মির্জা নূর উদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম

মুঘল সাম্রাজ্য

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
মির্জা নূর উদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম বা জাহাঙ্গীর জন্মগ্রহণ করেন ১৫৬৯ সালের ৩০ আগস্ট। তিনি ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট। তিনি ১৬০৫ সাল থেকে ১৬২৭ সালে তার মৃতু্য পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তাঁর রাজকীয় নামটির (ফার্সি ভাষায়) অর্থ 'বিশ্বের বিজয়ী', 'বিশ্ব-বিজয়ী'। শাহজাদা সেলিম (পরে জাহাঙ্গীর) ১৫৬৯ সালের ৩১ আগস্ট ফতেপুর সিক্রিতে আকবরের স্ত্রী আম্বাররাজা ভর্মলের কন্যা মরিয়ম-উজ-জামানির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। আকবরের পূর্ববর্তী ছেলেমেয়েরা শৈশবে মারা গিয়েছিল এবং তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্য পবিত্র লোকদের সাহায্য চেয়েছিলেন। সেলিমের নাম ছিল শেখ সেলিম, যদিও আকবর তাকে সবসময় শেখু বাবা বলে ডাকতেন। জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবরের পুত্র। শুরুতেই তিনি তার পিতা আকবরের মতাদর্শী ছিলেন। সেই সময় আকবর দক্ষিণ ভারতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি হেরে গেলেও পরবর্তীকালে তার সৎমা রুকাইয়া সুলতান বেগম ও সেলিমা সুলতান বেগমের সমর্থনে ১৬০৫ সালে সম্রাট হতে সমর্থ হন। প্রথম বছরেই তাকে তার বড় ছেলে খসরুর বিদ্রোহের মোকাবিলা করতে হয় ও তিনি তাতে সফল হন। তিনি খসরু সমর্থিত ২০০০ লোককে মৃতু্যদন্ড দেন ও খসরুকে অন্ধ করে দেন। বাবার মতো চমৎকার প্রশাসন ছাড়াও জাহাঙ্গীরের শাসনামলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক সাফল্য বিদ্যমান ছিল। এছাড়া সার্বভৌম সীমানা অগ্রসরও অব্যাহত ছিল-বঙ্গ, মেওয়ার, আহমেদনগর ও দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্য বৃদ্ধির একমাত্র বাধা আসে যখন পারস্য অঞ্চলের সাফারীদ রাজবংশের শাহেনশাহ আব্বাস কান্দাহার আক্রমণ করেন। তা ঘটে যখন ভারতে তিনি খসরুর বিদ্রোহ দমন করছিলেন। তিনি রাজপুতানা রাজাদের সাথে সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনায় বসেন ও তারা সকলেই মুঘল আধিপত্য মেনে নেন ও তার বদলে তাদের মুঘল সাম্রাজ্যে উঁচু পদ দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর শিল্প, বিজ্ঞান এবং স্থাপত্য সঙ্গে মুগ্ধ হয়ে তরুণ বয়স থেকেই চিত্রকলার প্রতি ঝোঁক দেখিয়েছেন এবং তার নিজের একটি কর্মশালায় ছিল। মুঘল চিত্রকলা শিল্প, জাহাঙ্গীরের রাজত্বের অধীনে মহান উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তার সময় উস্তাদ মনসুর জন্তু ও পাখির ছবি একে বিখ্যাত হন। জাহাঙ্গীরের ছিল একটি বিশাল পক্ষিশালা ও পশুশালা ছিল। জাহাঙ্গীর ইউরোপীয় এবং ফার্সি শিল্পকলাকেও ভালোবাসতেন। তিনি ফার্সি রানী নুর জাহান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার সাম্রাজ্যজুড়ে ফার্সি সংস্কৃতি প্রচার করেন। তার সময়েই শালিমার গার্ডেন তৈরি হয়। জাহাঙ্গীর তার বাবার মতো একজন কঠোর সুন্নি মুসলমান ছিলেন না। তিনি সার্বজনীন বিতর্কে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের অংশগ্রহণ করতে দিতেন। জাহাঙ্গীর তার লোকদের কাউকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বারণ করতেন। তিনি সকল প্রকার ধর্মের লোকেদের থেকে সমান খাজনা নিতেন। টমাস রো, এডওয়ার্ড টেরি-সহ অনেকেই তার এই প্রকার আচরণের প্রশংসা করেন। অনেক ভালো গুন থাকা সত্ত্বেও, মদ্যপানে আসক্তির জন্য জাহাঙ্গীর সমালোচিত হন। তিনি এক সময় তার স্ত্রী নুরজাহানকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেন এবং নুর জাহান বিভিন্ন বিতর্কিত চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন। শেষ দিকে মুসলিম মনীষী আহমদ সিরহিন্দি (রহ:) এর ইসলামিক আন্দলনের ফলে তিনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হোন। ১৬২২ সালে তার পুত্র খুররাম প্রথম বিদ্রোহ করেন। কিন্তু ১৬২৬ সালে জাহাঙ্গীরের বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে কোণঠাসা হয়ে তিনি নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু ১৬২৭ সালে তার মৃতু্যর পর ক্ষুরামই নিজেকে শাহ জাহান উপাধিতে ভূষিত করে সিংহাসন দখল করেন। জাহাঙ্গীরের মৃতু্যর পর বিভিন্ন গল্প, সিনেমা ও সাহিত্যে তার ও আনারকলির রহস্যে ভরা সম্পর্ক স্থান পায়। রাজকুমার সেলিম ৩৬ বছর বয়েসে তার বাবার মৃতু্যর ৮ দিন পর ৩০ নভেম্বর, ১৬০৫ সালে ক্ষমতায় এসে নিজেকে নুরুদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী উপাধিতে ভূষিত করেন। এখান থেকেই তার ২২ বছরের রাজত্বের শুরু। তিনি প্রথমেই তার ছেলে খসরু মিরজার বিদ্রোহের মুখে পড়েন। খসরুকে তিনি অন্ধ করে দেন ও তাকে আর্থিক সাহায্য করায় পঞ্চম শিখ গুরু অর্জন দেব কে পাঁচ দিন ধরে অত্যাচার করা হয়। পরে তিনি নদীতে স্নান করার সময় উধাও হয়ে যান। জাহাঙ্গীর তার ছোট ছেলে খুররাম উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে ১৬২২ সালে তার বড় ভাই খসরুকে হত্যা করেন। মেয়ার এর রানা ও খুররামের মধ্যে একটি সফল চুক্তি হয়। শাহ জাহান বঙ্গ ও বিহার নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময়, জাহাঙ্গীর তার জয় করা রাজ্যকে নিজের বলে দাবি করেন। নিজেদের মধ্যে বিবাদের সাহায্য নিয়ে ফার্সিরা কান্দাহার জয় করেন। এর ফলে মুঘলরা আফগানিস্তান ও পারস্যের মূল্যবান বাণিজ্যিক রুটগুলো নিজেদের অধীন থেকে হারিয়ে ফেলেন। ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তার শাসনামল ছিল। তিনি ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর মৃতু্যবরণ করেন।