আরও সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
ভেঙে ফেলা হচ্ছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী অভিসার সিনেমা হল
চলচ্চিত্র শিল্প ও শিল্পী টিকিয়ে রাখার জন্য সিনেমা হলের বিকল্প নেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই কমে আসছে সিনেমা হলের সংখ্যা। চলচ্চিত্রের নাজুক পরিস্থিতির কারণে এরই মধ্যে সারাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ১ হাজার থেকে আড়াইশ'তে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হওয়া করোনাভাইরাস সংকটে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি সিনেমা হল। এর মধ্যে রাজধানীর টিকাটুলির ৫২ বছরের পুরানো সিনেমাহল 'অভিসার' অন্যতম। একই পথে হাঁটছে আরেক সিনেমা হল 'নেপচুন'। এছাড়া নানা অনিশ্চয়তা ও চলমান সংকটের মধ্যে আরও ১০ থেকে ১২টির মতো হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। সিনেমা না চললেও কর্মীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। জানা গেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সুদিন ও দুর্দিনে সমানভাবে পাশে ছিল অভিসার হলটি। নানা সংকটের মধ্যেও এতদিন শো চালিয়েছিল অভিসার কর্তৃপক্ষ। তবে করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই মাস পুরোপুরি বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার তো হয়নিই, উল্টো প্রতি মাসে ৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে আর্থিক সংকটের মুখে বাধ্য হয়েই ভেঙে ফেলতে হচ্ছে হলটি। এর পরিবর্তে এখানে নির্মিত হবে বাণিজ্যিক ভবন, থাকবে ব্যাংক ও কমিউনিটি সেন্টার। ১ হাজার আসনের 'অভিসার' সিনেমা হলে প্রায় ৪০ জন স্টাফ ও ৬ জন ম্যানেজার কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ হল ভাঙার সিদ্ধান্তে তারাও চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। এ বিষয়ে সিনেমা হলটির অন্যতম মালিক সফর আলী ভূঁইয়া বলেন, 'করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে এখানে। এই ভবনে একটি কমিউনিটি সেন্টার থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য তলায় ব্যাংক-বিমা ও সায়েন্টিফিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান ভাড়া দেওয়া হবে। তবে পুরানো অভিসার ভেঙে ফেলা হলেও স্মৃতি হিসেবে ভবনে দেড়শ আসনের ছোট একটি সিনেমা হল রাখার পরিকল্পনা আছে।' ১৯৬৮ সালের দিকে ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়; ১৯৯২ সালে দেনার দায়ে কে এম আর মঞ্জুর ও সফর আলী ভূঁইয়ার কাছে 'অভিসার' বিক্রি করেন। কেনার পর অভিসারের উপর 'নেপচুন' নামে আরেকটি সিনেমা হল করেন তারা। এর আগেও আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়েছে রাজধানীর রাজমণি ও রাজিয়া সিনেমা হল। হল ভেঙে সেখানে তৈরি করা হয়েছে রাজমণি বিপণি বিতান। একই পথে হেঁটেছে বাসাবোর আগমন-অতিথি, নরসিংদীর সুরভী, ঘোড়াশালের সোহাগ, আদমজীর মুনলাইট, যাত্রাবাড়ীর পুনমসহ ১১টি হল। আর্থিক দায় মাথায় নিয়ে হলগুলো ভেঙে তৈরি করা হয়েছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। ঢাকাই চলচ্চিত্রের মন্দা অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই। নিম্নমানের গল্প, কাস্টিং কাউচের অভাব ও বাজেট স্বল্পতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছে দেশীয় বিনোদন জগতের সবচেয়ে বড় এই মাধ্যমটি। টেনেটুনে বছরে অর্ধশত সিনেমা মুক্তি পেলেও লাভের মুখ দেখে ১-২টি চলচ্চিত্র। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রিমিং পস্নাটফর্মগুলোতে ভালোমানের সিনেমা পাওয়ায় দর্শকের মধ্যেও হলবিমুখতাও রয়েছে। এতো সংকটের মধ্যে যে কয়েকটি সিনেমা হল দাঁড়িয়ে ছিল, করোনা সংকটের কারণে সেগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে শর্তসাপেক্ষে এফডিসির ফ্লোরে শুটিংয়ের অনুমতি পাওয়া গেলেও কবে থেকে প্রেক্ষাগৃহ চালু হবে, তার কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি। দিনকে দিন করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে হলমালিকদের কাছে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দর্শক হলে আসবে, সে নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারছে না। তবে চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চরম সংকটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।