কিংবদন্তির প্রস্থানে স্তব্ধ শোবিজ

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
এন্ড্রু কিশোর
পেস্নব্যাক সম্রাটখ্যাত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে হারিয়ে মুহ্যমান গোটা শোবিজ অঙ্গন। সেই সঙ্গে কাঁদছে পুরো বাংলাদেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার গাওয়া 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে' কিংবা 'আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি'র মতো জনপ্রিয় গানের লাইন দিয়ে সবাই শোকবার্তা জানাচ্ছে। এই তালিকায় সবার থেকে এগিয়ে দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। নিজেদের ফেসবুক হ্যান্ডেলে কিংবদন্তিতুল্য এই গায়ককে নিয়ে আগল খুলে স্মৃতিচারণ করেছেন তারা। এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে জুটি বেঁধে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন আরেক কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। তার মতে, সদ্যপ্রয়াত এই গায়ক মেলোডিয়াস কণ্ঠশৈলীর জন্য অমর হয়ে থাকবেন। রুনা লায়লা ফেসবুকে এক শোকবার্তায় বলেন, 'ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সংগীত অঙ্গনের এক বলিষ্ঠ মানুষকে বিদায় জানাচ্ছি। যাকে মেলোডিয়াস কণ্ঠ ও হৃদয়ে ঝড় তোলা গান অমর করে রাখবে। আগামী প্রজন্মকে তিনি অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন।' এন্ড্রু কিশোরের প্রয়াণে নগর বাউলখ্যাত গায়ক জেমস বলেন, 'এন্ডু্র দা আমার কয়েক বছরের সিনিয়র। আমরা একই অঞ্চলের মানুষ। একসঙ্গে তার সঙ্গে কত গল্প, কত স্মৃতি- বলে বোঝাতে পারব না। একটি পত্রিকার অনুষ্ঠানে তার হাত থেকে আমি ক্রেস্ট নিয়েছিলাম। তার হাসিমাখা মুখ আর ওই ক্রেস্ট নেওয়ার মুহূর্তেও আনন্দটা ছিল অসাধারণ। সে সময় তার সঙ্গে কানে কানে কথা হয়েছিল। 'কেমন আছেন, সব ঠিকঠাক তো?' মনে হয় দুষ্টুমির ছলেই এ কথাটা বলেছিলাম। এন্ডু্র দা শুনে হাসছিলেন। এক রকম সরলতা সব সময় বিরাজ করত তার চোখ-মুখে। সেই সরলতামাখা মায়াভরা মুখ আর কখনো দেখতে পাব না- এটা ভাবতেই পারছি না।' দেশীয় সংগীতের আরেক জনপ্রিয় গায়ক কুমার বিশ্বজিৎও এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, 'এন্ড্রু দা আর নেই। এত তাড়াতাড়ি খবরটা শুনতে হবে, তা ভাবিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছিলেন। যখন সিঙ্গাপুর গেলেন চিকিৎসার জন্য, ভেবেছিলাম ক্যান্সার জয় করে আবারও ফিরে আসবেন তিনি। সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম এন্ডু্র দাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসবেন না। তার এই চলে যাওয়ায় আমার মনে ভয়ঙ্কর শূন্যতা তৈরি হলো।' প্রয়াত এই কিংবদন্তিকে চিত্রনায়ক শাকিব খান 'রোমান্টিক গানের মাস্টার ভয়েস' বলে উলেস্নখ করে শোকবার্তা জানিয়েছেন। নিজের ফেরিভাইড ফেসবুক পেজে শাকিব লেখেন, 'যেখানেই থাকবেন, ভালো থাকবেন রোমান্টিক গানের মাস্টার ভয়েস। এমন গুণীজনের মৃতু্যতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।' শোক জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোরের বন্ধু ও খ্যাতিমান উপস্থাপক হানিফ সংকেত। তিনি লিখেছেন, 'এন্ডু্র কিশোর আর নেই', প্রিয় বন্ধুর মৃতু্য সংবাদটি নিজের হাতে এত তাড়াতাড়ি লিখতে হবে, কখনো কল্পনাও করিনি। এই মুহূর্তে কানে বাজছে রাজশাহী থেকে বলা কিশোরের শেষ কথাগুলো, 'দোয়া করিস বন্ধু, কষ্টটা যেন কম হয়, আর হয়ত কথা বলতে পারব না'। এরপরই খুব দ্রম্নত শরীর খারাপ হতে থাকে কিশোরের। আর আমারও যোগাযোগ বেড়ে যায় রাজশাহীতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তার মৃতু্যতে সংগীতাঙ্গনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।' এন্ডু্র কিশোরের সঙ্গে সংখ্যার বিচারে সর্বাধিক সফল গান কনকচাঁপার। চলচ্চিত্রের অসামান্য সব রোমান্টিক গানের জন্ম হয়েছে এই দুইজনের কণ্ঠসূত্রে। এমন দিনে তার পক্ষেও চুপ থাকা সম্ভব হয়নি। কনকচাঁপা বলেন, 'এন্ডু্র কিশোরের গান গাওয়ার স্টাইল, গাওয়ার জন্য দাঁড়ানোর স্টাইল তাকিয়ে থাকার মতো। উনার কণ্ঠকে আমি বলি, গলিত সোনা। উনি যখন গান গাইতেন, মনে হতো সত্যি সত্যি সোনা গলে গলে পড়ছে। এত অপূর্ব কণ্ঠ, এত শক্তিমান কণ্ঠ। সূর্যের মতো শাশ্বত কণ্ঠ।' কনকচাঁপা আরও বলেন, 'তার মতো শিল্পীকে আমার পেশাদার জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পেয়েছি- এটা আমার পরম সৌভাগ্য।' 'আমাদের সম্পর্কটা ছিল বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মতো। দাদা (এন্ডু্র কিশোর) অনেক স্নেহ করতেন। তার সঙ্গে ২২ বছরের সম্পর্ক আমার। তার কাছে অনেক ভালো পরামর্শ পেয়েছি। সবসময় আমাকে রাগ কমাতে বলতেন। তার চলে যাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল।' পেস্নব্যাক সম্রাট এন্ডু্র কিশোরকে নিয়ে এভাবেই বলেছেন বাংলা সংগীতের যুবরাজ আসিফ আকবর। প্রিয় এই শিল্পীর মৃতু্যতে শোক জানিয়ে আসিফ আকবর আরও বলেন, 'তার শূন্যতা কোনোভাবেই পূর্ণ হবে না। এখন আমাদের উচিৎ, তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা। তার কাজ ও স্মৃতি সংরক্ষণ করা।' কিশোরের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি জয়া আহসানও। তিনি বলেন, 'এন্ডু্র কিশোর আমাদের দেশের সংগীত জগতের একটি অধ্যায়ের নাম। তার হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায়' গান আমাদের মনে গেঁথে থাকবে চিরদিন।' এ ছাড়া চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ, জায়েদ খান, কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী আক্তার, সালমাসহ শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই প্রিয় এই শিল্পীকে হারিয়ে জানিয়েছেন শোকর্বাতা। সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এন্ডু্র কিশোর। তার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ'। ১৯৭৭ সালে গানটি 'মেইল ট্রেন' চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। এরপর এই শিল্পীকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দীর্ঘ ১০ মাস মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬-৫৫ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।