মির্জা মুহাম্মদ মু'ইজ-উদ-বিন সাধারণভাবে জাহানদার শাহ নামে পরিচিত। তিনি ১৬৬১ সালের ৯ মে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুঘল সম্রাট হিসেবে ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেন। তিনি সম্রাট বাহাদুর শাহ প্রথম এর পুত্র ছিলেন। বাহাদুর শাহ প্রথমের ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি মৃতু্যর পর তিনি এবং তার ভাই আজিম-উস-শান নিজেদের সম্রাট হিসেবে দাবি করেন এবং ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য বিবাদে লিপ্ত হন। ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ ১২ তারিখে আজিম-উস-শানকে হত্যা করা হলে জাহানদার আরও ১১ মাস শাসন করতে সক্ষম হন। পিতা প্রথম বাহাদুর শাহ-এর মৃতু্যর পর রাজত্ব দখলের উদ্দেশ্যে সৎভাই আজিম-উস-শান-এর সহিত যুদ্ধে লিপ্ত হন। ইরাবতী নদীর তীরবর্তী যুদ্ধে ভাইকে পরাজিত ও হত্যা করেন।
যুবরাজ জাহান্দার শাহ ডেকান সুবাহে প্রথম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন নিজাম বাই, হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত ফাতেয়াওয়ার জাংয়ের কন্যা। জাহানদার শাহকে তাঁর দাদা আওরঙ্গজেব ১৬৭১ সালে বালখের ভাইজিয়ার পদে নিযুক্ত করেছিলেন। সিংহাসনে আরোহণের আগে জাহান্দার শাহ ভারত মহাসাগরের চারদিকে যাত্রা করেছিলেন এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি সিন্ধের সুবেদারও নিযুক্ত হন। আজিমুশ শান ১৭৫৪ থেকে ১৭৫৯ সালের মধ্যে মোগল সম্রাট হিসেবে রাজত্ব করেছিলেন।
জাহান্দর শাহ একটি অবুঝ জীবনযাপন করেছিলেন এবং তাঁর দরবার প্রায়শই নাচ এবং বিনোদন দ্বারা উদ্দীপ্ত হতো। তিনি পছন্দসই স্ত্রী, লাল কুনোয়ারকে বেছে নিয়েছিলেন, যিনি রানীর পদে উন্নীত হওয়ার আগে নাচের মেয়ে ছিলেন। তারা একসাথে মুঘল সাম্রাজ্যকে হতবাক করেছিল এবং এমনকি আওরঙ্গজেবের বেঁচে থাকা কন্যা জিনাত-উন-নিসার দ্বারা বিরোধিতা করেছিল।
কর্ণাটকের তৃতীয় নবাব মুহাম্মাদ সাদাতুলস্নাহ খান প্রথম তাঁর কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যিনি মূলত গিঙ্গি দুর্গের ধার্মিক সেনাপতি ছিলেন নবাবের বিশ্বাসের কারণে ওড়ছার দে সিংকে হত্যা করেছিলেন। জাহানদার শাহকে মুঘল সিংহাসনের একজন দখলদার হিসাবে উলেস্নখ করে খান একটি তীব্র অভিযান শুরু করেছিলেন। তাঁর কর্তৃত্বকে আরও জোরদার করতে জাহানদার শাহ অটোমান সুলতান আহমেদ তৃতীয়কে উপহার প্রেরণ করেছিলেন।
জাহান্দার শাহের প্রথম স্ত্রী ছিলেন মির্জা মোকাররম খান সাফাভি কন্যা। ১৬৭৬ সালের ১৩ অক্টোবর বিবাহ হয়েছিল। তার মৃতু্যর পরে তিনি তার ভাতিজি মির্জা রুস্তমের কন্যা সাইয়িদ-উন-নিসা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। বিবাহটি ১৬ আগস্ট ১৬৮৪-এ হয়েছিল কাজী আবু সাঈদ তাদেরকে সম্রাট আওরঙ্গজেব এবং যুবরাজ মুহাম্মদ মুয়াজ্জমের (ভবিষ্যৎ বাহাদুর শাহ প্রথম) উপস্থিতিতে একত্রিত করেছিলেন। ১৮ সেপ্টেম্বর এই বিবাহটি সম্পন্ন হয়েছিল। সাইয়িদ-উন-নিসা বেগমকে ৬৭,০০০ টাকার গহনা উপহার দেওয়া হয়েছিল। রাজকন্যা জিনাত-উন-নিসা বেগম উদযাপনগুলি তত্ত্বাবধান করেছিলেন।
তাঁর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন অনুপ বাই। তিনি ১৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যুবরাজ মুহাম্মদ আজিজ-উদ-দীন মির্জার মা ছিলেন। তাঁর চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন লাল কুনোয়ার, খাসুসিয়াত খানের কন্যা। জাহান্দর শাহ তাকে খুব পছন্দ করেছিলেন এবং সিংহাসনে আরোহণের পরে তিনি তাকে ইমতিয়াজ মহল উপাধি দিয়েছিলেন।
১৭১৩ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায়নের ১ বছরের মধ্যে তারই হাতে মৃত সৎভাই আজিম-উস-শান-এর ২৭ বর্ষীয় পুত্র ফর?রুখসিয়ার-এর সহিত আগ্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি পালিয়ে গেলেন দিলিস্নতে, যেখানে তাকে বন্দি করে নতুন সম্রাটের হাতে সোপর্দ করা হয়েছিল, যিনি তাকে লাল কুণওয়ারের সাথে আবদ্ধ করেছিলেন। তিনি এক মাস কারাবাসে ছিলেন, ১৭১৩ সালের ১১ ফেব্রম্নয়ারি পেশাদার অচেনা লোককে তাকে হত্যার জন্য প্রেরণ করা হয়। তিনি ১৭১৩ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি মৃতু্যবরণ করেন।
