অষ্টম শ্রেণির বাংলা
প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:২৬
মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
পঞ্চম অধ্যায়
কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে অংশগ্রহণ
খ. বৈশাখী মেলায় একদিন
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এই দিনটি বাঙালির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের দিন। এটি বাংলাভাষী মানুষের একটি সর্বজনীন উৎসব। বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করে।
পহেলা বৈশাখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এগুলোর মধ্যে বৈশাখী মেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। একজন বাঙালি হিসেবে বৈশাখী মেলা আমার প্রাণের উৎসব। তাই আমরা বন্ধুরা মিলে বৈশাখী মেলায় গিয়ে সারা দিন ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। মেলার দিন সকাল সকাল আমরা তৈরি হয়ে মেলায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলাম। মেলাটি আমাদের পাশের এলাকার একটি সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
কলেজের বিশাল মাঠজুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় বিভিন্ন ধরনের জিনিস বেচাকেনা হচ্ছিল। মাঠের এককোণে পান্তা-ইলিশের একটি দোকান দেখে আমরা সেখান থেকে পান্তা-ইলিশ খেয়ে নিই। মেলায় ছেলেরা লুঙ্গি-পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা লাল- সাদা শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। শিশুরা নতুন নতুন রং-বেরঙের জামা পরে তাদের অভিভাবকদের সাথে ঘুরছিল। তাদের অনেকের গালে রংতুলিতে 'এসো হে বৈশাখ', 'শুভ নববর্ষ' প্রভৃতি লেখা ছিল।
মেলায় অনেক ধরনের খাবারের আয়োজন ছিল। বিভিন্ন দোকানে খই, মিঠাই-মন্ডা, শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, মাটির তৈরি বলস, হাঁড়ি-পাতিল, ছোটোদের রান্নার জিনিসপত্র, মাটির তৈরি বিভিন্ন পশুসহ আরও অনেক জিনিসের দোকান সাজানো ছিল। মেলায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষের আনাগোনা ছিল। শিশু-কিশোরদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল সার্কাস ও নাগরদোলা,। হস্ত ও মৃৎশিল্পের বিভিন্ন জিনিস মেলায় নিয়ে এসেছে কুটিরশিল্পীরা। তা ছাড়া বাঁশের তৈরি অনেক জিনিস মেলায় বেচাকেনা করতে দেখা যাচ্ছিল। এভাবে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমরা মেলায় ঘুরে বৈশাখী মেলাটি অনেক উপভোগ করি।
বিশেষ কিছু রান্না করা
গ. পাঁচমিশালি সবজি রান্না
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনই প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করতে হয়। সেই খাবারগুলোর কিছু সরাসরি খাওয়া গেলেও অধিকাংশই রান্না করে খেতে হয়। রান্না একটি শিল্প। একে রন্ধনশিল্প বলা হয়। দেশ-জাতি ভেদে এই রান্নার ধরন ও স্বাদ ভিন্নরকম হয়ে থাকে। আমার মায়ের হাতের রান্না অনেক মজা হয়। শীতকালীন সবজি বাজারে এলে মাকে বললাম যে আমি একটি স্বাস্থ্যকর ও বিশেষ রান্না করতে চাই। তখন মা আমাকে অনুমতি দিলে বাজারে গিয়ে আমি প্রয়োজন মতো সবজি কিনে নিলাম। সাথে কিছু ডাল নিয়ে নিলাম।
বাড়িতে এসে সবজিগুলো প্রথমে কেটে নিলাম। সবজির মধ্যে ছিল ফুলকপি, ধুন্দল, বেগুন, ক্যাপসিকাম, টমেটো, লাউ, গাজর, সিম, আলু। সব সবজি কেটে আমি একটি ঝুড়িতে রেখেছিলাম। আর ডালগুলো ধুয়ে একটি বাটিতে রেখে দিলাম। পরে কিছু পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ ধুয়ে কেটে একটি বাটিতে রেখে দিলাম। তারপর একটি পাতিল ধুয়ে রান্না করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম।
প্রথমে একটি পাতিল চুলায় বসিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর পাতিলটি গরম হলে এতে কিছু সয়াবিন তেল দিয়ে দিলাম। তেল গরম হয়ে এলে এতে কেটে রাখা পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে দিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে এতে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে দিলাম। তারপর দিয়ে দিলাম কিছু হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, গরম মসলার গুঁড়া। এভাবে কিছুক্ষণ নেড়ে দিয়ে এর মধ্যে কাঁচা মরিচ দিয়ে দিলাম :- একটু পর ডালগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে কষিয়ে নিলাম।
কিছুক্ষণ কষানোর পর কেটে রাখা সবজিগুলো দিয়ে নেড়ে দিলায়। সব একসাথে মিশ্রণের পর সামান্য একটু পানি দিয়ে ঢেকে দিলাম। এভাবে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়ার পর সবজি-ডাল ভালোভাবে মিশ্রিত হওয়ার পর এতে একটু পানি দিয়ে দিলাম। এভাবে রেখে দেওয়ার পর সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে শেষ পর্যায়ে কিছু ধনেপাতা ছিটিয়ে দিলাম। রান্না শেষ হওয়ার পর মাকে দেখালে সে অবাক হয়ে যায়। সে আমার রান্নার অনেক প্রশংসা করে। বাবাও আমার রান্না খেয়ে অনেক প্রশংসা করেন।
বিষয় ২ : বিদ্যালয়ের কোনো ঘটনা
ক. বিদ্যালয়ের প্রথম দিন
বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় কাটানো দিনগুলোর মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি সবার জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দিনটিতে একজন শিক্ষার্থী অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সবার মতো আমার বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন।
বিদ্যালয়ে প্রথম যেদিন যাব এর আগের দিন থেকেই আমার মনে বিভিন্ন বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, খেলার মাঠ, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব কেমন, হতে পারে সেগুলো ভাবতে ভাবতে রাতে ঘুমাতে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে। গোসল-খাওয়া ও দাওয়া সেরে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক পরে বাবার সাথে বিদ্যালয়ে রওনা হলাম। সেখানে পৌঁছে বাবা প্রথমেই আমাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রধান শিক্ষক আমাকে অনেক আদর করলেন। তারপর আরও কিছু শিক্ষকের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বাবা চলে গেলেন।
বন্ধু হয়ে গেল। তাদের সাথে নানা বিষয়ে গল্প করতে লাগলাম। তারপর ক্লাসের সময় হলে একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ক্লাস শুরু করলেন। তিনি প্রথমে আমাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তারপর রোল ডাকলেন। আমরা সকলে তার ডাকে উপস্থিতি নিশ্চিত করলাম। তারপর তিনি আমাদের বাংলা বিষয়ে ক্লাস নিলেন। ক্লাসের মাঝখানে তিনি আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তার যথাযথ উত্তর আমি দিতে সক্ষম হই।
এভাবে দুটি ক্লাসের পর বিরতির সময় হলে আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে খাওয়া-দাওয়া করি, গল্প করি। এরপর বাকি একটি ক্লাস করে আমি বাড়িতে ফিরে আসি। বাবা আমাকে নিয়ে আসে। বিদ্যালয়ের প্রথম দিনটি এভাবে আমি অনেক উপভোগ করি। এ দিনটির কথা আমার এখনও মনে পড়ে। এ দিনটির অনুভূতি কোনো দিন ভোলার নয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়