বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাণিজ্য
যাতায়াত ব্যবস্থা : যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের মাধ্যম এবং মালপত্র ও লোক চলাচলের মাধ্যমকে বোঝানো হয়। যেমন- সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ, সমুদ্রপথ, আকাশপথ।
সড়কপথ : বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গা সমতল বলে এদেশে সড়ক যোগাযোগ পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। অধিকাংশ সড়ক স্থানীয় যোগাযোগ রক্ষার জন্য রেলপথ ও নদীপথের পরিপূরক হিসেবে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট সড়কপথের দৈর্ঘ্য ২১,৪৬২ কিলোমিটার।
রেলপথ : ঢাকার কমলাপুর দেশের বৃহত্তম রেলস্টেশন। বাংলাদেশে সর্বমোট ৪৪৩টি রেলস্টেশন আছে। বাংলাদেশে ব্রডগেজ, মিটার গেজ ও ডুয়েল গেজ এই তিন ধরনের রেল ব্যবস্থা চালু আছে। মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৮৭৭ কিলোমিটার।
নদীপথ : নদীপথ বাংলাদেশের সুলভ পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থা। অসংখ্য নদী ও খালবিলের সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ৮,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ আছে।
সমুদ্রপথ : দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জলপথ তথা সমুদ্রপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার চেয়ে সমুদ্রপথের অবদান উলেস্নখযোগ্য। আকাশপথ : অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ঢাকার 'হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর' বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়া আরও দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, যা হলো- চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর।
বাণিজ্য : মানুষের অভাব ও চাহিদা মেটানোর উদ্দেশে পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় এবং এর আনুষঙ্গিক কার্যাবলি হচ্ছে বাণিজ্য। বাণিজ্য প্রধানত দুই প্রকার। যথা : অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য : অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সাধারণত গ্রাম বা হাট থেকে কাঁচামাল, খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয় এবং উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য জেলা সদর, গঞ্জ, হাটে বণ্টন করা হয়। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে দেশের চাহিদা ও ভোগের সমন্বয় ঘটে।
বৈদেশিক বাণিজ্য : বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানির প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ আয় হচ্ছে তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার থেকে। বর্তমানে খাদ্যশস্য ও শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি করতে হয় এবং দেখা যায় রপ্তানির চেয়ে আমদানি দ্রব্য বেশি।
বাংলাদেশের রপ্তানি : বাংলাদেশে বর্তমানে শ্রমনির্ভর শিল্পের রপ্তানি উপযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানি পণ্যের সর্ববৃহৎ গন্তব্যস্থল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যসমূহ :
১. প্রাথমিক পণ্য : হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, কাঁচা পাট, চা ও অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য।
২. শিল্পজাত পণ্য : তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, রাসায়নিক দ্রব্য, পস্নাস্টিক সামগ্রী, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, পাদুকা, সিরামিক সামগ্রী, প্রকৌশল দ্রব্যাদি।
বাংলাদেশের প্রধান আমদানি পণ্যসমূহ :
প্রধান প্রাথমিক দ্রব্যসমূহ : চাল, গম, তৈলবীজ, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, তুলা ইত্যাদি।
প্রধান শিল্পজাত পণ্যসমূহ : ভোজ্যতেল, সার, ক্লিংকার, স্টেপল ফাইবার, সুতা ইত্যাদি।
মূলধনী দ্রব্যসমূহ।
অন্যান্য পণ্য (ইপিজেড-এর সহায়ক পণ্য)।
বিভিন্নস্থানে যোগাযোগের মাধ্যম এবং লোক চলাচলের মাধ্যমকে বলে- যাতায়াত ব্যবস্থা।
সমতলভূমি- সড়কপথ গড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
সড়কপথ নির্মাণ করা- অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য পার্বত্য এলাকায়।
উৎপাদিত কৃষিপণ্য বণ্টন, দ্রম্নত যোগাযোগ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতির জন্য- অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ।
বাংলাদেশের সড়কপথগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেছে- বসতি বিন্যাসের উপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশে সর্বমোট -৪৪৩টি রেলস্টেশন আছে।
দেশের প্রধান বন্দর, শহর, বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত সংযোগ সাধন করে- রেলপথ।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক গঠন- নৌপথের অনুকূলে।
বাংলাদেশে ২টি সমুদ্রবন্দর আছে।যথা- চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর।
বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো- হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় এবং এর আনুষঙ্গিক কার্যাবলি হচ্ছে- বাণিজ্য।
বাণিজ্য ২ ধরনের হয়ে থাকে- অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- সড়কপথ, রেলপথ ও নদীপথ।
বর্তমানে রপ্তানির প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ আয় হচ্ছে- তৈরি পোশাক থেকে।
মূলধন ও প্রযুক্তি বিদ্যার অভাবে- প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সর্ববৃহৎ গন্তব্যস্থল- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ইত্যাদি- প্রধান রপ্তানি পণ্য।
বাংলাদেশের আমদানির ক্ষেত্রে শীর্ষে- চীন এর অবস্থান।
২০১২-১৩ সালে রপ্তানি আয় ছিল- ১২,৫৯৯.৭৩ ইউএস ডলার।
বাংলাদেশের প্রধান আমদানি পণ্য- চাল, তুলা, পেট্রোলিয়াম, সুতা উলেস্নখযোগ্য।
প্রশ্ন : সায়হান গত শীতের ছুটিতে রাজশাহী থেকে তার ফুফুর বাড়ি সিলেটে বেড়াতে যায়। সে কম খরচে এবং আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য একটি পথ বেছে নিয়েছিল। কয়েকদিন পর সেখান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সে খাগড়াছড়ির আলুটিলা সুড়ঙ্গপথ দেখতে যায়।
ক. স্বল্প খরচের যোগাযোগ পথের নাম কী?
খ. দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে নৌপথ উন্নতি লাভ করার কারণ লেখ।
গ. সায়হানের রাজশাহী থেকে ফুফুর বাড়ি যাওয়ার পথটি মানচিত্রে নির্দেশ কর।
ঘ. সায়হানের 'সিলেট থেকে চট্টগ্রাম' এবং 'চট্টগ্রাম থেকে আলুটিলা' পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. স্বল্প খরচের যোগাযোগ পথের নাম নৌপথ।
খ. বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো দক্ষিণাংশে অবস্থিত। অসংখ্য নদী এসব অঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। এ অঞ্চলের ভৌগোলিক গঠন নদীপথের অনুকূল। প্রায় সারাবছর ধরেই এ অঞ্চলে নাব্য জলপথ বিদ্যমান থাকে। এ কারণে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে নৌপথ উন্নতি লাভ করেছে।
গ. সায়হানের রাজশাহী থেকে সিলেটে ফুফুর বাড়ি যাওয়ার সবচেয়ে কম খরচ ও আরামদায়ক ভ্রমণ হলো ট্রেন ভ্রমণ। রাজশাহী থেকে সিলেটে ট্রেনে যাওয়া বেশ সহজ। এক্ষেত্রে নদীপথ বর্তমানে যাত্রী চলাচলের উপযুক্ত অবস্থায় নেই এবং ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়ে তুলনামূলক কম। আবার ট্রেন ভ্রমণ আরামদায়ক ও অনেকটা নিরাপদ। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়