প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো
অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ
ক) প্রথমা বা শূন্য বা অ বিভক্তি : বোটা-আলগা ফল গাছে থাকে না। মনে পড়ে সেই জ্যৈষ্ঠ দুপুরে পাঠশালা পলায়ন।
খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি : বাবাকে বড্ড ভয় পাই।
গ) ষষ্ঠী বা এর বিভক্তি : যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়।
ঘ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি : বিপদে মোরে করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা। লোকমুখে শুনেছি। তিলে তৈল হয়।
য়-বিভক্তি : টাকায় টাকা হয়।
বিভিন্ন অর্থে অপাদানের ব্যবহার
ক) স্থানবাচক : তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন।
খ) দূরত্বজ্ঞাপক : ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
গ) নিক্ষেপ : বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে।
অধিকরণ কারক
ক্রিয়া সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারকে সপ্তমী অর্থাৎ 'এ' 'য়' 'তে' ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন : আধার (স্থান) : আমরা রোজ স্কুলে যাই। এ বাড়িতে কেউ নাই। কাল (সময়) : প্রভাতে সূর্য ওঠে।
অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যেমন : কালাধিকরণ, আধারাধিকরণ ও ভাবাধিকরণ
যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তবে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয় বলে একে ভাবে সপ্তমী বলা হয়। যেমন : সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।
আধারাধিকরণ তিন ভাগে বিভক্ত : ১. ঐকদেশিক ২. অভিব্যাপক ৩. বৈষয়িক
১. ঐকদেশিক আধারাধিকরণ কারক
বিশাল স্থানের যে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন : পুকুরে মাছ আছে (পুকুরের যে কোনো এক স্থানে)। বনে বাঘ আছে। (বনের যে কোনো এক অংশে)। আকাশে চাঁদ উঠেছে। (আকাশের কোনো এক অংশে)
সামীপ্য অর্থেও ঐকদেশিক আধারাধিকরণ হয়। যেমন : ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। (ঘাটের কাছে)। 'দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী, ভিক্ষা দেহ তারে (দুয়ারের কাছে), রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা।
২. অভিব্যাপক আধারাধিকরণ কারক
উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে। যেমন : তিলে তৈল আছে। (তিলের সারা অংশব্যাপী)। নদীতে পানি আছে। (নদীর সমস্ত অংশ ব্যাপ্ত করে)
৩. বৈষয়িক আধারাধিকরণ কারক
বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারো কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক আধারাধিকরণ হয়। যেমন : রাকিব অঙ্কে কাঁচা কিন্তু ব্যাকরণে ভালো। আমাদের সেনারা সাহসে দুর্জয়, যুদ্ধে অপরাজেয়।
অধিকরণ কারকে অন্যান্য বিভক্তি
ক) প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি : আমি ঢাকা যাব। বাবা বাড়ি নাই।
খ) তৃতীয়া বিভক্তি : খিলিপান (এর ভেতরে) দিয়ে ঔষধ খাবে।
গ) পঞ্চমী বিভক্তি : বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়।
ঘ) সপ্তমী বা তে বিভক্তি : এ বাড়িতে কেউ নাই।
অধিকরণে অনুসর্গের ব্যবহার
ঘরের মধ্যে কে রে? তোমার আসন পাতিব হাটের মাঝে।
বিভিন্ন কারকে শূন্য বিভক্তি
ক) কর্তৃকারকে : রহিম বাড়ি যায়।
খ) কর্মকারকে : ডাক্তার ডাকো।
গ) করণে : ঘোড়াকে চাবুক মারো।
ঘ) অপাদানে : ট্রেন স্টেশন ছাড়ে।
ঙ) অধিকরণে : সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন কারকে সপ্তমী বা এ বিভক্তি
ক) কর্তৃকারকে : লোকে বলে। পাগলে কী না বলে।
খ) কর্মকারকে : এ অধীনে দায়িত্বভার অর্পণ করুন।
গ) করণে : এ কলমে ভালো লেখা হয়।
ঘ) অপাদানে : আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাঘবে?
ঙ) অধিকরণে : এ দেহে প্রাণ নাই।
সম্বন্ধ পদ
ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে যে নামপদ বাক্যস্থিত অন্য পদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয় তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। যেমন : মতিনের ভাই বাড়ি যাবে। এখানে 'মতিনের' সঙ্গে 'ভাই'-এর সম্পর্ক আছে কিন্তু 'যাবে' ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ নাই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য বা জ্ঞাতব্য : ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ পদের সম্বন্ধ নাই বলে সম্বন্ধ পদকে কারক বলা হয় না।
সম্বন্ধ পদের বিভক্তি
ক) সম্বন্ধ পদে 'র' বা 'এর' বিভক্তি যুক্ত হয়ে থাকে। যথা: আমি+র= আমার (ভাই), খালিদ+এর= খালিদের (বই)।
খ) সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে কার> কের বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন :
আজি+কার=আজিকার আজকের (কাগজ)
পূর্বে+কার = পূর্বেকার (ঘটনা) কালি+কার=কালিকার>কালকার>কালকের (ছেলে)
কিন্তু 'কাল' শব্দের উত্তর শুধু 'এর' বিভক্তিই যুক্ত হয়। যেমন : কাল+এর=কালের। বাক্য : সে কত কালের কথা।
সম্বন্ধ পদের প্রকারভেদ
সম্বন্ধ পদ বহু প্রকারের হতে পারে। যেমন :
ক) অধিকরণ সম্বন্ধ : রাজার রাজ্য, প্রজার জমি
খ) জন্ম-জনক সম্বন্ধ : গাছের ফল, পুকুরের মাছ
গ) কার্যকারণ সম্বন্ধ : অগ্নির উত্তাপ
ঘ) উপাদান সম্বন্ধ : রুপার থালা, সোনার বাটি
ঙ) গুণ সম্বন্ধ : মধুর মিতা, নিমের তিক্ততা
চ) হেতু সম্বন্ধ : ধনের অহংকার, রূপের দেমাক
ছ) ব্যাপ্তি সম্বন্ধ : রোজার ছুটি, শরতের আকাশ
জ) ক্রম সম্বন্ধ : পাঁচের পৃষ্ঠা, সাতের ঘর
ঝ) অংশ সম্বন্ধ : হাতির দাঁত, মাথার চুল
ঞ) ব্যবসায় সম্বন্ধ : পাটের গুদাম, আদার ব্যাপারী
ট) ভগ্নাংশ সম্বন্ধ : একের তিন, সাতের পাঁচ
ঠ) কৃতি সম্বন্ধ : নজরুলের অগ্নিবীণা, মাইকেলের 'মেঘনাদবধ কাব্য'
ড) আধার-আধেয় : বাটির দুধ, শিশির ওষুধ
ঢ) অভেদ সম্বন্ধ : জ্ঞানের আলোক, দুঃখের দহন
ণ) উপমান-উপমেয় সম্বন্ধ : ননীর পুতুল, লোহার শরীর
ত) বিশেষণ সম্বন্ধ : সুখের দিন, যৌবনের চাঞ্চল্য
থ) নির্ধারণ সম্বন্ধ : সবার সেরা, সবার ছোট
১. কর্তৃ সম্বন্ধ : রাজার হুকুম।
২. কর্ম সম্বন্ধ : প্রভুর সেবা, সাধুর দর্শন
৩. কারক সম্বন্ধ : চোখের দেখা, হাতের লাঠি
৪. অপাদান সম্বন্ধ : বাঘের ভয়, বৃষ্টির পানি
৫. অধিকরণ সম্বন্ধ : ক্ষেতের ধান, দেশের লোক