এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি (বাংলা দ্বিতীয় পত্র)

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মো. ইমরান হোসেন, সহকারী শিক্ষক, ইস্টার্ন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা য়
আমরা রোজ স্কুলে যাই
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো ক্রিয়াবিভক্তি-সাধু ও চলিত আমি যাই। আপনারা যাবেন। সে যাচ্ছে। তারা যাচ্ছিলেন। ওপরে যা-ধাতুর সঙ্গে 'ই', 'বেন', 'চ্ছে' ও 'চ্ছিলেন' বিভক্তি যুক্ত করে সমাপিকা ক্রিয়াপদগুলো গঠিত হয়েছে। ধাতুর উত্তর যেসব বর্ণ ও বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করে তাদের ক্রিয়াবিভক্তি বলা হয়। ১. বিভক্তিসমূহ ক্রিয়ার কাল, পুরুষ ও বাচ্যভেদে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। যেমন : আমি যাই-সাধারণ বর্তমান কালে উত্তম পুরুষের ক্রিয়াপদ। আপনারা যাবেন- সাধারণ ভবিষ্যৎ কালে (সম্ভ্রমাত্মক) মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদ। ২. সাধু ও চলিত রীতিভেদেও ক্রিয়াবিভক্তির পরিবর্তন হয়। যেমন : সাধু আপনি ভাত খাইয়াছেন। তাহারা বাড়ি যাইতেছে। চলিত আপনি ভাত খেয়েছেন। তারা বাড়ি যাচ্ছে। ৩. প্রযোজক ক্রিয়াতেও ক্রিয়াবিভক্তির অনুরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন : সাধু রীতি (প্রযোজক) আমি তাহাকে দিয়া কাজটি করাইয়াছি। রত্না মণিকে গান শিখাইতেছিল। চলিত রীতি (প্রযোজক) আমি তাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছি। রত্না মণিকে গান শেখাচ্ছিল। বাক্য গঠন কোথাকার জাদুকর এলি এখানে। আইল রাক্ষসকুল প্রভঞ্জন বেগে। কেমন আছিস? কোথায় ছিলি? সে ব্যক্তিটি তুমি নও। একা দেখি কুলবধূ, কে বটে আপনি? আজি ঘরে একলাটি পারবো না রইতে। বোসো, তোমাকে মজা দেখাচ্ছি। হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোন খানে। কারকের সংজ্ঞা, প্রকরণ ও নমুনা 'কারক' শব্দটির অর্থ- যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। কারক ছয় প্রকার : ১. কর্তৃকারক ২. কর্ম কারক ৩. করণ কারক ৪. সম্প্রদান কারক ৫. অপাদান কারক ৬. অধিকরণ কারক একটি বাক্যে ছয়টি কারকের নমুনা : একটি বাক্যে ছয়টি কারকের উদাহরণ : বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন। এখানে- ১. বেগম সাহেবা - ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তৃসম্বন্ধ ২. চাল - '' '' কর্ম সম্বন্ধ ৩. হাতে - '' '' করণ সম্বন্ধ ৪. গরিবদের - '' '' সম্প্রদান সম্বন্ধ ৫. ভাঁড়ার থেকে - '' '' অপাদান সম্বন্ধ ৬. প্রতিদিন - '' '' অধিকরণ সম্বন্ধ বিভক্তির সংজ্ঞা ও প্রকরণ বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের সঙ্গে যেসব বর্ণ যুক্ত হয় তাদের বিভক্তি বলে। যেমন : ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ+এ বিভক্তি), মা (মা+০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু+কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ+০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বিভক্তি চিহ্ন স্পষ্ট না হলে সেখানে শূন্যবিভক্তি আছে মনে করা হয়। বিভক্তি ২ প্রকার। যেমন : শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি ও ক্রিয়াবিভক্তি বাংলা শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি ০ (শূন্য) বিভক্তি (অথবা অ-বিভক্তি), এ, (য়), তে (এ), কে (রে), র, (এরা)- সবকটিই খাঁটি বাংলা শব্দবিভক্তি। এ ছাড়া বিভক্তিস্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দ কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন : দ্বারা, দিয়ে, হতে, থেকে ইত্যাদি। বাংলা শব্দবিভক্তি সাত প্রকার : প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী এবং সপ্তমী। একবচন এবং বহুবচনভেদে বিভক্তিগুলোর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন : বিভক্তির আকৃতি একবচন বহুবচন প্রথমা : ০, অ, এ, (য়), তে, এতে রা, এরা, গুলি (গুলো), গণ দ্বিতীয়া : ০, অ, কে, রে (এরে), এ, য়, ত্‌ দিগে, দিগকে, দিগেরে, দের তৃতীয়া : ০, অ, এ, তে, দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক দিগের দিয়া, দের দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক, গুলির দ্বারা, গুলিকে দিয়ে, গুলো দিয়ে, গুলি