দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
প্রশ্ন: বাংলাদেশের শতকরা ৮০ জনেরও বেশি জনগোষ্ঠী কৃষিকাজে নিয়োজিত। কৃষকসমাজ প্রায় সারা বছরই ধান চাষে ব্যস্ত থাকেন। তবে প্রকৃতির উপর অতিমাত্রার নির্ভরশীলতার কারণে এদেশে মাঝে মাঝে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ক. খাদ্যশস্য কী? খ. বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের খাদ্যশস্যটি বাংলাদেশে কেন প্রসার লাভ করেছে ব্যাখ্যা কর। ঘ. বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির কারণ উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। উত্তর: ক. যে শস্যের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয় তাকে খাদ্যশস্য বলে। খ. বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো "প্রকৃতি নির্ভরতা"- কারণ এ দেশের কৃষি কাজ ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, নদী ও জলসেচ দ্বারা প্রভাবিত। গ. উদ্দীপকের খাদ্যশস্যটি ধান। বাংলাদেশের সকল জেলায় ধান উৎপাদিত হয়। রংপুর, কুমিলস্না, সিলেট, যশোর, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, দিনাজপুর, ঢাকা, নোয়াখালী প্রভৃতি অঞ্চলে ধান চাষ বেশি হয়। বাংলাদেশে ধান উৎপাদন প্রসার লাভ করার কারণ- বিস্তীর্ণ সমভূমি : মাটি নদীবিধৌত পলি দ্বারা গঠিত। মাটির উর্বরাশক্তি অত্যন্ত বেশি যা ধান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ জন্য বাংলাদেশের সর্বত্রই ধান জন্মে। জলবায়ু : ধান উৎপাদনে মৌসুমি জলবায়ু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধান চাষের জন্য ১৬ক্ক থেকে ৩০ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সারা বছর ধরে প্রায়ই এ তাপমাত্রা বিদ্যমান। ধান চাষের অনুকূল জলবায়ু উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে। বৃষ্টিপাত : ধান চাষের জন্য ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। বাংলাদেশের সর্বত্রই এ পরিমাণ বৃষ্টি হয়। প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও মৌসুমি জলবায়ু বিদ্যমান থাকায় ধান উৎপাদন বাংলাদেশে প্রসার লাভ করেছে। ঘ. উদ্দীপকে বলা হয়েছে- প্রকৃতির উপর অতিমাত্রার নির্ভরশীলতার কারণে এদেশে মাঝে মাঝে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। এর সাথে যে কারণগুলো জড়িত তা হলো : প্রাচীন চাষ পদ্ধতি : বাংলাদেশের দারিদ্র্য, অশিক্ষা ইত্যাদি কারণে এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয়। যে কারণে উৎপাদন কম হয়। ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা : বাংলাদেশের কৃষি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কোনো কোনো সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৃষ্টি অথবা অনাবৃষ্টি হয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করে। ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। উন্নত সার ও বীজের অভাব : অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত উন্নত সার ও বীজের যথেষ্ট অভাব আছে। ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। খন্ড-বিখন্ড ও বিচ্ছিন্ন কৃষিজমি : বাংলাদেশে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে ভূমিগুলো খন্ড-বিখন্ড ও বিচ্ছিন্ন। কৃষিকে আধুনিক চাষের আওতায় এনে পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। পানি সেচের অভাব : খরা ও শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় প্রচুর জমি পতিত থাকে। যা খাদ্য ঘাটতির অন্যতম কারণ। সুতরাং আমাদের দেশে মাঝে মাঝে খাদ্য ঘাটতির জন্য প্রকৃতির উপর অধিক নির্ভরশীলতাই দায়ী। প্রশ্ন: খাদ্যশস্যের মধ্যে বাংলাদেশে গমের স্থান দ্বিতীয়। এটি শীতকালীন ফসল। গম উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ৭.৩৫, ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে ৭.২৫, ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে ৮.৪৪ এবং ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ৯.০০ লক্ষ মেট্রিক টন গমের ফলন হয়। [উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০০৯] ক. বাংলাদেশে ধান চাষের জন্য কী ধরনের তাপমাত্রা প্রয়োজন? খ. উত্তরাঞ্চলে গম চাষ প্রসার লাভ করার কারণ ব্যাখ্যা কর। গ. অনুচ্ছেদে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গম চাষের ওপর একটি স্তম্ভ চিত্র তৈরি কর। ঘ. উদ্দীপকের শস্য চাষে চাষিদের উৎসাহিত করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় ব্যাখ্যা কর। উত্তর: ক. বাংলাদেশে ধান চাষের জন্য ১৬ক্ক থেকে ৩০ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। খ. বিস্তীর্ণ সমভূমি, অনুকূল আবহাওয়া, একর প্রতি অধিক উৎপাদন ও শ্রমিকের সহজলভ্যতা উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোকে গম চাষের জন্য উপযোগী করেছে। সাধারণত গম চাষের জন্য ১৬ক্ক থেকে ২২ক্ক সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৫০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বৃষ্টিহীন শীত মৌসুমে পানি সেচের মাধ্যমে গম চাষ করা হয়। গ. অনুচ্ছেদে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের গম চাষের স্তম্ভ চিত্র তৈরি করা হলো : ঘ. উদ্দীপকের শস্যটি হলো গম। বাংলাদেশের চাষিদের গম চাষে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ হতে পারে : মূলধন সরবরাহ : দরিদ্র চাষিদের গম চাষের জন্য উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, পরিবহন খরচ সংকুলানের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণদানের মাধ্যমে চাষিদের উৎসাহিত করতে পারে। পানিসেচ ব্যবস্থা : গম একটি শীতকালীন ফসল বলে সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে গম খেতে পানির ব্যবস্থা করতে হয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ব্যাপারে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সমবায় সমিতি, এনজিওগুলো সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে পানি সেচের ব্যবস্থা করে চাষিদের গম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। ব্যাপক বাজার ব্যবস্থা : গমের স্থানীয় বাজার প্রশস্ত করতে হবে। জনসাধারণকে গম থেকে তৈরি আটা, ময়দা, সুজির ব্যবহারিক উপযোগিতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে প্রচারণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা : স্থানীয় বাজারে পৌঁছানোর জন্য সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার স্বল্প ভাড়ার বিনিময়ে পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারে। উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের গম চাষিরা গম চাষে উৎসাহিত হবে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়