থার্মোমিটার
থার্মোমিটার শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ থেকে, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ :যবৎসড় মানে 'তাপ' এবং সবঃবৎ মানে পরিমাপ করা। অর্থাৎ তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র। যা বিভিন্ন মূলনীতি ব্যবহার করে তাপমাত্রা পরিমাপ করে থাকে। থার্মোমিটারকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়। যথা : তাপমাত্রা সংবেদী অংশ (যেমন : পারদ থার্মোমিটারের বাল্ব) যেখানে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো ভৌত পরিবর্তন সংঘটিত হয়, এবং এই ভৌত পরিবর্তনকে মানে রূপান্তর করার ব্যবস্থা (যেমন : পারদ থার্মোমিটারের স্কেল)।
আজকালকার থার্মোমিটারগুলোয় ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় ডিজিটাল ডিসপেস্ন থাকে এবং কোনো কোনোটিতে কম্পিউটারে তথ্য প্রদানের ব্যবস্থাও থাকে।
থার্মোমিটার হলো তাপমাত্রা নির্ণয়ের এক বিশেষ যন্ত্র। জানা যায়, ষোড়শ শতকে সর্বপ্রথম ইতালিতে থার্মোমিটার আবিষ্কার হয়। ১৬১২ সালে ডেনিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. সেন্টোরিয়াস থার্মোমিটার ব্যবহার করে মানবদেহের তাপমাত্রা পরিমাপের কথা উলেস্নখ করেন। তবে তিনি নিজেকে এর আবিষ্কারক দাবি করেননি। তাপ প্রয়োগ করলে তরল পদার্থ আয়তনে বৃদ্ধি পায়, একে তরল পদার্থের আয়তন প্রসারণ বলে। তরলের আয়তন প্রসারণের সূত্র ধরেই ১৭১৪ সালে ড্যানিয়েল গ্যারিয়েল ফারেনহাইট পারদ থার্মোমিটার আবিষ্কার করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত থার্মোমিটারের নাম ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার। বিজ্ঞানী ফারেনহাইটের নামানুসারে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত এ থার্মোমিটার স্কেলের নাম রাখা হয় ফারেনহাইট থার্মোমিটার। ফারেনহাইট থার্মোমিটার ৯৫ক্ক ফারেনহাইট থেকে ১১০ক্ক ফারেনহাইট চিহ্নিত দাগ থাকে। কারণ কোনো অসুস্থ রোগীর দেহের তাপমাত্রা এর চেয়ে কম বা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটির ৯৮.৪০ক্ক ফারেনহাইটের জায়গায় একটি লাল রঙের দাগ থাকে। কারণ একজন সুস্থ
মানুষের দেহের তাপমাত্রা ৯৮.৪০ক্ক ফারেনহাইট হয়ে থাকে।
তাপমাত্রা যখন একটি স্বতন্ত্র থার্মোমিটার উষ্ণতা পরিমাপ করতে সামর্থ্য হয়, তখন দুটি থার্মোমিটারের রিডিং তুলনা করা যাবে না যদি না তারা সর্বসম্মত কোনো স্কেল থেকে বর্ণিত হয়। আজ আমাদের কাছে তাপমাত্রার পরম থার্মোডায়নামক স্কেল রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মত তাপমাত্রা পরিমাপক স্কেলগুলো আনুমানিকভাবে এ ডিজাইনের খুবই
নিকটবর্তী হয়, এবং নির্দিষ্ট পয়েন্ট ও প্রক্ষেপক থার্মোমিটার ভিত্তিক হয়। সাম্প্রতিক অফিসিয়াল তাপমাত্রার স্কেল হচ্ছে আন্তর্জাতিক তাপমাত্রার স্কেল ১৯৯০। ইহা ০.৬৫ ক (-২৭২.৫ ক্কঈ; -৪৫৮.৫ ফারেনহাইট) থেকে প্রায়
১৩৫৮ ক (১০৮৫ ক্কঈ; ১৯৮৫ ফারেনহাইট) পর্যন্ত বিস্তৃত।
থার্মোমিটার ধরন:বিভিন্ন পদার্থের তাপমাত্রার সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এমন নানান ধর্ম ব্যবহার করে থার্মোমিটার তৈরি করা হয়। তাপমাত্রা সেন্সর বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল বিদ্যার বিভিন্ন শাখায় বহুল ব্যবহৃত।
-অ্যালকোহল থার্মোমিটার
-বেকম্যান ডিফারেন্সিয়াল থার্মোমিটার
-দ্বি-ধাতব যান্ত্রিক থার্মোমিটার
-কুলম্ব আবদ্ধকরণ থার্মোমিটার
-গ্যালিলিও থার্মোমিটার
-অবলাল থার্মোমিটারক্স
-লিকুইড ক্রিস্টাল থার্মোমিটার
-পারদ থার্মোমিটার
-চিকিৎসা থার্মোমিটার
-রোধ থার্মোমিটার
-থার্মিস্টর
থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়মাবলি
১. প্রথমে থার্মোমিটারটি স্পিরিট বা সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে শুকনো কাপড়ে মুছে নিন। ডিজিটাল থার্মোমিটার হলে খেয়াল রাখুন, ভেতরে যেন পানি প্রবেশ না করে।
২. সাধারণ থার্মোমিটার হলে পারদের অবস্থান দেখুন। যদি তা ৯৭ ডিগ্রির উপরে থাকে, তবে জোরে ঝাঁকিয়ে পারদ নিচে নামিয়ে আনুন। ডিজিটাল থার্মোমিটার হলে সুইচে চাপ দিয়ে চালু করুন।
৩. থার্মোমিটারের গোড়া বগলের নিচে রেখে হাত শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে দু-তিন মিনিট চেপে ধরুন। বড়দের বেলায় মুখের ভেতর জিহ্বার নিচে রেখে ঠোঁট দিয়ে চেপে রাখতে বলুন এক থেকে দুই মিনিট। ডিজিটাল থার্মোমিটার হলে মিউজিক বাজলে বের করুন এবার তাপমাত্রা দেখুন।
৪. ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে রাখুন।