কর্তৃক, দের দিয়ে চতুর্থী : দ্বিতীয়ার মতো পঞ্চমী : এ (য়ে, য়), হইতে, থেকে, চেয়ে, হতে দিগ হইতে, দের হইতে, দিগের চেয়ে, গুলি হইতে, গুলির চেয়ে, দের হতে, দের থেকে, দের চেয়ে ষষ্ঠী : র, এর দিগের, দের, গুলির, গণের, গুলোর সপ্তমী : এ, (য়), য়, তে, এতে দিগে, দিগেতে, গুলিতে, গণে, গুলির মধ্যে, গুলোতে, গুলোর মধ্যে তারকা চিহ্নিত বিভক্তিগুলো এবং বন্ধনীতে লিখিত শব্দ চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয় বিভক্তিযোগের নিয়ম ক) অপ্রাণী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে 'রা' যুক্ত হয় না; গুলি, গুলো যুক্ত হয়। যেমন : পাথরগুলো, গরুগুলি খ) অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তর 'কে' বা 'রে' বিভক্তি হয় না, শূন্যবিভক্তি হয়। যেমন : কলম দাও। গ) স্বরান্ত শব্দের উত্তর 'এ' বিভক্তির রূপ হয়- 'য়' বা 'য়ে'। 'এ' স্থানে 'তে' বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে। যেমন : মা+এ=মায়ে, ঘোড়া+এ=ঘোড়ায়, পানি+তে=পানিতে। ঘ) অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের উত্তর প্রায়ই 'রা' স্থানে 'এরা' হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির 'র' স্থলে 'এর' যুক্ত হয়। যেমন : লোক+রা=লোকেরা বিদ্বান (ব্যঞ্জনান্ত)+রা=বিদ্বানেরা মানুষ+এর=মানুষের লোক+এর=লোকের কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ 'র' যুক্ত হয়, 'এর' যুক্ত হয় না। যেমন : বড়র, মামার, ছেলের। সকল প্রকার কারকের সংজ্ঞা ১. কারক : বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। যেমন : বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন। ২. কর্তৃকারক : বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে। যেমন : মেয়েরা ফুল তোলে। ৩. কর্মকারক : যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্মকারক বলে। যেমন : নাসিমা ফুল তুলছে। ৪. করণ কারক : ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা সহায়ককেই করণ কারক বলে। যেমন : নীরা কলম দিয়ে লেখে। ৫. সম্প্রদান কারক : যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয় তাকে সম্প্রদান কারক বলে। ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। সৎপাত্রে কন্যা দান কর। ৬. অপাদান কারক : যা থেকে কিছু বিচু্যত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয় তাকে অপাদান কারক বলে। যেমন : গাছ থেকে পাতা পড়ে। মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে। ৭. অধিকরণ কারক : ক্রিয়া সম্পাদনের কাল/সময় এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। যেমন : আমরা রোজ স্কুলে যাই। ৮. ভাবাধিকরণ কারক : যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তবে তাকে ভাবাধিকরণ কারক বলে। যেমন : সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়। ৯. ঐকদেশিক আধারাধিকরণ : বিশাল স্থানের যে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ কারক বলে। যেমন : পুকুরে মাছ আছে। ১০. অভিব্যাপক আধারাধিকরণ : উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ কারক বলে। যেমন : তিলে তৈল আছে। নদীতে পানি আছে। ১১. বৈষয়িক অধিকরণ : বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারো কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে তাকে বৈষয়িক অধিকরণ কারক বলে। যেমন : রাকিব অঙ্কে কাঁচা কিন্তু ব্যাকরণে ভালো। ১২. কর্তৃকারকের মুখ্যকর্তা : যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে মুখ্যকর্তা বলে। যেমন : ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। ১৩. কর্তৃকারকের প্রযোজক কর্তা : মূলকর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায় তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন : শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন। ১৪. কর্তৃকারকের প্রযোজ্য কর্তা : মূলকর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন : রাখাল (প্রযোজক) গরুকে (প্রযোজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়। ১৫. কর্তৃকারকের ব্যতিহার কর্তা : কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন : বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।