বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী

হাবিবুর রহমান বাপ্পা, সহকারী শিক্ষক, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী

প্রশ্ন: ঘর্ষণ একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ঘর্ষণ একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব কারণ, ঘর্ষণ না থাকলে গতিশীল বস্তু স্থির হতো না, গাড়ির ব্রেক কাজ করত না, তির্যকভাবে প্রয়োগকৃত বলের প্রতিক্রিয়া বল সৃষ্টি হতো না, আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতাম না। অন্যদিকে ঘর্ষণের ফলে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ অত্যধিক উত্তপ্ত হয়, গাড়ির চাকার টায়ার, জুতার সোল ইত্যাদি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আমাদের জীবনযাপনে ঘর্ষণ যেমন প্রয়োজন তেমনই অতিরিক্ত ঘর্ষণ ক্ষতির কারণ

প্রশ্ন: ঘর্ষণের সুবিধা-অসুবিধা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘর্ষণ যেমন উপকারী তেমন অপকারীও বটে।

সুবিধা:

১. ঘর্ষণের কারণে আমরা কোনো বস্তুকে আঁকড়ে ধরতে পারি।

২. ঘর্ষণের জন্য আমরা রাস্তায় চলাচল করতে পারি।

৩. ঘর্ষণের কারণে গাড়ির ব্রেক করা সম্ভব হয়।

অসুবিধা:

১. ঘর্ষণ গতির প্রতিরোধ বল হিসেবে কাজ করে।

২. ঘর্ষণের ফলে যন্ত্রাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

৩. ঘর্ষণের ফলে যানে জ্বালানি খরচ বেশি হয়।

৪. ঘর্ষণের ফলে গাড়ির চাকার টায়ার, জুতার সোল ইত্যাদি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

প্রশ্ন: ফালের যান্ত্রিক সুবিধা ২০ বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: ফালের যান্ত্রিক সুবিধা ২০ বলতে বুঝায়, একটি নির্দিষ্ট ফালের ফলার দৈর্ঘ্য (খ) এবং পুরুত্বের (ঃ) অনুপাত ২০। যেহেতু এটি একই রাশির অনুপাত তাই একক নেই।

প্রশ্ন: শক্তি বলতে কী বুঝায় ্ত ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। শক্তিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। গতিশক্তি এবং বিভব বা স্থিতিশক্তি। বস্তু তার গতির জন্য যে শক্তি লাভ করে তাই গতিশক্তি। 'গতিশক্তি সর্বদাই ধনাত্মক হয় এর সমীকরণ ক = ঙ্গ সা্ব২। অন্যদিকে বস্তুটি তার অবস্থানের জন্য যে শক্তি অর্জন করে তাই বিভব শক্তি। বিভব শক্তি বা স্থিতিশক্তির সমীকরণ চসময। পৃথিবীতে মোট শক্তির পরিমাণ ধ্‌রুব। শক্তির ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্ভব নয়। শক্তির বিভিন্ন রূপ হলো আলো, তাপ, শব্দ।

প্রশ্ন: কোনো বস্তুর গতিশক্তি কি ঋণাত্মক হতে পারে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কোনো বস্তুর গতিশক্তি শূন্য হতে পারে, তবে কখনোই ঋণাত্মক হতে পারে না। কারণ, কোনো বস্তুর ভর স এবং বেগ হলে তার গতিশক্তির, সমীকরণ ঊ = ঙ্গ সা্ব২। সমীকরণে বস্তুর ভর সর্বদাই ধনাত্মক। তবে বেগ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক দুটোই হতে পারে। কিন্তু া্ব২ এর মান সর্বদাই ধনাত্মক। তাই সা্ব২ বা ঙ্গসা্ব২ কখনোই ঋণাত্মক হতে পারে না। তবে বেগ শূন্য হলে গতিশক্তির মান শূন্য হবে।

প্রশ্ন: কোনো বস্তু কীভাবে স্থিতিশক্তি অর্জন করে?

উত্তর: আমরা যদি কোনো বস্তুকে তার প্রমাণ অবস্থান বা আকৃতি থেকে অন্য অবস্থানে বা আকৃতিতে নিয়ে যেতে চাই তাহলে বস্তুটি একটি বাধা দেয়। আর, কোনো বাধার বিরুদ্ধে কিছু করার অর্থই কাজ করা। এই কাজ পরিবর্তিত অবস্থান বা আকৃতিতে নিয়ে যাওয়া বস্তুটির মধ্যে স্থিতিশক্তিরূপে সঞ্চিত থাকে, এভাবে একটি বস্তু স্থিতিশক্তি অর্জন করে। তবে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর জন্য ভূমির উচ্চতা পরিবর্তিত হয়ে শূন্য হলে বস্তুর ভিতরে আর বিভব শক্তি থাকে না।

