ইতিহাসের পাতা

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ কথাসাহিত্যিক ও নোবেল জয়ী জন্ম: ৬ মার্চ ১৯২৭খ্রি: মৃতু্য: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ খ্রি:
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ 'গাবো' নামেই বেশি পরিচিত। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ১৯২৭ সালে কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের কাছে আরাকাটাকা শহরে ৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সমকালীন শক্তিমান কথা সাহিত্যিকদের অন্যতম। সাহিত্যের ভুবনে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ছিলেন এক জাদুকরের মতোই। ১৯৮২ সালে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ নোবেল পুরস্কার পান। শুধু যে নোবেল বিজয়ী বলেই যে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছিলেন তা কিন্তু নয়। সমকালীন বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে গার্সিয়া মার্কেজ একটি ব্যতিক্রমী নাম। গত চার দশকজুড়ে পৃথিবীব্যাপী তার খ্যাতি গগনচুম্বী। নোবেলজয়ী পেরুর মারিও বার্গাস য়োসা ছাড়া এতটা প্রচার আর কোনো লাতিন আমেরিকান কথাসাহিত্যিকদের নেই। এই কথাসাহিত্যিক জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছেন মেক্সিকো এবং ইউরোপে। বিশ্ববিখ্যাত কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ্বের সবচেয়ে আলোচিত, প্রভাবশালী লেখক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দুই যুগ তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচেছিলেন। এ সময় তিনি লেখালেখি কম করেন। তিনি দুরারোগ্য লিম্ফেঠিক ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১২'র জুলাই থেকে তিনি স্মৃতি বিনষ্টিতে আক্রান্ত হন। তার গল্প-উপন্যাসে লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের রূঢ় বাস্তবতার উপকথা, কিংবদন্তি, পুরাণ, স্মৃতিচারণ ও কুসংস্কার একই সুতায় গাঁথা। তার গল্পগুলো শুধু লাতিন আমেরিকাতেই নয়, সারা দুনিয়ায় ঘুরে-ফিরে গাবোর কথাই বলে যাবে ভবিষ্যতের কাছেও। মৃতু্যকালে তিনি একটি অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি রেখে গিয়েছেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস লা ওহারাস্কা (পাতার ঝড়)। তার প্রথম বৃহদাকার কাজ ছিল 'দ্য স্টোরি অব এ শিপরেক্‌ড সেইলর' (রেলাতো দে উন্‌ নাউফ্রাগো), যা তিনি ১৯৫৫ সালে পত্রিকা ধারাবাহিক হিসেবে রচনা করেন। তার সবচাইতে ব্যবসা সফল উপন্যাস 'নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী' (ঈরবহ ধশ্ছড়ং ফব ংড়ষবফধফ সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ) সারা বিশ্বে ২৫টি ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৬৭-২০১৪ এই ৪৫ বৎসরে এই উপন্যাস প্রায় ৫ কোটি কপি বিক্রি হয়। এই বইটির জন্য তিনি ১৯৭২ সালে রোমুলো গ্যালাওস পুরস্কার জিতে নেন। ১৯৬৭ : উপন্যাস ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড প্রকাশিত। ১৯৭৫-৭৬ সালে প্রকাশিত হয় অটাম অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে তার তিন খন্ডের আত্মজীবনীর প্রথম খন্ড হিসেবে স্মৃতিগ্রন্থ বিবির পারা কোন্ত্রালা প্রকাশিত হয় যা স্পেনীয় ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ২০০৩ এর নভেম্বরে এডিথ গ্রসম্যানের ইংরেজি অনুবাদ 'লিভিং টু টেল দ্য টেল' প্রকাশিত হয় যা ছিল আরেকটি বেস্টসেলার। ২০০৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বোগোতা দৈনিক এল তিয়েমপো মার্কেসের একটি নতুন উপন্যাসের কথা ঘোষণা করে, যার নাম মেমোইরা দি মিস পুতাস ত্রিসতেস। প্রেমের এই উপন্যাসটি অক্টোবরে প্রকাশিত হয় এবং এর প্রথম সংস্করণের দশ লাখ কপি নিঃশেষিত হয়ে যায়। উলেস্নখযোগ্য ক্যান্সারের প্রকোপে মার্কেজ এতটাই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন যে তার পক্ষে আর লেখালিখি করা সম্ভব হচ্ছিল না। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মেক্সিকো শহরে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃতু্যতে বিশ্বসাহিত্যে 'মার্কেজ পর্বের' যবনিকাপাত হয়। তার মৃতু্যতে সংঘর্ষ প্রপীড়িত কলম্বিয়া নামক দেশটির সবচেয়ে গৌরবের মানুষটির জীবনের অবসান হয়। তার মৃতু্যতে কলম্বিয়াতে নেমে আসে গভীর নিঃস্তব্ধতা। কলম্বিয়া তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো- এই ছিল সাধারণ মানুষের অনুভূতি।