বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
টেলিভিশন টেলিভিশন বিগত শতাব্দীর বিস্ময়কর আবিষ্কার যা কিনা বিশ্বসমাজকে অভূতপূর্বভাবে বদলে দিয়েছে। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে টেলিভিশন এখন মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বকে গৃহে উপস্থিত করছে, এর ফলে পৃথিবী আজ পরিণত হয়েছে 'গেস্নাবাল ভিলেজ'-এ। টেলিভিশন এমন একটি যন্ত্র যা থেকে একই সঙ্গে ছবি দেখা যায় এবং শব্দও শোনা যায়। টেলিভিশন শব্দটি ইংরেজি শব্দ থেকে এসেছে। এটি মূলত প্রাচীন গ্রিক শব্দ 'ঞবষব' অর্থাৎ 'দূর' এবং ল্যাটিন শব্দ 'ঠরংরড়হ' অর্থাৎ 'দর্শন' মিলিয়ে তৈরি হয়। তাই টেলিভিশনকে বাংলায় দূরদর্শন যন্ত্র বলা হয়। আবিষ্কার : গ্রিক শব্দ 'টেলি' অর্থ দূরত্ব, আর ল্যাটিন শব্দ 'ভিশন' অর্থ দেখা। ১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। এরপর ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ব্রিটিশবিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন এবং সাদা-কালো ছবি দূরে বৈদু্যতিক সম্প্রচারে পাঠাতে সক্ষম হন। এরপর রুশ বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবার্গের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে। অতঃপর ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশন উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। গত শতাব্দীর ৫০ এর দশকে টেলিভিশন গণমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে। সম্প্রচার কৌশল : টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে প্যাটার্নে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয়। টেলিভিশনের আউটপুট : টিভি ক্যামেরা যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করা। সাধারণত ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিকে দুভাগে ভাগ করা যায় : স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের জন্য মুভি/ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র। ভিডিও ক্যামেরা দ্রম্নতগতিতে পরপর অনেক স্থিরচিত্র গ্রহণ করে। এই ছবিগুলোকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলো চলচ্চিত্র বলে মনে হয়। ফ্রেমে এই দ্রম্নতগতিতে ছবি পরিবর্তনের কারিগরি কৌশলটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। চলচ্চিত্রকে খুবই স্স্নো মোশানে দেখলে এসব স্থিরচিত্রগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। অ্যানালগ টিভি ক্যামেরা এসব ছবির পিক্সেলকে সাধারণত ৫২৫টি লাইনে ভাগ করে লাইন বাই লাইন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে। একই সঙ্গে শব্দ তরঙ্গকে আলাদা সিগনালের মাধ্যমে প্রেরণ করে। ছবি ও শব্দের সিগনাল অ্যান্টেনা/কেবল/স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি গ্রহণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে আবার ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করে। টেলিভিশন থেকে নির্গত রশ্মি গামা। টেলিভিশনের শ্রেণিবিভাগ : ডিসপেস্ন বা প্রদর্শনীর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে টেলিভিশনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন- সিআরটি (ঈজঞ), পস্নাজমা (চষধংসধ), এলসিডি (খঈউ), এলইডি (খঊউ) ইত্যাদি। সম্প্রচার থেকে প্রদর্শন পর্যন্ত টেলিভিশনের সম্পূর্ণ পদ্ধতিকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায় : এনালগ টেলিভিশন (সনাতন পদ্ধতি), ডিজিটাল টেলিভিশন (উঞঠ) ও এইচডিটিভি (ঐউঞঠ)। এনালগ টেলিভিশন : এনালগ তথা সনাতন টিভি পদ্ধতি অর্থাৎ টিভি ক্যামেরা, ট্রান্সমিটিং সিস্টেম এবং টিভিসেট সবই কাজ করে এনালগ পদ্ধতিতে। এ ধরনের টিভিতে চঅখ স্ট্যান্ডার্ড ছবির পিক্সেল হয় মাত্র (৭২০দ্ধ৫৭৬) ৪১৪, ৭২০ এবং ছবির ধংঢ়বপঃ ৎধঃরড় ৪ : ৩ যার অর্থ স্ক্রিনে ছবির সাইজ ৪ একক প্রশস্ত ও ৩ একক উচ্চতার। অর্থাৎ ২৫ ইঞ্চি ডায়াগোনাল টিভি স্ক্রিনে ২০দ্ধ১৫ ইঞ্চি হবে। বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, আমরা চার ধরনের টিভি সম্পর্কে কথা বলতে পারি : মেকানিক্স : এটিই প্রথম টেলিভিশন মডেল, যা 'নিপকো ডিস্ক' নামে একটি আবিষ্কার থেকে ফ্যাসিমাইল ট্রান্সমিশনে বেশ কয়েকটি ছবি ব্যবহার করে। যা একবারে একটি চিত্র এক লাইন স্ক্যান করতে দেয়। ইলেকট্র্রনিক্স : ক্যাথোড রশ্মি এবং আইকনস্কোপ থেকে, বৈদু্যতিক টেলিভিশনের বিকাশ ঘটেছিল, যা কাজ করে। ১৯৩৭ সালে এটি চালু হওয়ার পরে এবং ৫০ বছর ধরে বিশাল আকার ধারণ করে। ডিজিটাল : কম্পিউটারাইজড প্রযুক্তির আবির্ভাব ডিজিটাল টেলিভিশন বিকাশের অনুমতি দেয়। উন্নতমানের অডিও এবং ভিডিও সংকেত প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম, যা অ্যানালগ টেলিভিশন মডেলকে অচল করে দিয়েছে। এই নতুন প্রযুক্তির বাস্তবায়ন ৯০-এর দশকে শুরু হয়েছিল। স্মার্টটিভি : এটি সমসাময়িক টিভি মডেল, যা আরও অনেক উন্নত সংযোগের মডেলের জন্য ২.০ প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের ধাক্কা নেয়। টিভি সারা বিশ্বের মানবসভ্যতাকে যে এক সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করতে সক্ষম, তা ফিলিপিনসে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন মিডিয়া বিশেষজ্ঞ গধৎংযধষষ গপষঁযধহ তার 'গেস্নাবাল ভিলেজ' তত্ত্বে ষাটের দশকেই তুলে ধরেছিলেন। বিগত শতাব্দীর বিশের দশকের শেষ দিকে উদ্ভাবিত টেলিভিশন প্রযুক্তির উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অৎঃযঁৎ ঈ ঈষবৎশ। তিনি ১৯৪৫ সালে বলেছিলেন যে, তিনটি মহাসাগরের ওপর তিনটি উপগ্রহ স্থাপন করা হলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তকে টেলিভিশনের পর্দায় তুলে ধরা সম্ভব। বর্তমানে পৃথিবীর চারপাশে শত শত উপগ্রহের পরিভ্রমণের ফলস্বরূপ আমরা পাচ্ছি অসংখ্য স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল।