দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর তৃতীয় অধ্যায় : সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের অনুশীলন ১. ১৯৭৬ সালে আমাদের দেশে যেটিকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন তা কোনো সুফল বয়ে আনছে না বলে মনে হচ্ছে। ভয়ানক এ সমস্যাটি একদিকে যেমন নতুন নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে, অপরদিকে তেমনি বিদ্যমান প্রায় সব সমস্যার পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। ক. এইডস কী? খ. 'সামাজিক সমস্যা সমাজ থেকে উদ্ভূত' বুঝিয়ে লেখো। গ. উদ্দীপকে যে বিশেষ সমস্যাটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে আমাদের সামাজিক জীবনে তার কুপ্রভাব বর্ণনা করো। ঘ. উদ্দীপকে সমস্যাটির সমাধান করা গেলে অনেক সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব - পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। উত্তর: ক. এইডস এইচআইভি ভাইরাস সৃষ্ট একটি নিরাময় অযোগ্য রোগ, যাতে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। খ. 'সামাজিক সমস্যা সমাজ থেকে উদ্ভূত' বলতে সমস্যার সামাজিক কেন্দ্রস্থলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। বিশৃঙ্খলা, মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা সমাজের মানুষের জন্য একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যা তাদের সুষ্ঠু জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। এটি সমাজের বাইরের কোনো অবস্থা নয়। সমাজে বসবাসকারী মানুষই এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই বলা সামাজিক সমস্যা সমাজ থেকে উদ্ভূত। গ. উদ্দীপকে জনসংখ্যা সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে সমস্যা আমাদের সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কোনো দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি চাহিদানুযায়ী যদি সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা না বাড়ে তখন আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়। বাড়তি জনসংখ্যা তখন সম্পদ না হয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেননা জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়তি জনগণের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। ফলে এর কুপ্রভাব পড়ছে আমাদের সামাজিক জীবনে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সরকারের পক্ষে সব নাগরিকের মৌল মানবিক চাহিদা অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসনের প্রয়োজন মেটাতে শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠেছে। অনেকক্ষেত্রে সেগুলো মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক তৎপরতার ঘাঁটি হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবে পালস্না দিয়ে বাড়ছে ভূমিহীন এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী ও বেকারের হার। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, পরিবেশ দূষণ, নিম্ন মাথাপিছু আয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়াসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, অতিরিক্ত জনসংখ্যা নানামুখী সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের সমাজজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঘ. উদ্দীপকের সমস্যা, অর্থাৎ জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হলে অনেক সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব- উক্তিটি যথার্থ। সামাজিক সমস্যাগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এতে একটি সমস্যার ফলে আরও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন:অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে খাদ্য ঘাটতি, বাসস্থান সমস্যা, নিরক্ষরতা অপরাধ প্রবণতাসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা গেলে আরও অনেক সমস্যা দূর হবে। আয়তন অনুপাতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে সাধারণ মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। শিল্পের অবদান ক্রমশ বেড়ে চললেও কৃষি এখনো আমাদের অর্থনীতির একটা বড় ভিত্তি। কিন্তু এ দেশের কৃষিজমি যেমন কম, তেমনই উৎপাদন পদ্ধতিও আধুনিক নয়। প্রাকৃতিক সম্পদ, পুঁজি, দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিজ্ঞানের অপ্রতুলতার কারণে শিল্পেও অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। সুতরাং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ কমাতে সাহায্য করবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। ফলে এ সমস্ত চাহিদা মেটার অভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার (যেমন-স্বার্থহীনতা, পুষ্টিহীনতা বস্তি সমস্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব ইত্যাদি) মাত্রাও কমে আসবে। আবার এই সমস্যাগুলো চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি, খুন ইত্যাদি অপরাধ প্রবণতার পেছনে ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ সমাজের এ সব নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য ও অতিরিক্ত জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী। সার্বিক আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, প্রতিটি সামাজিক সমস্যাই কোনো না কোনোভাবে একটি অন্যটির সাথে সম্পৃকত। একটি সমস্যার সমাধান অন্য সমস্যার সমাধানে সহায়ক হয়। তাই আশা করা যায়, আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা গেলে অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সমাধান করাও সম্ভব হবে। ২. বাংলাদেশে এখন আর ঋতু বৈচিত্র্যের স্বাদ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায় না। কখনো অতিবৃষ্টি, কখনো অনাবৃষ্টি জনজীবনে দুর্ভোগ ডেকে আনছে। ফি বছর পাহাড়ি ঢলে পস্নাবিত হচ্ছে অনেক অঞ্চল। সর্বোপরি কল- কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া নির্মল আকাশকে করছে কলুষিত। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেক আবাদি জমি। ক. ঈঋঈ-এর পূর্ণরূপ কী? খ. জীববৈচিত্র্য বলতে কী বোঝায়? গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার কারণ পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত উক্ত সমস্যা মোকাবিলায় একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা কী হতে পারে? ব্যাখ্যা করো। উত্তর: ক. ঈঋঈ-এর পূর্ণরূপ হলো ঈযষড়ৎড়ভষঁড়ৎড়পধৎনড়হং. খ. উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবসহ পৃথিবীর জীবসম্ভার, তাদের অন্তর্গত জিন ও সেগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বাস্তুতন্ত্রকে জীববৈচিত্র্য বলে। জীববৈচিত্র্য মূলত জীবিত প্রজাতির বৈচিত্র্য এবং তাদের বাস করার জটিল পরিবেশতন্ত্রের আভাস দেয়। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে ৩০ লাখ থেকে ৩ কোটির মতো বিভিন্ন প্রজাতির জীব বাস করে। গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার মূল কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হচ্ছে। সেই সাথে প্রকট হচ্ছে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা; যার ইঙ্গিত উদ্দীপকে পাওয়া যায়। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়