ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
রঙের দুনিয়া প্রশ্ন : সাত রঙের চাকাটা যখন ঘুরে তখন কী রং দেখতে পাচ্ছ? উত্তর : সাত রঙের চাকাটা যখন ভীষণ দ্রুত ঘুরছে তখন সবগুলো রংকে আলাদা করা যায় না। এসময় শুধু সাদা রং দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন : এর কারণ কী? অনুমান করো তো? উত্তর : চাকতিতে থাকা রংগুলো ছিল বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এ সাতটি রং একসাথে মিশে থাকলে আমাদের চোখে সেটাকে সাদা হিসেবে দেখা যায়। একটা কাচের গস্নাস বা স্বচ্ছ পলিব্যাগে পানি নিয়ে তাতে অল্প লাল রং (জলরঙের রং, খাবারের রং, বা যেকোনো রঙ যা পানিতে গুলে যায়) গুলিয়ে এর ভেতর দিয়ে অন্যপাশে কী আছে তা দেখার চেষ্টা করো। গস্নাসের অন্যপাশের বিভিন্ন জিনিসের আসল যে রং তা কি দেখতে পাচ্ছ, নাকি অন্যরকম দেখাচ্ছে? এই লাল রঙের মধ্য দিয়ে কোনো সবুজ পাতা দেখার চেষ্টা করে দেখো। তোমার পর্যবেক্ষণ নিচে লিখে রাখো- উত্তর : লাল রঙের মধ্য দিয়ে কোনা সবুজ পাতাকে দেখা চেষ্টা করলে তাকে কুচকুচে কালো দেখায়। লাল রঙের মধ্য দিয়ে দেখা সবুজ পাতাকে কালো দেখানোর কারণ হলো আলোর শোষণ। গাছের সবুজ পাতার উপর সূর্যের আলো পড়লে আমরা পাতাটিকে সবুজ দেখি আলোর প্রতিফলনের জন্য। এ সময় সবুজ পাতা সবুজ রংকে প্রতিফলিত করে কিন্তু অন্যসব রংকে শোষণ করে। কিন্তু সবুজ পাতায় লাল এর আলো ফেললে পাতাটি লাল রঙ শোষণ করে ফলে সেখান থেকে আর কোনো রং-ই প্রতিফলিত হয় না। তাই সবুজ পাতাকে কালো দেখায়। দ্বিতীয় সেশন একটা ছোট কাজ করা যাক। খোলা জানালা বা দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে সরাসরি সূর্যের আলো ঢোকে এমন একটা জায়গায় একটা গস্নাসে পানি কানায় কানায় ভর্তি করে রেখে দাও। কী কী ঘটছে লক্ষ করো। নিচের ঘটনাগুলোতে কি ঘটতে দেখছো লিখে রাখো- উত্তর : সম্ভাব্য ঘটনা ১.পানির পৃষ্ঠদেশ থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘরের ছাদে এসে পড়েছে। ২. সূর্যের আলো পানির ভেতর দিয়ে গস্নাসের ভেতরে ঢুকে গেছে। তোমার পর্যবেক্ষণ ১.আলোর প্রতিফলনের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। ২.আলোর প্রতিসরাঙ্কের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। কাপটাতে পানি ঢালতে থাকো। কী ঘটছে? মুদ্রাটা কি আবার দেখতে পাচ্ছ? মনে হচ্ছে না যে মুদ্রাটা উপরে উঠে এসেছে। কীভাবে এটা ঘটল বলে তোমার মনে হয়। তোমার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে নিচে তোমার অনুমান লিখে রাখো- উত্তর : আমার বন্ধুর সাথে আলোচনা করে আমার অনুমান নিচে লিখে রাখলাম- আলোর প্রতিসরণের জন্য মুদ্রাটি উপরে দেখা যাচ্ছে। আলো যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে ঢোকার চেষ্টা করে তখন সেটা সরলরেখায় যায় না। বাকা হয়ে ঢোকে। আলো যদি হালকা মাধ্যম (বাতাস) থেকে ঘন মাধ্যমে (পানি) এ যায় তাহলে আলোর রেখাটি ভেতরের দিকে বেঁকে