প্রশ্ন: বাস্তুসংস্থান কী? পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের ৪টি প্রয়োজনীয়তা লেখ।
উত্তর : কোনো স্থানের সকল জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়াই হলো ওই স্থানের বাস্তুসংস্থান।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের ৪টি প্রয়োজনীয়তা উলেস্নখ করা হলো:
১. উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে ও বায়ুতে অক্সিজেন ছাড়ে। প্রাণী শ্বাসকার্যে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। এতে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
২. প্রাণী মারা গেলে তার দেহ মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এগুলো উদ্ভিদের বাঁচার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
৩. বিভিন্ন প্রাণী উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে।
৪. বিভিন্ন প্রাণী ও কীটপতঙ্গের আবাসস্থল উদ্ভিদ।
প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণে আমাদের করণীয় আলোচনা কর।
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে আমরা খাদ্য ও ওষুধসহ বেঁচে থাকার নানা উপকরণ পাই। আমাদের জীবনধারণের জন্য এগুলো অপরিহার্য। এগুলো সংরক্ষণে আমাদের করণীয়গুলো হলো:
১. পরিবেশ দূষিত হয় এমন ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
২. বসতবাড়ি ও বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. গাছপালা কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। অধিক পরিমাণ বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
৪. উদ্ভিদ ও পশুপাখির যত্ন নিতে হবে।
৫. পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিজ এলাকায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন:তুমি কী কী কারণে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল, ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর : আমি যেসব কারণে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল তা হলো-
১. উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন ত্যাগ করে আমি তা শ্বাসকার্যের মাধ্যমে গ্রহণ করে বেঁচে থাকি।
২. আমি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক তন্তু নির্মিত পোশাক পরিধান করি।
৩. উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন- কান্ড, শাখা ও ফলমূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি।
৪. বাসস্থান বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে আমি উদ্ভিদ ব্যবহার করি।
৫. আমি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওষুধ রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করি।
প্রশ্ন: বাস্তুসংস্থান কী? এর উপাদানগুলোর উপর মানুষ নির্ভরশীল কেন? একটি বাস্তুসংস্থানে ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
উত্তর : বাস্তুসংস্থান হলো কোনো স্থানের সকল জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়া।
মানুষ বাস্তুসংস্থানের জীব ও জড় উপাদানের উপর খাদ্য ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন নিয়ামকের জন্য নির্ভরশীল। যেমন- খাদ্যের জন্য মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন জড় উপাদানের মধ্যে শ্বাস গ্রহণের জন্য বায়ু, পান করার জন্য পানি, পুষ্টির জন্য খাদ্য প্রয়োজন। ফসল ফলানো ও বাসস্থানের জন্য প্রয়োজন মাটি। আবার জীবনযাপনের জন্য বাসস্থান, আসবাবপত্র, পোশাক ইত্যাদি প্রয়োজন। একটি বাস্তুসংস্থানের খাদ্যজালে থাকা ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে ঈগল যেসব প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত সেগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে। ঈগল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ইঁদুর, সাপ, কাঠবিড়ালি ইত্যাদি। তাই ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এতে ইঁদুর ফসলের ক্ষতিসাধন করবে। তৃণজাতীয় উদ্ভিদের পরিমাণ কমে যাবে যা ঘাসফড়িং, খরগোশ ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদেরকে প্রভাবিত করবে। আবার ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এতে খরগোশের জীবন বিপন্ন হবে।
প্রশ্ন: খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজালের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য লেখ।
উত্তর : খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজালের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ :
প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য কেন মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? পাঁচটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : পরিবেশের মাটি, পানি ও বায়ু সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।
সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী মাটিতে জন্মে, চলাফেরা করে এবং মাটিতে উৎপাদিত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।
পানি ছাড়া কোনো উদ্ভিদ ও প্রাণী বাঁচতে পারে না, কারণ উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাণী তার খাদ্য পরিপাক ও অবসন্নতা দূর করতে পানি পান করে।
উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ু থেকে গ্রহণ করে খাদ্য তৈরি করে এবং প্রাণী বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাসকার্য চালায়।
সুতরাং বলা যায়, প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
প্রশ্ন: পরিবেশের জড় ও জীবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর : পরিবেশে জীব ও জড়ের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। পরিবেশের প্রধান জড় উপাদানগুলো হলো পানি, বায়ু, মাটি, খনিজ উপাদান, আলো এবং তাপমাত্রা। এ উপাদানগুলো ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। যেমন : উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য সূর্যালোক, পানি এবং বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করার সময় সমপরিমাণ অক্সিজেন বায়ুতে ত্যাগ করে। পরিবেশের এই অক্সিজেন গ্রহণ করে প্রাণী শ্বাসক্রিয়া চালায় এবং গৃহীত অক্সিজেনের সমপরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। এ কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামাল রূপে ব্যবহার করে। প্রাণীরা খাদ্য গ্রহণ করে সবুজ উদ্ভিদ থেকে। পুষ্টির জন্য উদ্ভিদ মাটি থেকে বিভিন্ন খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। জীবের মৃত্যুর পর দেহের পচনে এ জড় উপাদানগুলো আবার পরিবেশে ফিরে আসে।
সুতরাং জীব ও জড় উপাদান একটি নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
প্রশ্ন: খাদ্যশৃঙ্খল সম্বন্ধে কী জান লেখ।
উত্তর : সকল প্রাণীই শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পোকা-মাকড় তৃণজাতীয় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ব্যাঙ পোকা-মাকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবেই শক্তি উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে প্রবাহিত হয়। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। সবুজ উদ্ভিদ থেকেই প্রতিটি শৃঙ্খলের শুরু।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়