেলে- ১. অধিক মাত্রায় খাদ্যশস্য ও ফসল ফলানোর জন্য একই জমি বছরে একাধিকবার চাষ করতে হয়। ২. জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়- যা জমির উর্বরতা নষ্ট এবং বিভিন্ন জলাশয়ের পানি দূষিত করে। ৩. গৃহনির্মাণ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গাছপালা নিধন করার ফলে পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ৪. পশু-পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়। ৫. খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে। প্রশ্ন : জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে? উত্তর : জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে- ১. বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও কলাকৌশলগত যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে। ২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা ও চর্চার মাধ্যমে। ৩. দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করে। ৪. উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে। ৫. বিজ্ঞানভিত্তিক ও কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে। ৬. বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। প্রশ্ন : প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব বর্ণনা কর। উত্তর : প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা ও খনিজসম্পদকে বোঝায়। এসব সম্পদের ওপর অধিক জনসংখ্যার প্রভাব নিচে বর্ণনা করা হলো- ১. মাটি : অধিক জনসংখ্যার অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জমিতে অধিক হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মাটি দূষিত হচ্ছে। ২. পানি : অধিক জনসংখ্যার কারণে তৈরি হচ্ছে অধিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের বেশির ভাগই পানিতে ফেলা হয়। এ কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। ৩. বায়ু : অধিক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন অধিক যানবাহন, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা। এসব উৎস থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস বায়ু দূষণ ঘটাচ্ছে। ৪. গাছপালা : অধিক জনসংখ্যার জন্য ব্যবস্থাসহ অন্যান্য জিনিস তৈরিতে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বনভূমির পরিমাণ কমে গেছে। ৫. খনিজসম্পদ : কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক সম্পদ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি খনিজসম্পদ অধিক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন : বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের চাহিদা পূরণে কী ধরনের প্রভাব পড়ে? ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর : বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে হয়, সেই সঙ্গে অধিক পরিমাণে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা হ্রাস পায় অন্যদিকে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদী বা জলাশয়ে পড়ে মাছ ও জলজপ্রাণী মারা যায়। ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া জমিতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে বায়ুমন্ডলে বায়ু উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বায়ুদূষণ ঘটে। প্রশ্ন : জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে কেন তা ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর : জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অধিকসংখ্যক লোকের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ইত্যাদির চাহিদা পূরণের জন্য বনজঙ্গল, গাছপালা কাটতে হচ্ছে। এতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে বন্যপ্রাণীর প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী টিকতে না পেরে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনে কৃষক জমিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। এসব সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানির সঙ্গে জলাশয়ে পড়ে জলজপ্রাণী ও মাছ ধ্বংস হচ্ছে, এসব কারণে ধীরে ধীরে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। প্রশ্ন : জনসংখ্যার ঘনত্ব কী? জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হলে আমরা কী ধরনের সমস্যায় পড়ব? উত্তর : জনসংখ্যার ঘনত্ব হলো প্রতি একক জায়গায় বসবাসরত মোট জনসংখ্যা। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হলে আমরা যেসব সমস্যায় পড়ব, তা হলো : ক. খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির ঘাটতি দেখা দেবে। খ. ফসলি জমির ঘাটতি দেখা দেবে। গ. চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ হ্রাস পাবে। ঘ. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণ ঘটবে। প্রশ্ন : পৃথিবীর জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা ৫টি বাক্য লেখ। উত্তর : আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন- ক. বাড়তি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। খ. উন্নতি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অল্প সময় অধিক খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। গ. জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন, রোগ-প্রতিরোধী ও অধিক উৎপাদনশীল ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ঘ. সৌর প্যানেলের মতো প্রযুক্তির উদ্ভাবনে নবায়নযোগ্য সম্পদ ব্যবহার করে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়, যা জীবাশ্ম জ্বালানি বা অনবায়নযোগ্য জ্বালানির অপচয় রোধ করে, পরিবেশ দূষণ কমায়। ঙ. বাড়তি জনগণের যাতায়াত সমস্যা দূর করতে হাইব্রিড গাড়ি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা বিদু্যৎ ও তেল উভয় জ্বালানি ব্যবহার করেই চলতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে।