অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয় বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
সারাংশ ও সারমর্ম সারাংশ : ছাত্রজীবন মানব জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। ভবিষ্যত জীবনের সাফল্য এ সময়ের কর্মকান্ডের ওপরই নির্ভর করে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সুন্দর জীবন গঠনের চর্চা শুরু করতে হবে। ছাত্রদের জ্ঞানার্জন ও চরিত্র গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের সঠিক নির্দেশনা পেলে শিক্ষার্থীর জীবন বিকশিত হয়। ৮. অভাব আছে বলিয়াই জগৎ বৈচিত্র্যময়। অভাব না থাকিলে জীব সৃষ্টি বৃথা হইত। অভাব আছে বলিয়াই অভাব পূরণের জন্য এত উদ্যম, এত উদ্যোগ। আমাদের সংসার অভাবক্ষত্রে বলিয়াই কর্মক্ষত্রে। অভাব না থাকিলে সকলকেই স্থাণু, স্থবির হইতে হইত, মনুষ্যজীবন বিড়ম্বনাময় হইত। মহাজ্ঞানীরা জগৎ হইতে দুঃখ দূর করিবার জন্য ব্যগ্র। কিন্তু জগতে দুঃখ আছে বলিয়াই সে সেবার পাত্র যত্রতত্র সদাকাল ছড়াইয়া রহিয়াছে। যিনি অন্নদান, বস্ত্রদান, জ্ঞানদান, বিদ্যাদান করেন তিনি যেমন জগতের বন্ধু, তেমনি যিনি দুঃখে আমাদের সেবার পাত্রে অজস্র দান করিতেছেন, তিনিও মানবের পরম বন্ধু। দুঃখকে শত্রম্ন মনে করিও না, দুঃখ আমাদের বন্ধু। সারাংশ : অভাব বা প্রয়োজনের কারণেই মানুষ নানা কিছু সৃষ্টি করে। আর সৃষ্টির প্রেরণাই মানুষের কাজের উৎস। অভাব না থাকলে মানুষ অলস ও উদ্যমহীন হয়ে যেত। দুঃখ আছে বলেই মহামানবগণ সেবার হাত প্রসারিত করেন। দুঃখে যিনি এগিয়ে আসেন, তিনি মানবের পরম বন্ধু। দুঃখের আগুনে পুড়েই মানুষ খাঁটি সোনা হয়। তাই দুঃখকে শত্রম্ন ভাবা ঠিক নয়। ৯. বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চরিত্র তদপেক্ষাও অধিকতর মূল্যবান। অতএব কেবল বিদ্বান বলেই কোনো লোক সমাদর লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। চরিত্রহীন ব্যক্তি যদি নানা বিদ্যায় আপনার জ্ঞান-ভান্ডার পূর্ণ করেও থাকে তথাপি তার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। প্রবাদ আছে যে, কোনো কোনো বিষধর সাপের মস্তকে মণি থাকে। মণি মূল্যবান বটে কিন্তু তাই বলে যেমন মণি লাভের নিমিত্ত বিষধর সাপের সাহচর্য বুদ্ধিমানের কাজ নয়, সেরূপ বিদ্যা আদরণীয় বিষয় হলেও বিদ্যা লাভের নিমিত্তে দুর্জন বিদ্বানের নিকট গমন করা বিধেয় নয়। কেননা, দুর্জনের সাহচর্যে আপনার নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে এবং এরূপে মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ নষ্ট হতে পারে। সারাংশ : চরিত্র মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। এটি বিদ্যার চেয়েও মূল্যবান। মাথায় মণি থাকলেও সাপ যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সাহচর্য বর্জনীয়। এতে নিজের চরিত্র কলঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ১০. খুব ছোট ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যেমন সূর্যকে দেখা যায়, তেমনি ছোট ছোট কাজের ভেতর দিয়েও কোনো ব্যক্তির চরিত্রের পরিচয় ফুটে ওঠে। বস্তুত মর্যাদাপূর্ণভাবে ও সুচারুরূপে সম্পন্ন ছোট কাজেই চরিত্রের পরিচয়। অন্যের প্রতি আমাদের ব্যবহার কীরূপ তা-ই হচ্ছে আমাদের চরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরীক্ষা। বড়, ছোট ও সমতুল্যের প্রতি সুশোভন ব্যবহার আনন্দের নিরবচ্ছিন্ন উৎস। সারাংশ : চরিত্রের মধ্য দিয়েই মানুষের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশিত হয়। ছোট ছোট সৎকাজের ভেতর দিয়ে মানুষের মনের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। ছোট-বড় সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার আমাদের জীবনকে সুন্দর করে। ১১. অপরের জন্য তুমি প্রাণ দাও, আমি তা বলতে চাইনে। অপরের ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর কর। