এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
মণিপুরি নৃত্য
আজ তোমাদের জন্য সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র থেকে সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো ১. আয়েশা এবছর চট্টগ্রামের একটি মহিলা কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। প্রথম ক্লাসে সে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অধ্যাপক নাজমুল করিমের নাম জানতে পারে। এই অধ্যাপক অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে ১৯৫৭ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। জ্ঞানের একটি বিকাশমান শাখা হিসেবে পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। প্রশ্ন: ক. ঞযব চড়ংরঃরাব ইধপশমৎড়ঁহফ ড়ভ ঐরহফঁ ঝড়পরড়ষড়মু গ্রন্থের লেখক কে? প্রশ্ন: খ. প্রাচ্যের কৌটিল্যকে পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলির অগ্রদূত বলা হয় কেন? প্রশ্ন: গ. সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে নির্দেশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধর। প্রশ্ন: ঘ. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে- কথাটির যথার্থতা নিরূপণ কর। উত্তর-ক: অধ্যাপক বিনয় কুমার সরকার। উত্তর-খ: যে দু-একজন ভারতীয় চিন্তাবিদ প্রাচীন সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, তাদের মধ্যে কৌটিল্য অন্যতম। তার লেখা অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি সমাজ গবেষকদের কাছে অতি মূল্যবান। গ্রন্থটিতে তিনি মৌর্য আমলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিশদ আলোচনা করেছেন। পরবর্তী সময়ের অধিকাংশ গবেষকই প্রাচ্যকে নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কৌটিল্যের আলোচনা দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাই তাকে পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলির অগ্রদূত বলা যায়। উত্তর-গ: উদ্দীপকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ করা হয়েছে। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগে সহায়ক কোর্স হিসেবে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হতো। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল করিমের আগ্রহের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে ইউনেসকোর কাছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু করার জন্য সহযোগিতা কামনা করে। ইউনেসকো বিভাগটি চালুর বিষয়ে সহযোগিতা করতে সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ড. পেরি বেসাইনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। এই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনেসকোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ইউনেসকোর বিশেষজ্ঞ ড. পেরি বেসাইনি বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ, নাজমুল করিমসহ মোট চারজন শিক্ষক নতুন এই বিভাগে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। উত্তর-ঘ: বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানচর্চার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অবিভক্ত বাংলায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী প্রভৃতি গ্রন্থ সমাজবিজ্ঞানচর্চার পটভূমি রচিত করে। গ্রন্থগুলোতে তারা তৎকালীন বাঙালি সমাজের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। ১৮৩৯ সালে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁতের হাত ধরে জ্ঞানের রাজ্যে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অবিভক্ত বাংলায় প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একে নাজমুল করিমের সার্বিক প্রচেষ্টায় ও ইউনেসকোর সহযোগিতায় ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজেও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। অধ্যাপক নাজমুল করিমের হাত ধরেই বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক অধ্যয়ন শুরু হয়। তার পরে অধ্যাপক এফআর খান, অধ্যাপক আফসার উদ্দিন, ড. রঙ্গলাল সেন, ড. অনুপম সেন, ড. আনোয়ার উলস্নাহ চৌধুরী প্রমুখ বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে আরও গতিশীল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ওপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২. গত বছর সুপ্রিয়ার বিয়ে হয়। সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর থেকে বরকে নিয়ে তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করছে। সুপ্রিয়া পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় সব সম্পত্তির মালিক হয়েছে। অন্যদিকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী হ্যাপি বিয়ের পর তার বরের বাড়িতে বসবাস করছে। বিয়ের পর তার বর তাকে রাখার জন্য একটি নতুন ঘর নির্মাণ করেছে। এ বছর হ্যাপি তাদের বিজু উৎসবে সুপ্রিয়া ও তার বরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রশ্ন: ক. খাসিয়াদের মধ্যে কয়টি গোত্র রয়েছে? প্রশ্ন: খ. মণিপুরি নৃত্যের সামাজিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। প্রশ্ন: গ. হ্যাপি বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য? প্রশ্ন: ঘ. 'সুপ্রিয়ার সমাজের পরিবারব্যবস্থা হ্যাপির সমাজের পরিবারব্যবস্থা থেকে ভিন্ন' কথাটির যথার্থতা প্রমাণ কর। উত্তর-ক: খাসিয়াদের মধ্যে ছয়টি গোত্র রয়েছে। উত্তর-খ: মণিপুরি নৃত্য মণিপুরি সমাজে বিশেষ ধরনের নৃত্য। নৃত্যের কারণে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে। তাই তারা এই নৃত্যকে খুব পবিত্র মনে করে। ফলে তারা সব পূজা-পার্বণ ও আচার-অনুষ্ঠানে এই নৃত্যের আয়োজন করে থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই নৃত্য তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-গ: হ্যাপি চাকমা নৃগোষ্ঠীর সদস্য। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চাকমা অন্যতম। জনসংখ্যার দিক থেকে তারা বৃহৎ। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় তাদের বসবাস। চাকমা সমাজে পিতৃবাস পরিবারব্যবস্থা বিদ্যমান। বিয়ের পর বরকে বাবার বাড়িতে নতুন ঘর তৈরি করে স্ত্রীকে রাখতে হয়। চাকমা সমাজে নানা রকম পূজা-পার্বণ, উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। তারা তিনদিন ধরে বিজু উৎসব পালন করে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালিত হয়। কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান হচ্ছে তাদের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, হ্যাপি বিয়ের পর তার বরের বাড়িতে বরের তৈরি নতুন ঘরে বসবাস করছে। তারা বিজু উৎসব উদ্যাপন করে। তাই সে চাকমা নৃগোষ্ঠীর সদস্য।