যায়। আর যদি আলো ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে যায় তাহলে বাইরের দিকে বেঁকে যায়। মুদ্রা ঘনমাধ্যম এবং আমার চোখ হালকা মাধ্যমে আছে। আলো পানিতে থাকা মুল থেকে আমার চোখে যাওয়ার সময় কিছুটা বেঁকে গেছে। এ বেঁকে যাওয়ার কারণে মুদ্রাটি কিছুটা উপরে আছে বলে মনে হয়েছে। একটা চিন্তার খোরাক দেওয়া থাক। বেশি পাওয়ারের চশমা চোখ লাগিয়ে দেখলে সব আঁকাবাকা লাগে খেয়াল করেছ। এটা কেন ঘটে অনুমান করতে পারো? বন্ধুরা আলোচনা করে তোমার মতামত নিচে লিখে রাখো্ত উত্তর : বেশি পাওয়ারের চশমা চোখে লাগিয়ে দেখলে সব আকাবাকা লাগার কারণ সম্পর্কে আমার মতামত আলোচনা করা হলো- চশমাই লেন্স থাকে। লেন্সে আলোর প্রতিসরণ ঘটে। আর প্রতিসরণ ঘটার ফলে মাধ্যমের ঘনত্বের কারণে কখনো আলো বাইরের দিকে আবার কখনো ভেতরের দিকে বেঁকে যায়। আলোর এ ভেতরে বা বাইরে বেঁকে যাওয়ার কারণে সব বড় বড় এবং আঁকাবাকা লাগে। বেশ কিছুক্ষণ আগে এক গস্নাস পানি রোদে রেখে দিয়েছিলে মনে আছে তো? এখন গস্নাসটা হাতে নিয়ে দেখো তো একটু গরম মনে হচ্ছে কিনা? তোমার পর্যবেক্ষণ লিখে রাখো- সম্ভাব্য ঘটনা : গস্নাসের পানিটা দীর্ঘ সময় রোদে রেখে দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে পানিটা একটুখানি গরম হয়েছে। তোমার পর্যবেক্ষণ : সূর্যের আলো শোষণ করে পানি একটুখানি গরম হয়েছে। তৃতীয় সেশন শিক্ষকসহ ক্লাসের সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেখো তো, রংধনু কীভাবে হয়? রংধনু তৈরিতে আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণের মতো ঘটনাগুলোর কোনো ভূমিকা কি আছে? উত্তর : রংধনু তৈরিতে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ভূমিকা আছে। নিচে তুলে ধরা হলো : মাঝে মাঝে বৃষ্টির পর নানা রংয়ের রংধনু আকাশ জুড়ে দেখা যায়। রংধনুকে অনেক সময় রামধনু বা ইন্দ্রধনুও বলে। বৃষ্টি হওয়ার পর বাতাসে পানির কণা থাকে। এই পানির কণায় সূর্যের আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ফলে আকাশে সূর্যের বিপরীতে রংধনু দেখা যায়। পানির কণায় সূর্যের আলো পড়লে সেটা প্রতিফলিত হয়। সূর্যের আলো পানির কণার ভেতর দিয়ে প্রতিফলিত হওয়ার সময় সেটি সাত রংয়ে ভাগ হয়ে যায়। এ রংগুলো হলো- বেগুনী, নীল, আসমানী বা আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রংধনুতে এ সাতটি রং-ই পরপর ধনুকের মতো সাজানো থাকে। আলোর প্রতিফলন আমাদের খুবই পরিচিত একটা ব্যাপার। আমরা প্রতিদিন আয়নায় আমাদের মুখ দেখি! আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সময় আমরা সব সময় একটা বিষয় লক্ষ করেছি, প্রতিফলিত চেহারায় ডান এবং বাম সব সময় অদল বদল হয়ে যায়। তোমরা কি কখনো এটি কেন হয় চিন্তা করে দেখেছ? উত্তর : আয়নায় প্রতিফলিত চেহারায় ডান এবং বাম সব সময় অদল বদল হয়। এ বিষয়ে আমার ব্যাখ্যা নিচে তুলে ধরা হলো- হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়