বিজ্ঞানের যত কথা রক্তকণিকা

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য় রক্তকোষ হলো হেমাটোপয়েসিস প্রক্রিয়ায় তৈরিকৃত একধরনের কোষ, যা সাধারণত রক্তে পাওয়া যায়। স্তন্যপায়ীদের রক্তের রক্তকোষগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা- লোহিত রক্তকণিকা - ইরাথ্রোসাইট শ্বেত রক্তকণিকা - লিউকোসাইট অণুচক্রিকা - থ্রম্বোসাইট এই তিন ধরনের রক্তকোষ মানবদেহের সম্পূর্ণ রক্তটিসু্যর প্রায় ৪৫% এবং অবশিষ্ট ৫৫% আয়তন রক্তরস দ্বারা পূর্ণ। কোষের মোট আয়তনের তুলনায় এই আয়তনের শতাংশ (৪৫%)। হেমাট্রোসাইট যা সেন্ট্রিফিউজ বা ফ্লোসাইমেট্রির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। হিমোগেস্নাবিন (লোহিত রক্তকণিকার প্রধান উপাদান) এক ধরনের লৌহ-ধারণকারী প্রোটিন যা টিসু্য থেকে ফুসফুসে অক্সিজেন এবং ফুসফুস থেকে টিসু্যতে কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহন করে। লোহিত রক্তকণিকা (ইরাথ্রোসাইট): লোহিত রক্তকণিকা রক্তের সব প্রধান কোষ বা কণিকা যা মেরুদন্ডী প্রাণীদের ফুসফুস থেকে দেহের কলাগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। হিমোগেস্নাবিনের মাধ্যমে ফুসফুস বা ফুলকার মধ্যকার কৈশিকনালির মধ্যে সংবহনের সময় শ্বাসবায়ু থেকে লোহিত রক্তকণিকাতে অক্সিজেন সংগৃহীত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিত্যক্ত হয়। অন্যান্য কলায় কৈশিকনালির মাধ্যমে রক্ত সংবহনের সময় লোহিত রক্তকণিকা থেকে অক্সিজেন কোষে স্থানান্তরিত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বিপরীতে অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকায় প্রবাহিত হয়। এই কণিকার আয়ু ১২০ দিন। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় এভাবে এরা পুনরায় মনোপোটেন্ট স্টেম সেল প্রস্তুত করে ও তৈরি হয়। তারা শ্বেত রক্তকণিকার সঙ্গে দেহের কোষের প্রতিরক্ষার কাজ করে। শ্বেত রক্তকণিকা (লিউকোসাইট): শ্বেত রক্তকণিকা দেহের প্রতিরক্ষার কাজ করে। এটি নানা ধরনের সংক্রামণকারী রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। পাঁচটি ভিন্ন ধরনের লিউকোসাইট রয়েছে, তবে তারা প্রত্যেকেই বোন ম্যারোর মধ্যকার এক ধরনের মাল্টিপোটেন্ট কোষ থেকে সৃষ্টি হয় যাকে হেমাপয়েটিক স্টেম সেল বলা হয়, তারা মানবদেহে ৩-৪ দিন থাকে। রক্ত এবং লসিকাসহ সারা মানবদেহেই লিউকোসাইট পাওয়া যায়। অণুচক্রিকা (থ্রম্বোসাইট): অণুচক্রিকা হলো অতিক্ষুদ্র, অনিয়মিত আকারের কোষ। এর ব্যাস ২-৩ ক্রস। এর আয়ু বড়জোর ৫-৯ দিন। অণুচক্রিকা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উৎস। স্তন্যপায়ীদের দেহে এরা সংবাহিত হয়। এটি রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। অণুচক্রিকা সুতার আঁশের মতো রক্তকে জমাট বাঁধায়। অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব কমে গেলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব বেড়ে গেলে তা রক্তনালিকাগুলোকে বাঁধা দিয়ে থ্রম্বোসিস ঘটাতে পারে এবং এমন পরিস্থিতিতে স্ট্রোক, মাইওকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন, ফুসফুসীয় ধমনিরোধ এবং রক্তনালিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অণুচক্রিকার অস্বাভাবিকতা বা রোগকে থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি বলা হয়। যা হতে পারে অণুচক্রিকা কমে গেলে, অণুচক্রিকার স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হলে কিংবা অণুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে গেলে। এ ছাড়া বেশকিছু রোগের কারণেও অণুচক্রিকা কমতে পারে যেমন ডেঙ্গু বা হেপারিন-ইনডিউজড থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (এইচআইটি)। অণুচক্রিকা বিভিন্ন বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান উৎপন্ন করে যেমন পেস্নটলেট-ডেপরাইভড? গ্রোথ ফ্যাক্টর (পিডিজিএফ), এ পটেন্ট কেমোট্যাক্টিক এজেন্ট এবং টিজিএফ বেটা যা অতিরিক্ত কোষীয় মাতৃকাকে ত্বরান্বিত করে। উভয় বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান সংযোজক কলার পুনর্গঠন এবং পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সম্পূর্ণ রক্তগণনা: সম্পূর্ণ রক্তগণনা (ঈড়সঢ়ষবঃব নষড়ড়ফ পড়ঁহঃ) বা সিবিসি হলো এক ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি। সাধারণত ডাক্তার বা অন্য কোনো চিকিৎসাবিদ কোনো রোগীর রক্তের কোষের বিষয়ে সব তথ্য জানার জন্য এ পরীক্ষা করেন। আবিষ্কার: ১৬৫৮ সালে ওলন্দাজ প্রকৃতিবিদ জ্যান সোয়ামারডাম সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্রে লোহিত রক্তকণিকা পরিদর্শন করেন এবং ১৬৯৫ সালে অণুবীক্ষণ যন্ত্রবিদ ওলন্দাজ অ্যান্টনি ভন লিউয়েনহুক সর্বপ্রথম লাল দেহকোষের চিত্র অঙ্কন করেন। ১৮৪২ সালের আগ পর্যন্ত কোনো প্রকার রক্তকোষ আবিষ্কৃত হয়নি। সেই বছর ফরাসি চিকিৎসাবিদ আলফ্রেড দোনে অণুচক্রিকা আবিষ্কার করেন। পরবর্তী বছরই ফরাসি মেডিসিনের অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল আনড্রেল এবং ব্রিটিশ চিকিৎসাবিদ উইলিয়াম এডিসন কর্তৃক সহসা লোহিত রক্তকণিকা দর্শিত হয়। উভয়েই বিশ্বাস করতেন যে লোহিত এবং শ্বেত রক্তকণিকা হলো রোগের রদ-বদল। এই আবিষ্কার রক্তবিদ্যা নামক চিকিৎসাজগতের নতুন এক শাখার জন্ম দেয়। যদিও কলা ও কোষের আবিষ্কার ঘটে যায়, তবুও ১৮৭৯ সালের আগ পর্যন্ত শারীরবিদ্যার রক্তকোষের বিষয়ে তেমন কোনো জ্ঞান অর্জিত হয় না। পরবর্তীতে পল এহ?রলিচ (চধঁষ ঊযৎষরপয) পার্থক্যমূলক পদ্ধতিতে রক্তকোষ গণনাবিষয়ক তার নিজস্ব পদ্ধতি প্রকাশ করেন।