সপ্তম শ্রেণির বাংলা

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
গল্পের বৈশিষ্ট্য : -গল্পে কাহিনি ও চরিত্র থাকে। -গল্পের কাহিনি বাস্তবজীবন থেকে নেওয়া যেতে পারে আবার কল্পিতও হতে পারে। -গল্পের পরিধি ছোট হয়। -একটিমাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়। -গল্পে শাখাকাহিনি বা উপকাহিনি স্থান পায় না। -ছোটগল্প শেষ হয় নাটকীয়ভাবে। গল্প পড়া শেষে পাঠকের মনে অতৃপ্তি রয়ে যাবে। -চরিত্র সংখ্যা অনেক হবে না। -পুরো জীবনের ঘটনা উঠে আসবে না। টুকরো কোনো ঘটনা নিয়ে গল্প লেখা হবে। -গল্প যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়, তেমনি হঠাৎ করে শেষও হয়ে যায়। গল্প লেখার সহজ কৌশল -লেখা নাটকীয়ভাবে শুরু করা। -বিস্তারিত কাহিনি বর্ণনা না করে কেবল মূল ঘটনা বর্ণনা করা। -ঘটনার বিন্যাসে শাখা-প্রশাখা না রাখা। -সহজ-সাবলীল এবং প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করা। -চরিত্র অনুযায়ী মানানসই সংলাপ ব্যবহার করা। -গল্পে কৌতূহল তৈরি ও আত্মতৃপ্তিসূচক পরিণতি বজায় রাখা। পাঠ মূল্যায়ন: প্রশ্ন : কোনো ঘটনা ছোট পরিসরে অন্যের কাছে উপস্থাপনের লিখিত কৌশলকে কী বলে? উত্তর: ছোট গল্প। প্রশ্ন: বড় আয়তনের গল্পকে কী বলে? উত্তর: উপন্যাস। প্রশ্ন: 'গল্প' কথাটি কোন শব্দ থেকে এসেছে? উত্তর:সংস্কৃত 'জল্প' শব্দ থেকে। প্রশ্ন: যিনি গল্প লেখেন তাকে কী বলে? উত্তর: গল্পকার। প্রশ্ন: ছোট গল্প বাংলা সাহিত্যে যুক্ত হয়েছে কখন? উত্তর: উনিশ শতকের মাঝামাঝি। তোলপাড় ও আষাঢ়ের এক রাতে গল্প থেকে প্রশ্ন ১. 'তোলপাড়' গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং লেখো। উত্তর: সাবু তার মা জৈতুন বিবিকে একদিন বিকালে হন্তদন্ত হয়ে খবর দেয় যে, ঢাকা শহরে পাঞ্জাবি মিলিটারিরা সব মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলছে। ২৫ মার্চ রাতে এই হত্যাকান্ড শুরু করেছে। জীবিত মানুষ দেখলেই গুলি করছে। সাবুদের গ্রামের নাম গাবতলি, যা শহর থেকে ৫০ মাইল দূরে, এই গ্রামের পাশ দিয়ে জেলা বোর্ডের সড়ক চলে গেছে। শহর ছেড়ে পালানো হাজার হাজার মানুষ হেঁটে চলেছে কুমিলস্না, নোয়াখালী; ময়মনসিংহসহ নানা গন্তব্যে। তীব্র রোদে এত পথ হেঁটে পাড়ি দেওয়ায় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাবুর মা নিজেদের কথা না ভেবে ক্লান্ত মানুষগুলোর জন্য মুড়ি ভেজে পাঠিয়েছেন সাবুকে দিয়ে। মুড়ি খাওয়া শেষ হলে সাবু তাদের পানি এগিয়ে দিয়েছে। একজন বৃদ্ধ নারী সাবুর কাজে খুশি হয়ে তাকে কিছু পয়সা দিতে চাইলেন, কিন্তু সাবু কিছুতেই তা নিতে রাজি হয়নি। বৃদ্ধ মহিলা সাবুকে তার ঠিকানা দিলেন, শহরে গেলে সাবু যেন তার বাড়িতে যায়- এই বলে নিজে ভিড়ের মাঝে মিশে গেলেন। সেই ভিড়ে ধনী-গরিব সব মানুষই আছে। একদিন সত্তর বছরের একজন বৃদ্ধ তার তিন পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে গাবতলি গ্রাম পাড়ি দিলেন। বৃদ্ধের তিন ছেলেকেই পাকিস্তানি আর্মি মেরে ফেলেছে। সাবু ও গ্রামের অন্যরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করে সেই পরিবারটিকে নদীর ধারে পৌঁছে দিল। বৃদ্ধ অশ্রম্নসিক্ত নয়নে বলেন, তারাই তার ছেলে। একজন ধর্মভীরু মানুষ হিসেবে তিনি ভেবেছিলেন পাকিস্তান হলে মুসলমানদের ভালো হবে, কিন্তু তার কণ্ঠে এখন কেবল দীর্ঘশ্বাস। দেশের হাজারো মানুষের এই দুঃখগাথা সাবুর মনে একধরনের ক্রোধের জন্ম দেয়, পাকিস্তানি আর্মির প্রতি ঘৃণা ও আক্রোশ তৈরি হয় তার মনে। যারা তার দেশের মানুষকে মানুষ মনে করে না, সেইসব জানোয়ারকে মোকাবিলা করার জন্য তার কিশোর মনে শুরু হয় এক আশ্চর্য তোলপাড়। ২. 