এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
ছয় দফাকে মুক্তির সনদ বলা হয়-
আজ তোমাদের জন্য সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র থেকে সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো উত্তর-ঘ: সুপ্রিয়া বাংলাদেশের গারো নৃগোষ্ঠীর সদস্য। তারা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করে। গারো পরিবার মাতৃপ্রধান। মাতা পরিবারের প্রধান। একইভাবে মাতৃসূত্রীয় রীতি অনুযায়ী পরিবার পরিচালিত হয়। বংশমর্যাদা ও উত্তরাধিকার রীতি মাতা থেকে মেয়েতে বর্তায়। পরিবারের কনিষ্ঠ মেয়ে মায়ের সব সম্পত্তি পেয়ে থাকে। যে সম্পত্তি পায় তাকে 'নোকনা' বলা হয়। নোকনা তার স্বামীকে নিয়ে স্থায়ীভাবে মায়ের বাড়িতে থাকে। যেহেতু সে পরিবারের সম্পত্তি পাবে, তাই সে বৃদ্ধকালে মা-বাবার সেবাযত্ন করতে বাধ্য। গারো সমাজে মনোগামী তথা যুগল বিবাহ রীতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাদের সমাজে ক্রস কাজিন বিবাহ বা মামাতো ও ফুফাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহ অনুমোদিত হলেও প্যারালাল কাজিন বিবাহ বা খালাতো ও চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে চাকমা সমাজে পিতৃপ্রধান পরিবার বিদ্যমান। পিতৃসূত্রীয় রীতি অনুযায়ী বাবা থেকে সম্পত্তি ও বংশমর্যাদা ছেলেতে বর্তায়। মেয়েরা বাবার সম্পত্তির মালিক হয় না। বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে পরিচিতি পায়। চাকমা সমাজে চাচাতো, খালাতো ও মামাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিয়ে হয়। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে গারো ও চাকমা সমাজে পরিবারব্যবস্থার মধ্যে ভিন্নতা বিদ্যমান। ৩. মুনিরের দাদা স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ছাত্রনেতা ছিলেন এবং একজন মহান নেতার ঐতিহাসিক ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অবসর সময়ে তিনি তাকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের গল্প শোনাতেন। একদিন ছাত্র-জনতার দুর্বার এক আন্দোলনের বিষয়ে বললেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সে আন্দোলনে তাদের সহপাঠী আসাদুজ্জামান আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অবশেষে জেনারেল আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। একই সঙ্গে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে মামলার প্রধান আসামি বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অগ্রদূতসহ জাতীয় নেতাদের মুক্তি দেয়া হয়। প্রশ্ন: ক. জাতীয়তাবাদ কী? প্রশ্ন: খ. ছয় দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন? প্রশ্ন: গ. মুনিরের দাদার বর্ণনাকৃত আন্দোলনের সঙ্গে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আন্দোলনের মিল রয়েছে? প্রশ্ন: ঘ. বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে উদ্দীপকে নির্দেশিত মহান নেতার অবদান মূল্যায়ন কর। উত্তর-ক: জাতীয়তাবাদ বলতে এক ধরনের মানসিক ঐক্য বা চেতনাকে বোঝায়, যার দ্বারা কোনো জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে সংহতি অনুভব করে। এর ভিত্তিতে তারা একত্রে বসবাস করার অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে। ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, আঞ্চলিকতা, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠে। উত্তর-খ: ১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ খ্যাত ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করার লক্ষ্যে এ ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়। ভাষা আন্দোলনের ভিত্তিতে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে তা আরও দৃঢ় হয় ছয় দফার ভিত্তিতে। এরই ভিত্তিতে শুরু হয় অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, যা স্বাধীনতা আন্দোলনকে উৎসাহ জুগিয়েছিল। তাই ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। উত্তর-গ: মুনিরের দাদা ১৯৬৯ সালের গণ-অভু্যত্থান সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার পর থেকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। তাই তারা ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ফলে বাংলার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। ছয় দফার সঙ্গে ছাত্ররা আরও পাঁচ দফা যুক্ত করে ছাত্র-জনতা ১১ দফা কর্মসূচি নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্স্নোগান দিতে থাকে 'জাগো জাগো, বাঙালি জাগো', 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো'। ২০ জানুয়ারি ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ শহীদ হন। এ ঘটনার পর চলমান আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ২৪ জানুয়ারিতে প্রবল গণঅভু্যত্থানে রূপ লাভ করে। এ গণঅভু্যত্থান আমাদের ইতিহাসে ঊনসত্তরের মহান গণঅভু্যত্থান হিসেবে পরিচিতি পায়। এ ঘটনাপ্রবাহে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক জেলহাজতে নিহত হন এবং ১৮ ফেব্রম্নয়ারি ড. শামসুজ্জোহা সামরিক অফিসার কর্তৃক নিহত হন। উদ্দীপকে আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনটি সৃষ্ট এবং সে আন্দোলনে আসাদুজ্জামান শহীদ হন বলে উলেস্নখ রয়েছে বিধায় এটি ১৯৬৯ সালের গণ-অভু্যত্থান। উত্তর-ঘ: উদ্দীপকে নির্দেশিত মহান নেতা হলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার আপসহীন ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভূমিকার জন্য তিনি চিরস্মরণীয়। ১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলগুলোর এ সম্মেলনে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে তিনি বাঙালি জাতির অতুলনীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ছয় দফা পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিগণিত হয়। তার এই ছয় দফার পরিপ্রেক্ষিতে পরে ছাত্র-জনতার ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলন ১৯৬৯ সালের গণ-অভু্যত্থানে রূপ নেয়, যার ফলে জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটে। আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তার দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করে। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাসংগ্রামের সশস্ত্র প্রস্তুতির জন্য উদ্বুদ্ধ করে তোলে। তার এ ভাষণ আজও জাতিকে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রেরণা জোগায়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলায় তিনি হয়ে ওঠেন স্বাধীনতার জীবন্ত কিংবদন্তি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। সব বিবেচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে তার অবদান অতুলনীয়।