বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : গ্রিনহাউস গ্যাস কী? আমরা দেখি যে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে বলে তুমি মনে করো? ৩টি বাক্যে লেখো। উত্তর : বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও জলীয়বাষ্প গ্রিনহাউসের কাচের মতো কাজ করে। এরা সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় না। কিন্তু এ গ্যাসগুলো উত্তপ্ত পৃথিবীতে থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয়। ফলে পৃথিবী রাতের বেলায়ও গরম থাকে। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির কারণে আমাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি। যেমন- এ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে এবং মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়- এর ফলে সাগর থেকে নদীতে লোনা পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব বলে তুমি মনে করো? ৫টি বাক্যে লেখো। উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত- ১. বন উজাড় না করে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো। ২. কার্বন ডাইঅক্সাইড কম উৎপন্ন হয় এমন জ্বালানি ব্যবহার। ৩. কলকারখানা স্থাপনের আগে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ। ৪. অধিক পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। ৫. গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যবহার কমানো। প্রশ্ন : তোমাকে এমন একটি এলাকায় বাস করতে বলা হলো যেখানে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ওই পরিবেশে তুমি কীভাবে খাপ খাইয়ে চলবে? ৫টি বাক্যে লেখো। উত্তর : ওই এলাকায় খাপ খাইয়ে চলার জন্য আমি নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করব- ১. দুর্যোগ শুরুর আগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করব। ২. শুকনো খাবার সংরক্ষণ করে রাখব। ৩. শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু-পাখিকে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব। ৪. বন্যার কারণে কোনো জায়গা পানিতে ডুবে থাকলে তাতে ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার উপর মাটি দেবো এবং ওই ধাপের উপর লাউ, শিম, বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো, ঝিঙা প্রভৃতি চাষ করব। ৫. লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে পারে এরকম ফসলের জাত উদ্ভাবন করে চাষ করার চেষ্টা করব। প্রশ্ন : বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী কী হতে পারে? আলোচনা করো। উত্তর : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চল ও পর্বতের চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। সাগর থেকে নদীতে নোনা জল ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘন ঘন ঘটতে পারে। প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী কী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে? উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। যেমন- \হ ক) ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হার ও মাত্রা বৃদ্ধি পাবে; \হখ) হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা দেখা দেবে; \হগ) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরা দেখা দেবে; \হঘ) সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। প্রশ্ন : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার দুটি কৌশল লেখো। \হউত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার দুটি কৌশল হলো- ক) জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো; খ) জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন। আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রশ্ন : বায়ুচাপ কী? উত্তর : বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করে তাই বায়ুচাপ। বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। বায়ুচাপ হ্রাস পেলে মেঘ-বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে আর বায়ুচাপ কমলে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। প্রশ্ন : কীভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়? উত্তর : দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন : বাংলাদেশে কেন বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয়? উত্তর : বাংলাদেশে বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে অধিক বৃষ্টিপাত হয়। আর্দ্রতা হলো বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ। বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশের উপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তখন স্থলভাগে নিম্নচাপ এবং বঙ্গোপসাগর এরাকায় উচ্চচাপ বিরাজ করে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। এই জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ কারণেই বাংলাদেশে বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয়। প্রশ্ন : কালবৈশাখী ঝড়ের কারণ ব্যাখ্যা করো। উত্তর : গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে যে বজ্রঝড় হয় তাই কালবৈশাখী নামে পরিচিত। স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলেই কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকাল বেলায় কালবৈশাখী ঝড় বেশি হয়। বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণে খাড়াভাবে কিরণ দেয়। সারা দিনের প্রচন্ড উত্তাপে বিকাল থেকে আর্দ্র বায়ু প্রচন্ড বেগে নিম্নচাপ এলাকার দিকে ধাবিত হয়। এ অঞ্চলের বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় হিমালয়ের উচ্চচাপ এলাকা বিস্তৃত হতে পারে। সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। পরবর্তীতে এই মেঘ ঘনীভূত হযয়ে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়