'তোলপাড়' গল্পের সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। উত্তর: 'তোলপাড়' গল্পের সাবুর মতো আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েও একটি বড় সড়ক চলে গেছে। আমাদের গ্রামেও কেউ বিপদে পড়লে সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে। কারো বাড়িতে খাবার না থাকলে আমাদের রান্না করা খাবারের কিছু অংশ তাদের দিয়ে আসি। তোলপাড় গল্পে একজন প্রৌঢ় নারীকে সাবু পানি খাইয়েছিল। আমাদের বাড়ির পাশেই একজন বৃদ্ধা থাকেন। তাকে আমি প্রায়ই বাজার থেকে জিনিসপত্র এনে দিই। গ্রামের অন্য একজন নারী তাকে রান্নার কাজে সহায়তা করেন। এভাবে আমরা তার খেয়াল রাখি। ৩. 'আষাঢ়ের এক রাতে' গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং লেখো। উত্তর: আকাশে তখন বিদু্যতের ঝলকানি, মাঝে মাঝে মেঘের গর্জন, আষাঢ়ের এমন এক বৃষ্টিমুখর দিনে বড় ভাইয়ের সঙ্গে মৌরী বিলে মাছ ধরতে গিয়ে আবু বিশাল এক বোয়াল মাছ ধরেছিল। বর্ষাকালে মৌরী বিলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। আবুর বড় ভাই সাজেদ তার বন্ধুদের নিয়ে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু আবু ছোট হওয়ার কারণে তাকে কখনো সঙ্গে নেয় না। সেদিন সাজেদ ও তার বন্ধুরা মাছ ধরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আবু তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য নৌকার পাটাতনের নিচে গিয়ে শুয়ে পড়ল। মাছ ধরতে যাচ্ছে সাজেদ, তার বন্ধু বিপুল ও বায়েজিদ আর নৌকা বাওয়ার জন্য কিষান তিনু। তারা সঙ্গে নিয়েছে হারিকেন, কয়েক ধরনের জাল ও রাতের খাবার। সন্ধ্যার আগেই তারা রওনা হয়ে গেল মৌরী বিলের উদ্দেশে। একটু পরেই শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টিতে হারিকেন প্রায় নিভে গেলে পাটাতনের নিচে রাখা কেরোসিনের বোতল আনতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করল আবু সেখানে ঘুমিয়ে আছে। আবুকে জাগিয়ে কিছুক্ষণ নিন্দামন্দ ও উপহাস করে, তিনুর জিম্মায় নৌকাতে আবুকে রেখে সাজেদ তার বন্ধুদের নিয়ে চলে গেল মাছ ধরতে। টিনের আংটা দিয়ে বড়শি বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আবু, সঙ্গে টোপ হিসেবে তেলাপোকা। দুটো বড়শিতে তেলাপোকার টোপ গেঁথে পানিতে ফেলে দিয়ে আবু নৌকায় বসে রইল। আবু শুনেছিল বোয়াল মাছ তেলাপোকা ভালোবাসে। হঠাৎ আবুর বড়শির শলা নিচের দিকে চলে গেল, টান পড়ল ছিপের রশিতে। তিনুর সাহায্যে আবু ছিপ ধরে রাখল, একটু পরে একটি মাছ ধরল তারা। বিজলির আলোয় দেখতে পেল, একটি বোয়াল মাছ, যার সাইজ অনেকটা আবুরই মতো। এদিকে সাজেদরা কোনো বড় মাছ ধরতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে এলো। এসে বোয়াল মাছ দেখে তারা অবাক হয়ে গেল। এত বড় বোয়াল কে ধরল জানতে চাইলে আবু বলল সে ধরেছে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়