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বল। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু করুণ চাহনি নিক্ষপে কর, তাহলেই অনেক হবে। চরিত্রবান, মানবতাসম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন, পরের দুঃখকে ঢেকে রাখতে গৌরববোধ করেন। সারাংশ : মানুষের জন্য অনেক বড় কিছু করতে না পাড়লেও ছোট ছোট কাজের দ্বারাও আমরা মানুষের উপকারে আসতে পারি। সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে অন্যের মনে আশার সঞ্চার করতে পারি। মানবিক আচরণ দিয়ে অসহায় মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারি। এভাবেই মহৎ মানুষেরা তাঁদের মহত্ত্বের পরিচয় দেন। ১২. মুখে অনেকেই টাকা অতি তুচ্ছ, অর্থ অনর্থের মূল বলে থাকেন। কিন্তু জগৎ এমনি ভয়ানক স্থান যে, টাকা না থাকলে তার স্থান কোথাও নেই- সমাজে নেই, স্বজাতির নিকট নেই, ভ্রাতা-ভগিনীর নিকট নেই, স্ত্রীর নিকট নেই। স্ত্রীর ন্যায় ভালোবাসে বল তো জগতে কে আর আছে? টাকা না থাকলে অমন অকৃত্রিম ভালোবাসারও আশা নেই, কারো নিকট সম্মান নেই। টাকা না থাকলে রাজায় চিনে না, সাধারণে মান্য করে না, বিপদে জ্ঞান থাকে না। জন্মমাত্র টাকা, জীবনে টাকা, জীবনান্তেও টাকা, জগতে টাকারই খেলা। সারাংশ : পৃথিবীতে অর্থের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। যার অর্থ নেই সমাজ সংসারে কোথাও তার মূল্য নেই। জন্ম থেকে মৃতু্য পর্যন্ত টাকাই মানুষের ভাগ্যের মূল নিয়ন্তা। সারমর্ম ১. নমঃ নমঃ নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি! গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি। অবারিত মাঠ, গগন ললাট চুমে তব পদধূলি ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি। পল্ববঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ, স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল- নিশীথ শীতল স্নেহ। বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে। সারমর্ম : মা ও মাতৃভূমি সবার কাছে প্রিয়। বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। এর আকাশ-বাতাস, নদী, মাঠ, প্রকৃতি-নিসর্গ, মানুষ সবই আমাদের ভালোবাসার ধন। বাংলার আবহমান অপরূপ রূপে প্রতিটি বাঙালিই মোহমুগ্ধ। ২. ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ বোতাম-অঠাটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান। দেখা হলেই মিষ্ট অতি, মুখের ভাব শিষ্ট অতি, অলস দেহ ক্লিষ্ট গতি, গৃহের প্রতি টান তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রা রসে ভরা মাথায় ছোটো বহরে বড় বাঙালি সন্তান। ইহার চেয়ে হতাম যদি আরব বেদুইন চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন। ছুটছে ঘোড়া উড়েছে বালি, জীবনস্রোত আকাশে ঢালি হৃদয়-তলে বহ্নি জ্বালি চলেছি নিশিদিন বরশা হাতে, ভরসা প্রাণে, সদাই নিরুদ্দেশ মরুর ঝড় যেমন বহে সকল বাধা-হীন। সারমর্ম : বাঙালি শান্তশিষ্ট, কর্মহীন, আরামপ্রিয় ও অলস জাতি। এ জীবন কারো কাম্য হতে পারে না। তার চেয়ে সাহসী, কর্মী ও চঞ্চলতা-মুখর জীবনের অধিকারী হওয়া অনেক বেশি সম্মানের। এই যে বিটপি-শ্রেণি হেরি সারি সারি- নিচ প্রায় কার ঠাঁই নহে অবনত। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়