চিত্রপাড়ায় নিরানন্দ ঈদ

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
মধুমিতা সিনেমা হল
করোনার প্রকোপে গত চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে চলচ্চিত্রের সকল কাজকর্ম। শুটিং নেই, ডাবিং নেই, বন্ধ রয়েছে দেশের সকল প্রেক্ষাগৃহ। ছবিশূন্য পার হয়েছে ঈদুলফিতর। সিনেমা হল না খোলায় এবারের ঈদেও মুক্তি পাচ্ছে না কোনো সিনেমা। তাই এবারও নিরানন্দভাবে কাটবে চলচ্চিত্রকর্মীদের ঈদ। সরকারি আদেশে গত প্রায় চার মাস বন্ধ থাকা সিনেমা হল এই ঈদেও খুলছে না। এতদিন প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় লোকসান হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সিনেমা হল খোলা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে দ্বন্দ্ব তৈরি হলেও অবশেষে না খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সিনেমা হলের মালিক ও কর্মচারীরা। অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন কাটছে হাজার হাজার হল কর্মচারীদের। শুধু হল কর্মচারীরাই কষ্টে নেই, কষ্টে আছেন চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, মেকাপম্যান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের কাজে নিয়োজিত সবাই। আছেন পরিচালক ও প্রযোজকরাও। এমনিতেই চলচ্চিত্রশিল্পের অবস্থা ভালো নয়, তার মধ্যে চার মাস বন্ধ থাকায় অনেক পরিচালক ও প্রযোজক নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন। সিনেমা তৈরি হয়ে থাকলেও এই পরিস্থিতিতে মুক্তি দিতে সাহস করছেন না প্রযোজকরা। সাধারণ দিনে মুক্তির থেকে ঈদ উৎসবে ছবি মুক্তিতে আয় বেশি হয়। যে কারণে শুধু তারকারাই নন, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরাও ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ঈদেও প্রেক্ষাগৃহ না খোলায় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই ঈদ বিবর্ণ হয়ে থাকছে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে বহু বছর ধরে কাজ করা এক কর্মচারী বলেন, 'হল বন্ধ থাকলে মালিকইবা টাকা কোথা থেকে দেবেন। সারাবছর যা-ই হোক, ঈদের সময় হল থেকে আয় বেশি হয়। তখন আমাদের ঈদটাও ভালো কাটে। এ বছর পরপর দুটি ঈদই কষ্টের মধ্যে পার করতে হচ্ছে।' দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল যশোরের মণিহারের কমর্চারী প্রায় ৩০ জন। হল বন্ধের মধ্যে দুই মাস ঠিকঠাক বেতন দিতে পারলেও এখন আর পারছেন না হলের মালিক। হলটির ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, 'এ বছর ঈদ বলে কিছু নেই আমাদের জীবনে। চার মাস হল বন্ধ। মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন দিয়ে অর্ধেক কর্মচারীকে হল খোলার আগপর্যন্ত ছুটি দিয়েছি। ছুটিতে থাকা কর্মচারীরা কোনো বেতন পাবেন না।' নিজের হলের কর্মচারীদের দুর্দশার কথা নিজেই জানালেন নারায়ণগঞ্জের সাথী সিনেমা হলের মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, 'আমার হলে সাতজন কর্মচারী। আমি ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। হলের নিচে কয়েকটি দোকান আছে, সেখান থেকে যা ভাড়া পাচ্ছি, তাদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছি। ঈদে হল খুললে কিছু আয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কমর্চারীদেরও ঈদটা ভালো যেত।' এ রকম ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব বড় বড় হল যেমন মধুমিতা, বলাকাসহ সব হলের একই অবস্থা। কোনো কোনো সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার জোগাড়। প্রদর্শক সমিতির সাবেক নেতা ইফতেখার উদ্দিন বলেন, 'সাধারণ সময়ে তেমন ভালো ছবি থাকে না। আয়ও হয় না। ঈদকেন্দ্রিক ছবিগুলো বড় বাজেটের হয়। দুই ঈদের আয় থেকেই সারা বছর কর্মচারীদের বেতন দিয়ে হলটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি।'