সপ্তম শ্রেণির বাংলা

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
গল্প আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা ঘটে থাকে। এসব ঘটনা ছোট পরিসরে অন্যের কাছে উপস্থাপনের কথ্য বা লিখিত কৌশলই হচ্ছে গল্প। বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনাকে জড়িয়ে গল্প রচিত হয়। বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় নবীনতম সদস্য হচ্ছে 'ছোটগল্প' যা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা সাহিত্যে যুক্ত হয়েছে। গল্প পড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের নানা ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। গল্প লেখার কিছু নিয়ম ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অনুসরণ করে যে কেউ গল্প লিখতে পারে। পাঠ বিশ্লেষণ পাঠের উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের ছোট গল্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি গল্প লিখতে পারদর্শী করে তোলা। নামকরণ : পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গল্প সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। এখানে গল্প লিখার কৌশল, গল্পের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেই বিবেচনায় পরিচ্ছেদটির নাম 'গল্প' সার্থক হয়েছে। 'তোলপাড়' গল্পের প্রাসঙ্গিক আলোচনা লেখক সম্পর্কিত তথ্য : লেখক শওকত ওসমান ১৯১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। তবে অধ্যাপনা জীবনে প্রবেশ করার আগে তার চাকরিজীবন ছিল বিচিত্র। তার উলেস্নখযোগ্য রচনার মধ্যে আছে- 'জননী', 'ক্রীতদাসের হাসি', 'জাহান্নাম হইতে বিদায়'; শিশুতোষ রচনা : 'ওটন সাহেবের বাংলো', 'ডিগবাজি', 'মসকুইটো ফোন', 'তারা দুইজন', 'ক্ষুদে সোশালিস্ট' 'ছোটদের নানা গল্প', 'কথা রচনার কথা', 'পঞ্চসঙ্গী' ইত্যাদি। তিনি পুরস্কার ও সম্মাননা হিসেবে পেয়েছেন্ত আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি। তার প্রকৃত নাম আজিজুর রহমান। তিনি ১৯৯৮ সালে মৃতু্যবরণ করেন। মূলবক্তব্য : মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মাত্রা অনুধাবন করে একজন কিশোর কীভাবে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়- 'তোলপাড়' গল্পে তাই ব্যক্ত হয়েছে। গ্রামের ছেলে সাবু বাড়ির সামনের সড়কে শহর থেকে জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ দেখে স্তম্ভিত হয়। সে দেখতে পায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ-নির্বিশেষে সবাই শহর থেকে পালাচ্ছে। বাঙালিদের পাকিস্তানিরা হত্যা করছে বলে জানা যায়। পুত্রবধূ ও শিশু-নাতি-নাতনিদের নিয়ে পলায়নপর এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে সেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুত্রদের হারাতে হলো। মানুষের প্রতি হানাদার বাহিনীর এই নিষ্ঠুরতা অনুভব করে কিশোর সাবু ক্ষুব্ধ হয়। পাকিস্তানিদের প্রতি তার ঘৃণা বাড়তে থাকে। তাদের মোকাবিলা করার জন্য তার কিশোর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। পাঠ বিশ্লেষণ পাঠের উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করা এবং শিক্ষার্থীদের গল্প পড়তে, বুঝতে ও লিখতে পারদর্শী করে তোলা। নামকরণ : গল্পটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। এ গল্পে গ্রামের ছেলে সাবু সাধারণ মানুষের প্রতি হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতা অনুভব করে ক্ষুব্ধ হয়। তাদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে তার মনের মধ্যে এক ধরনের তোলপাড় শুরু হয়। সেই বিবেচনায় রচনাটির নাম 'তোলপাড়' রাখা সার্থক হয়েছে। 'আষাঢ়ের এক রাতে' গল্পের প্রাসঙ্গিক আলোচনা লেখক সম্পর্কিত তথ্য : হালিমা খাতুন ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন; এজন্য তাকে ভাষাসৈনিক বলা হয়। তিনি শিশুদের জন্য বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৩০টির বেশি। তার উলেস্নখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- 'পাখির ছানা', 'পিকনিক', পালিয়ে', 'ছাগল ছানার গল্প', 'কুমিরের বাপের শ্রাদ্ধ' প্রভৃতি। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মৃতু্যবরণ করেন। মূলবক্তব্য : দশ বছরের ছেলে আবুর খুব ইচ্ছা বর্ষার বৃষ্টিঝরা রাতে বড় ভাইদের সঙ্গে বিলে মাছ ধরতে যাবে। কিন্তু ছোট বলে তারা আবুকে সঙ্গে নিতে চায় না। তাই মাছ ধরতে যাওয়ার দিন আবু আগেই নৌকার খোলে লুকিয়ে রইল। একপর্যায়ে আবু ধরা পড়লেও তাকে শেষপর্যন্ত সঙ্গে নেওয়া হয়। দেখা যায়, সে মাছ ধরার জন্য অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে তেলাপোকাও নিয়ে এসেছে। এ নিয়ে বড়রা বেশ হাসি-তামাশা করে। বিলে গিয়ে আবুকে নৌকায় রেখে সবাই মাছ ধরতে চলে গেলে সে বড়শি ফেলে অপেক্ষা করতে থাকে। অবশেষে নানা কৌশলে আবু বড় একটা মাছ ধরে ফেলে। বড় ভাইয়েরা অবশ্য সে-রাতে পুঁটিমাছ ছাড়া আর কোনো মাছই ধরতে পারেনি। তারা নৌকায় বিশাল আকৃতির বোয়াল মাছ দেখে অবাক হয়ে যায়। বয়সে ছোট বলে কাউকে অবহেলা করতে নেই, কিংবা বয়সে বড় হলেই কোনো কাজে কেউ সফলতা লাভ করবে, তা-ও নয়- গল্পটিতে এই সত্য ধরা পড়েছে। পাঠ বিশ্লেষণ পাঠের উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের বয়সে ছোট এমন কাউকে অবহেলা না করার গুরুত্ব অনুধাবন করানো এবং শিক্ষার্থীদের গল্প পড়তে, বুঝতে ও লিখতে পারদর্শী করে তোলা। নামকরণ : পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আষাঢ়ের এক রাতে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। সেই বিবেচনায় রচনাটির নাম 'আষাঢ়ের এক রাতে' রাখা সার্থক হয়েছে। কাহিনি বলার জন্য লেখক গদ্য ভাষায় যে রচনা তৈরি করেন, তাকে গল্প বলে। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা ছোট পরিসরে অন্যের কাছে উপস্থাপনের কথ্য বা লিখিত কৌশলই হচ্ছে গল্প। 'গল্প' কথাটি সংস্কৃত 'জল্প' শব্দ থেকে এসেছে। বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনাকে জড়িয়ে গল্প রচিত হয়। গল্প আয়তনে সাধারণত ছোট হয়ে থাকে। তবে বড় আয়তনের গল্পকে বলে উপন্যাস। প্রতিটি গল্পের মধ্যে কাহিনি থাকে। গল্পের কাহিনি গড়ে ওঠে কিছু চরিত্রের মধ্য দিয়ে। গল্পের চরিত্র অনেক সময়ে কথা বলে, সেসব কথাকে সংলাপ বলা হয়। যিনি গল্প লেখেন তিনি গল্পকার। গল্প নানা ধরনের হতে পারে। যেমন- সামাজিক, প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে, অতি প্রাকৃত কাহিনি, প্রেমবিষয়ক, হাস্যরসাত্মক, উদ্ভট কল্পনাশ্রয়ী ইত্যাদি। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়