প্রশ্ন: শক্তি নিত্যতার সূত্র উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সূত্র: 'শক্তির সৃষ্টি বা বিনাস নেই, কেবল একরূপ হতে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।' উদাহরণসহ ব্যাখ্যা: একটি টেনিস বল উপরের দিকে ছুড়ে মারলে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠার পর বলটি আবার নিচে নামতে থাকে। এক্ষেত্রে বলটি উপরে উঠতে থাকার সময় গতিশক্তি কমতে কমতে যখন শূন্য হয় তখন তা আবার নিচে নামতে থাকে। নিচে নামার সময় ঐ বলের সঞ্চিত স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে। এভাবে বলটি যখন মাটি স্পর্শ করে তখন তার সমগ্র গতিশক্তি স্থিতিশক্তিতে পরিণত হয়। এভাবেই শক্তি একরূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তর হয়। এটাই শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা।

মানব শরীর

জীবাশ্ম বলতে কি বুঝ?

প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো জীবের শরীরের অংশ যখন মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়ে, বা অন্য কোনো উপায়ে বহু বছর ধরে সংরক্ষিত হয় তাকে বলে জীবাশ্ম বা ফসিল। প্রাচীন পৃথিবীর উদ্ভিদ বা প্রাণীদের সম্পর্কে জানার সবচেয়ে বড় উৎসই হলো সেই সময়ের প্রাপ্ত জীবাশ্মের নমুনা। যেমন আমরা তো সবাই ডাইনোসরের কথা জানি। এই বিশাল বিশাল প্রাণীরা একসময় পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত। ডাইনোসরদের কালে তো আর মানুষ ছিল না, তাদের কেউ দেখেওনি! কিন্তু এই প্রাণীদের সম্পর্কে এখন এই যে এত কিছু জানা যায়, তার প্রধান উৎস কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে পাওয়া ডাইনোসরের ফসিল বা জীবাশ্ম!

আমরা যদি আমাদের চারপাশে তাকাই তবে নানান রকম জীব দেখতে পাবো। যেমন :গাছ, শালিক, কবুতর, মুরগি, হাঁস, মাছ, বিড়াল, কুকুর, ছাগল, গরু ইত্যাদি। এগুলোর পাশাপাশি আরও যে জীবটি আমরা অনেক অনেক দেখতে পাবো, তা হচ্ছে মানুষ। মানুষও অন্য সকল জীবের মতোই জীবন ধারণ করে। সে চলাচল করতে পারে। তাই সে হচ্ছে প্রাণী।

ছোটবেলা থেকেই আমরা অবাক হয়ে ভাবি কোথা থেকে এসেছি আমরা', ভাবি 'অন্য প্রাণীদের চেয়ে আমরা কীভাবে আলাদা। অন্য সব জীবের যেমন বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আমাদেরও তেমন রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। আমরা দেখতে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে ভিন্নতর, আমাদের হাঁটার ধরন, খাদ্যভ্যাস, চিন্তার ক্ষমতা সবকিছুতেই রয়েছে অন্য প্রাণীদের তুলনায় আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য। 'আধুনিক' মানুষই (বৈজ্ঞানিক নাম ঐড়সড় ংধঢ়রবহং) একমাত্র প্রাণী যারা সোজা হয়ে দুই পায়ে চলাচল করতে পারে। তবে এই আধুনিক মানুষের আগেও মানুষের কিছু আদি প্রজাতি ছিল যারা কিন্তু এভাবে সোজা হয়ে দুই পায়ে হাঁটতে পারত। বিবর্তন (ঊাড়ষঁঃরড়হ) বিষয়ে গবেষণা আমাদের সেটা বুঝতে সাহায্য করে।

আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপে পাওয়া ফসিল (ঋড়ংংরষ) বা জীবাশ্মগুলোর বিস্ময়কর উপস্থিতি এবং ক্রম বিস্তৃতি থেকে আমরা আমাদের বিবর্তনকে বুঝতে পারি। জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে আমরা বুঝতে পারি কখন আমরা সোজা হয়ে হাঁটতে শুরু করেছি। আকারগত পরিবর্তনগুলো যেমন আমাদের শরীরের চওড়া নিতম্ব (পশ্চাৎভাগ), পায়ের বাকি অংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পায়ের বড় আঙুল এবং ছোট বাহু কখন পেয়েছি। বিবর্তনের ধারায় আমাদের মস্তিষ্কের আকার ও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষণাতথ্য বলছে, প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশে মানুষের অস্তিত্ব ছিল। আমাদের চেনাজানা প্রাণীদের ভেতর বানর, গুরাংওটাং, শিম্পাঞ্জি এরা মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে কাছাকাছি। মানুষসহ এসব প্রাণীদের বলা হয় প্রাইমেট (চৎরসধঃব)।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে