কোন পথে চলচ্চিত্র শিল্প?

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
গত দুই বছরে একমাত্র সফল ছবি 'পাসওয়ার্ড'
কোনোভাবেই মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প। দীর্ঘদিন ধরেই মন্দা সময় কাটছে দেশীয় চলচ্চিত্রের। সস্তা ও নকল গল্প, গান, পাত্র-পাত্রী ও দুর্বল লোকেশনের কারণে অনেকদিন ধরেই নাকানি-চুবানি খাচ্ছে বাংলা সিনেমা। পাশাপাশি সিনেমা হলের বাজে পরিবেশের কারণেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শক। মাঝখানে আবার করোনার কারণে সিনেমা হলই বন্ধ রাখা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এমনকি শুটিং পর্যন্ত বন্ধ ছিল টানা ৬ মাস। যদিও সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফের শুটিং করার অনুমতি দিয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার। এ কারণে অনেকটা স্বস্তি নেমে এসেছে চিত্রপুরীতে। শুরু হয়েছে স্থগিত থাকা একাধিক চলচ্চিত্রের শুটিং। শাকিব খান, মাহিয়া মাহী, নুসরাত ফারিয়া, পরীমণি ও সিয়াম আহমেদের মতো তারকারা দিব্যি কাজ করছেন। অপু বিশ্বাস, পপি ও জিয়াউল হক রোশান এরই মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নতুন ছবিতে। কাজে ফেরার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। আপাতদৃষ্টিতে চলচ্চিত্রের অবস্থা স্বাভাবিক মনে হলেও বাস্তবে তেমনটি নয়। কারণ একদিকে চলচ্চিত্র নির্মাণের হিড়িক পড়লেও অন্যদিকে সিনেমা হল খুলে দেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি বহুবার সরকারের কাছে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানালেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে টানা ছয় মাস ধরে লোকসান গুনতে গুনতে আর্থিক সংকটে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে দেশের একাধিক সিনেমা হল। এর মধ্যে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী 'অভিসার' অন্যতম। এমতাবস্থায় ঢাকাই চলচ্চিত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি শিগগিরই হল খুলে না দিলে সিনেমা নির্মাণ করেও লাভ হবে না। এদিকে চলচ্চিত্রের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে ৭০০ কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা এসেছে। চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক সমিতির একাধিক নেতা খবরটি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে বরাদ্দকৃত অর্থের বেশির ভাগই দেওয়া হবে সিনেমা হল সংস্কারের জন্য। এ বিষয়ে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, 'আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে তাকিয়েছেন। এতে চলচ্চিত্র শিল্প নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমাদের বিশ্বাস।' তিনি আরও বলেন, 'এটি সরাসরি কোনো ব্যাংকের টাকা না। তহবিলের টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকে রাখা হবে। আমার জানামতে ১ থেকে ২ শতাংশ সুদে এখান থেকে আগ্রহীরা ঋণ নিতে পারবেন। পরিশোধের মেয়াদ হবে ২০ থেকে ২৫ বছর।' অপরদিকে বরাদ্দকৃত পুরো টাকাটা যাতে হল সংস্কারের কাজে ব্যয় না হয় তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। তারা চায় কিছু টাকা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হোক। পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, 'আমাদের দাবি থাকবে এখান থেকে যেন ১০০ কোটি টাকা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যাতে করে ভালো প্রযোজকরা ছবি বানাতে পারেন এবং হলগুলোতে যেন ভালো বাংলা ছবির অভাব না হয়।' প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রের ব্যবসাসফল সিনেমার সংখ্যা কমছে। গত বছর ৫৭টি ছবির মধ্যে শাকিব খানের 'পাসওয়ার্ড' ছাড়া কোনো ছবিই আলোর মুখ দেখেনি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৯টি সিনেমা মুক্তি পেলেও দর্শক টানতে পারেনি কোনোটি। এর মধ্যে শাকিব খানের 'বীর' নিয়ে সম্ভাবনা তৈরি হলেও নকলের অভিযোগে মুখ থুবড়ে পড়ে ছবিটি। যদিও ঢাকাই চলচ্চিত্রে বাজেট স্বল্পতা নিয়ে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ রয়েছে। বাণিজ্যিক ছবির জন্য যে ধরনের বাজেট থাকা প্রয়োজন তার সিকিভাগও দেশীয় চলচ্চিত্রে থাকে না। এছাড়া বাজেটের মোটা একটি অঙ্ক চলে যায় অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পেছনে। ফলে অনেক বাণিজ্যিক ধারার পরিচালককেও বিগত বছরগুলোতে অনুদানের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এরপরেও শেষ কয়েক বছর চলচ্চিত্রের হাওয়া বদল হতে শুরু করেছিল। বছরে অন্তত এক-দুটি ভালো মানের চলচ্চিত্র পেতো দর্শকরা। তবে করোনার কারণে এবার সে পথটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে সত্যিই উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।