চিত্রপুরীতে যুদ্ধংদেহি পরিবেশ

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
নোটিশ, বয়কট, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের খড়গে নাকাল চলচ্চিত্রপাড়া। বাদ যাচ্ছে না সিনিয়র থেকে জুনিয়র, চাহিদাসম্পন্ন কিংবা নিম্ন আয়ের শিল্পীরাও। এমনকি প্রযোজক পরিবেশক ও হল মালিকদের মধ্যেও পৌঁছে গেছে ভয়ংকর রেষারেষি। এ যেন সিনেমার মধ্যে আরেক 'সিনেমা' চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে নিয়ে চলচ্চিত্রপাড়া রীতিমতো রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠনের নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মিশা-জায়েদ পদত্যাগ না করলে কোনো আপস নয়। এর আগে গত ১৫ জুলাই চলচ্চিত্রের স্বার্থে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা দেয়। এদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যখন-তখন শিল্পীদের সদস্যপদ বাতিল করা, দুর্নীতি, চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে শিল্পীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। এদিকে ১৯ জুলাই দেখা যায় আরেক চিত্র। বিএফডিসির গেটের সামনে মিশা-জায়েদের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নামেন শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ জন শিল্পী। 'যে নেতা শিল্পীদের সম্মান করে না, তাকে আমরা চাই না' স্স্নোগান দিয়ে ভোটাধিকার ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি মিশা-জায়েদের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। বিষয়টিকে চলচ্চিত্র শিল্পী ও শিল্পী সমিতির জন্য একটি অপমান ও অসম্মানের ব্যাপার বলে মনে করেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি বলেন, 'করোনার কারণে আমরা সবাই এখন একটু দূরে আছি এফডিসি থেকে। গণমাধ্যমে দেখেছি শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে চলচ্চিত্রের সব সংগঠন মিলে বয়কট করেছে। সেদিন আবার দেখলাম শিল্পীরা পদত্যাগ চাচ্ছে এই দুই শিল্পী নেতার। এটা আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।' সদস্য পদ বালিত করার বিষয়টি স্বীকার করে চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, 'যখন ১৮৪ জন শিল্পীকে বাতিল করা হয় তখন আমি নিজেও কমিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছিলাম। আমি এর সাক্ষী। এদের অন্যায়ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা কয়েকজন যখন ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলতে চাইলাম তখন এই দুজনের সঙ্গে অনেক বাদানুবাদ হয়েছিল। স্পষ্ট দেখছিলাম সবাইকে অন্ধকারে রেখে কেউ কেউ স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব কারণেই কিন্তু আমি আর পরে তাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাইনি।' অপরদিকে সদস্য পদ হারিয়ে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামলে জামাল পাটোয়ারীকে খুনের হুমকি দেন অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এমন অভিযোগ এনে ডিপজলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন জামাল। জিডিতে ডিপজলের ব্যবহার করা একটি ফোন নাম্বার উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'শিল্পী সমিতির জের ধরে গত ২৬ জুলাই আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল তাকে খুনের হুমকি দেন।' বাধ্য হয়েই জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা জামাল পাটোয়ারী পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। 'শিল্পীদের কোনো দিন বয়কট করা যায় না। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে' এমন বক্তব্য দিয়েছেন সিনিয়র অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় আরেক সমালোচনা। ২০১৭ সালে চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক হিসেবে নানা অনিয়ম ও চলচ্চিত্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় চিত্রনায়ক শাকিব খানকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন অভিনেতা ফারুকই। মিশা-জায়েদকে বয়কট করা হলে তখন তিনি কেন শিল্পীদের বয়কট করা যায় না বলে দাবি করছেন। তবে কি শাকিব শিল্পী নন? এমন প্রশ্নও ছুড়েছেন চলচ্চিত্র পরিবারের অনেকে। চলচ্চিত্রের এই সংকটময় অবস্থাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তিনি বলেন, 'এর আগেও বহুবার বহু ঝামেলা ইন্ডাস্ট্রিতে হয়েছে। একসঙ্গে চলতে গেলে নয়দিন ভালো যাবে একদিন খারাপ যাবে। বিভিন্ন সময় অনেক প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে শিল্পীদের ঝামেলা হয়েছে, সেগুলো মিটমাটও হয়েছে। শিল্পী সমিতির মধ্যেও ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা কখনো হয়নি। প্রথমবারের মতো শিল্পী সমিতির প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে সদস্যরা। শিল্পী সমিতির ইমেজ, গুরুত্ব বিবেচনা করে এই বিষয়টা কিন্তু ভয়াবহ। চরম লজ্জার। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত সময় চলছে।' অযোগ্য লোকের নেতৃত্বে জিম্মি চলচ্চিত্রের শিল্পী ও সমিতি বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়িকা পপি। তিনি আরও বলেন, 'অনেকে ২০ বছর আগে সিনেমায় কাজ করেছেন। এখন নিয়মিত নন বলে তাদের সদস্যপদ কেড়ে নেয়া হচ্ছে। যদি এই নিয়মে কাউকে বাদ দেয়া হয় তাহলে তো শত শত শিল্পীর সদস্যপদ থাকবে না। এটিএম শামসুজ্জামান আংকেল, ফারুক ভাই, সোহেল রানা ভাই, কাঞ্চন ভাইদের মতো কিংবদন্তিরাও বাদ পড়বেন। কারণ তারা অনেক দিন সিনেমায় কাজ করেন না। শাবানা-কবরী-ববিতা আপারাও থাকতে পারবেন না। আনোয়ারা ম্যাডাম, সুচন্দা ম্যাডামরা বাদ যাবেন। কারণ কেউই আর আগের মতো কাজ করেন না। এটা একটা ফালতু অজুহাত। ওরা খুঁজে খুঁজে বের করেছে কারা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাদেরই ছাঁটাই করেছেন। এটা অন্যায়। শিল্পী সে চিরদিন শিল্পী।' এ বিষয় প্রিয়দর্শনী খ্যাত চিত্রনায়িকা মৌসুমিও মিশা-জায়েদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'জায়েদ সমিতিতে অসুস্থ রাজনীতি করছেন। যা শিল্পী সমিতির জন্য অমঙ্গল।'