দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
ষষ্ঠ অধ্যায় জোয়ার ভাটার কারণ : প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয় যথা- ১. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব ২. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি। জোয়ার ভাটার প্রভাব : মানবজীবনে জোয়ার ভাটার অনেক প্রভাব দেখা যায়। জোয়ার ভাটার প্রভাবে নদীর মোহনা পরিষ্কার থাকে, জলবিদু্যৎ উৎপন্ন করা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয় ইত্যাদি। সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১. তুহিন তার বাবার সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যায়। সকাল বেলায় দেখতে পায় সমুদ্রের পানি স্ফীত হয়ে উপরে উঠে এসেছে কিন্তু সন্ধ্যার সময় আবার নেমে গেছে। ক. সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ কী? খ. জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত পানির এরূপ আচরণের কারণ ব্যাখ্যা কর। ঘ. তুহিনের দেখা সমুদ্রের পানির ঐরুপ আচরণ উপকূলীয় অঞ্চলে কিরুপ প্রভাব ফেলে বিশ্লেষণ কর। উত্তর : ক. অয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু, মেরু বায়ুপ্রবাহ এসব নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। খ. কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হয়। পৃথিবী নিজ মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে বলে কেন্দ্রাতিগ শক্তি বা বিকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটি অণুই মহাকর্ষ শক্তির বিপরীত দিকে বিকর্ষিত হয় বা ছিটকে যায়। তাই পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যেখানে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের পানি বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে। গ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত পানির এরূপ আচরণের কারণ হলো জোয়ার ও ভাটা। সমুদ্র এবং উপকূলবর্তী নদীর পানিরাশি প্রতিদিনই কোনো একটি সময়ে ধীরে ধীরে ফুলে ওঠে আবার নেমে যায়। পানিরাশির এরকম নিয়মিত স্ফীতি বা ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ দুটি- ১. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব : মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। কারণ সূর্যের ভর অপেক্ষা চাঁদেও ভর অনেক কম হলেও চাঁদ সূর্য অপেক্ষা পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থিত। তাই সমুদ্রের পানি তরল বলে চাঁদের আকর্ষণেই প্রধানত সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত জোরালো হয় না। চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থিত হলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের আকর্ষণে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়। ২. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি : পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শ৩ির প্রভাবে যেখানে মহাশক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের পানি বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে। আবার পৃথিবীর যেসব স্থানে জোয়ার হয় তার সমকৌণিক স্থানে পানি সরে গিয়ে ভাটা হয়। ঘ. তুহিনের দেখা সমুদ্রের পানির জোয়ার ভাটার আচরণ উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যেমন- ১. জোয়ার ভাটার মাধ্যমে ভূখন্ড থেকে আবর্জনাসমূহ নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয়। ২. দৈনিক দুবার জোয়ার-ভাটা হওয়ার ফলে ভাটার টানে নদীর মোহনায় পলি ও আবর্জনা জমতে পারে না। ৩. জোয়ার-ভাটার ফলে সৃষ্ট স্রোতের সাহায্যে নদীখাত গভীর হয়। ৪. বহু নদীতে ভাটার স্রোতের বিপরীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়। ৫. জোয়ারের পানি নদীর মাধ্যমে সেচে সহায়তা করে এবং অনেক সময় খাল খনন করে জোয়ারের পানি আটকিয়ে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়। ৬. শীতপ্রধান দেশে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জোয়ারের সাহায্যে নদীতে প্রবেশ করে এবং এর ফলে নদীর পানি সহজে জমে না। ৭. জোয়ার ভাটার ফলে নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় নদীর মোহনায় ও তার অভ্যন্তরে পানি অধিক হয় বলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজের পক্ষে নদীতে প্রবেশ করা সুবিধা হয়। আবার জোয়ারের টানে ওই জাহাজ অনায়াসে সমুদ্রে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশের দুটি প্রধান সমুদ্রবন্দর পতেঙ্গা ও মংলা এবং অন্যান্য উপকূলবর্তী নদীবন্দর সচল রাখতে জোয়ার ভাটার ভূমিকা রয়েছে। ৮. অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ারের সময় বান ডাকার ফলে অনেক সময় নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় জানমালের ক্ষতি হয়। ২. জেবা বাবা-মায়ের সাথে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেল এবং দেখল দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় একটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। জেবা লক্ষ করল, সমুদ্রের পানি হঠাৎ করে ফুলে উঠতে শুরু করেছে এবং জাহাজটি দ্রম্নত বন্দরে প্রবেশ করছে। ক. মহীসোপান কাকে বলে? খ. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ ব্যাখ্যা কর। গ. জেবার দেখা সমুদ্রের পানিতে পারিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর। ঘ. মানবজীবনে পানির এরূপ পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ কর। উত্তর : ক. সমুদ্রের উপকূল রেখা থেকে তলের দিকে নিমজ্জিত অংশকে মহীসোপান বলে। খ. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো নিয়ত বায়ুপ্রবাহ। এসব বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের দিক ও গতি নিয়ন্ত্রণ করে। অয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরুবায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী প্রধান সমুদ্রস্রোতগুলোর সৃষ্টি হয়। গ. জেবার দেখা সমুদ্রের পানিতে পরিবর্তনটি হচ্ছে জোয়ার ভাটা। এ কারণেই সে লক্ষ করে, সমুদ্রের পানি হঠাৎ ফুলে উঠলে নদীর মোহনায় দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজ দ্রম্নত বন্দরে প্রবেশ করে। প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। যথা : চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব : মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। সূর্যের ভর অপেক্ষা চাঁদের ভর অনেক কম হলেও চাঁদ সূর্য অপেক্ষা পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থিত বলে চাঁদের আকর্ষণেই প্রধানত সমুদ্রের তরল জল ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব : পৃথিবীর নিজ মেরুরেখার চারদিকে আবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যেখানে মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে। ঘ. মানবজীবনের উপর জোয়ার-ভাটার যথেষ্ট প্রভাব আছে। বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশসমূহে জোয়ার-ভাটার প্রভাবসমূহ বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে ভূখন্ড থেকে আবর্জনাসমূহ নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয়। জোয়ার-ভাটার ফলে সৃষ্ট সেধাতের সাহায্যে নদীখাত গভীর হয়। নদীর পানি তাই নির্মল থাকে যা মানবসভ্যতার বিকাশ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মানবজীবনের অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। বহু নদীতে ভাটার সেধাতের বিপরীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদুৎ উৎপাদন করা হয়। জোয়ারের পানি নদীর মাধ্যমে সেচে সহায়তা করে এবং অনেক সময় খাল খনন করে জোয়ারের পানি আটকিয়ে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়। জোয়ার-ভাটার ফলে নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে ও সুবিধা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মানবজীবনে জোয়ার ভাটার প্রভাব ব্যাপক। উলেস্নখ্য অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে অধিক মাত্রায় জোয়ারের সময় নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জানমালের ক্ষতি হয়। পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়