বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর
পঞ্চম অধ্যায় ৭। সজল ও সৈকত শহরের একটি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। সজল শ্রেণিতে প্রথম। সে ল্যাপটপ ব্যবহার করে শিক্ষার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে। সে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্লাবের সদস্য এবং বিকালে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করে। অন্যদিকে সৈকত ল্যাপটপে গেম খেলে এবং বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করে। সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে পারে না। ক) সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার উপাদান কয়টি? খ) অঙ্গীভূতকরণ বলতে কী বোঝায়? গ) সজলের মধ্যে সামাজিকীকরণের যে মাধ্যমের প্রভাব পড়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ঘ) সজল ও সৈকতের উপর প্রভাব বিস্তারকারী সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এর নেতিবাচক দিকও ব্যাপক-বিশ্লেষণ করো। উত্তর : ক) সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার উপাদান চারটি। খ) শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে তার পছন্দের ও প্রয়োজনের জিনিস বেছে নেওয়ার যে ক্ষমতা তৈরি হয় তাই অঙ্গীভূতকরণ। এ প্রক্রিয়ায় শিশু অঙ্গীভূত করে নেয় বিভিন্ন খেলনা, ছবি ও ছড়ার বই প্রভৃতি যা বিনোদনের কাজে লাগে এবং মা-বাবা ও অন্য সদস্যদের যারা তার ভালোমন্দের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। যেমন-স্পাইডারম্যান কিংবা ব্যাটম্যান সেজে সবাইকে চমকে দিতে পছন্দ করে। অঙ্গীভূতকরণের এই প্রক্রিয়া ও প্রবণতার পরিধি ক্রমেই প্রসারিত হতে থাকে। গ) সজলের মধ্যে সামাজিকীকরণের যেসব মাধ্যমের প্রভাব পড়েছে সেগুলো হলো প্রযুক্তি, স্থানীয় সমাজের উপাদান ও সমবয়সি সঙ্গী। সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি, স্থানীয় সমাজের উপাদান ও সমবয়সি সঙ্গী বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকে সজলের সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রেও এই তিনটি উপাদানের প্রভাব দেখা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির চরম উন্নয়নে বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে এক মানুষের সঙ্গে আরেক মানুষের যোগাযোগ খুবই সহজ করে দিয়েছে। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভাব-বিনিময়, পরস্পরের খোঁজখবর নেওয়া এখন ঘরে বসে অল্প সময়ের মধ্যে করা যায়। পাশাপাশি স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদান যেমন-খেলাধুলার ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব প্রভৃতি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও আচার-আচরণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। শিশুর সামাজিকীকরণে সমবয়সি সঙ্গী তথা খেলার সাথী ও পড়ার সাথীর ভূমিকা রয়েছে। এদের মাধ্যমেই শিশুর মধ্যে সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, নেতৃত্ব ইত্যাদি গুণাবলি বিকশিত হয়। সুতরাং বলা যায়, সামাজিকীকরণে প্রযুক্তি, স্থানীয় সমাজের উপাদান ও সমবয়সি সঙ্গীদের ভূমিকা অপরিসীম। ঘ) উদ্দীপকে সজল ও সৈকতের সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি, স্থানীয় সমাজের উপাদান ও সমবয়সি সঙ্গীদের প্রভাব দেখা যায়। সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও এদের নেতিবাচক দিকও আছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি সামাজিকীকরণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এর নেতিবাচক ফলও আমরা ভোগ করছি। ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। মানুষের গঠনমূলক চিন্তাচেতনা লোপ পাচ্ছে। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে যুবসমাজ বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও চিত্র দেখে থাকে যা তাদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও আদর্শকে প্রভাবিত করছে। পাশাপাশি সমবয়সি বন্ধুদের সঙ্গে মিশে অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়ানো এবং মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। পরিশেষে বলা যায়, সামাজিকীকরণে প্রযুক্তি, স্থানীয় সমাজের উপাদান ও সমবয়সি সঙ্গীরা যেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তেমনি এর নেতিবাচক প্রভাবও আছে। তবে সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে এর নেতিবাচক দিকগুলো এড়ানো সম্ভব। ষষ্ঠ অধ্যায় ১। আবুল হোসেন তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে রামপুরে বাস করেন। তিনি ইজিবাইক চালিয়ে মাসে ৭ হাজার টাকা আয় করেন। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বছরে পান ৭ হাজার টাকা। এত অল্প টাকায় তিনি তার সংসার ঠিকমতো নির্বাহ করতে পারেন না। কারণ বছরে তার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সাংসারিক ব্যয় ১ লাখ টাকা। ক) মানব উন্নয়ন সূচক কাকে বলে? খ) বাংলাদেশে মানবসম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার একটি কারণ ব্যাখ্যা করো। গ) আবুল হোসেনের পরিবারের মাথাপিছু বার্ষিক আয় নির্ণয় করো। ঘ) মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরিফের গৃহীত পদক্ষেপটি কী একমাত্র উপায়? মতামত দাও। উত্তর : ক) একটি দেশের মানুষ প্রকৃত বিচারে কেমন আছে তা জানার জন্য যে সূচকসমূহ ব্যবহার করা হয় তাকে মানব উন্নয়ন সূচক বলে। খ) বাংলাদেশে মানব সম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার একটি কারণ হলো 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র'। একজন দারিদ্র্য মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য পায় না বলে দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। তাই এরা কাজ পায় না বা কাজ করতে পারে না। ফলে আয় কম হয়। কম আয়ের কারণে সঞ্চয় করতে পারে না বা কম সঞ্চয় করে। এ কারণে বিনিয়োগ কম হয় বা মূলধন কম থাকে, ফলে এরা দরিদ্রই থেকে যায়। এ কারণে মানব সম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। গ) আবুল হোসেনের মাসিক আয় ৭০০০ টাকা। তার বার্ষিক আয় হবে (৭০০০ী১২) টাকা = ৮৪০০০ টাকা তিনি বছরে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পান ১২০০০ টাকা। অতএব, তার মোট বার্ষিক আয় (৮৪০০০+৭০০০) টাকা =৯১০০০টাকা আবুল হোসেনের স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়েসহ তার পরিবারের মোট সদস্য ৭ জন। অতএব, আবুল হোসেনের পরিবারের বার্ষিক মাথাপিছু আয়= (৯১০০০স্ট৭) টাকা = ১৩০০০ টাকা। অতএব, আবুল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১৩০০০ টাকা। ঘ) হঁ্যা, আমি মনে করি আবুল হোসেনের পরিবারের মানব সম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের মূল বাধা হলো দারিদ্র্য। দেশে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। দারিদ্র্যের কারণে বেশির ভাগ মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও খাদ্যের মতো মৌল চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। যে কারণে আমাদের দেশের মানুষ দক্ষ জনসম্পদে পরিণত না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র'। উদ্দীপকের আবুল হোসেনের পরিবারের বার্ষিক আয় ৯১০০০ টাকা কিন্তু তার খরচ এক লাখ টাকা। অর্থাৎ তার কোনো সঞ্চয় থাকে না বরং অভাব সৃষ্টি হয়। এ কারণে তার মূলধন থাকে না এবং বিনিয়োগও হয় না, ফলে তারা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের পরিবারের মানব সম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের কারণে আবুল হোসেনের পরিবারের মানব সম্পদ উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়