বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এফডিসি যেন খাঁখাঁ মরুভূমি

রায়হান রহমান
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
রোববার দুপুরে বিরান এফডিসি চত্বর

বর্ষণ বিধৌত প্রকৃতি। যদিও শরতে ঝুম বৃষ্টির কথা নয়। কথা রাখেনি শরৎ। সূর্যের মাত্রাতিরিক্ত দাবদাহ শরতের মিষ্টি আবহাওয়াকে রীতিমতো ম্স্নান করে দিয়েছে। অনেকটা এফডিসির মতো। ঢাকাই চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত এই জায়গাটি তার রূপ, যশ ও জলুস হারিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীরব নিথর কঙ্কাল হয়ে। লাইট-ক্যামেরা অ্যাকশন, শুটিং ফ্লোরে হইচই, গেটে সাধারণ মানুষের লাইন আর নামিদামি সব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পদচারণা কমে গেছে ক'বছর ধরেই। বেশির ভাগ শুটিং ফ্লোরই থাকে তালাবদ্ধ অবস্থায়। জং ধরেছে এফডিসির পরতে পরতে। সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত পিয়ন আর গেটম্যান বাদে দেখা মেলেনা কারোর। এক কথায় কর্মহীন এফডিসির চারদিকে খাঁখাঁ অবস্থা। শচীন দেব বর্মণের গানের সুর ধার করে তাই বলা যেতেই পারে, 'এফডিসি আর নেই সে এফডিসি।'

এফসিডিতে শুটিং না চললেও সরগরম থাকে শিল্পী সমিতির কার্যালয়। বছরজুড়ে শিল্পী সমিতির নেতারা হাঁকডাক ছাড়েন এখানে বসেই। কিন্তু রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানেও কাউকে দেখা যায়নি। পিয়নকে জিজ্ঞাসা করতেই জাবাব দিলেন, সমিতির সেক্রেটারি চিত্রনায়ক জায়েদ খান আসবেন বিকালে।

পরিচালক ও প্রযোজক সমিতিরও একই দশা। সমিতির বাইরে দু'একটা গাড়ি থাকলেও ভিতরে লোকজনের বালাই নেই। পিয়ন বসিয়ে রেখেই দায়সারা। অন্যদিকে প্রযোজক সমিতির অফিসে ঢুকে টেবিলের ওপর দু'একটা জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পাওয়া গেলেও দেখা মেলেনি কোনো প্রযোজকের।

জানা গেছে, সমিতির লোকজন বেশির ভাগ সময়ই এফডিসিতে আসেন বিকালে কিংবা সন্ধ্যায়। তবে কাজের জন্য নয়। কাজের চেয়ে আড্ডা হয় বেশি। অনেকেই আবার আড্ডা দিতেই এফডিসিতে আসেন। দলাদলি, সংগঠন আর বয়কটের মতো হঠকারী সিদ্ধান্তগুলো আসে এসব আড্ডা থেকেই।

একসময় অতিরিক্ত শিল্পী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের শীর্ষ তারকাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত এফডিসির ক্যান্টিন। সেখানেও লেগেছে ভাটার টান। বিকাল হলে হাতেগোনা কিছু উঠতি তারকা ছাড়া এখন আর কাউকে দেখা যায় না। এরপরও যারাই আসেন, তারাও কাজের চেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ছবি তোলা ও খোশগল্পে মেতে থাকেন। আর এফডিসির অন্যতম আলোচিত জায়গা ঝর্ণা স্পটের মুল ফটকই বন্ধ রয়েছে বেশকিছু দিন ধরে।

এফডিসির এক কর্মকর্তা জানান, 'কয়েকটা মিউজিক ভিডিও আর নাটকের শুটিং ছাড়া খুব বেশি সিনেমার শুটিং হয় না এখানে। বেশির ভাগ সিনেমার শুটিংই হয় বাইরে। যদিও নভেম্বর থেকে বেশ কয়েকটি সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এফসিডিতে।'

কর্তাব্যক্তির এমন মন্তব্যের সত্যতাও পাওয়া গেছে। করোনা পরিস্থিতি কিছু শিথিল হওয়ায় বেশ কয়েকটি সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে একটিরও শুটিং এফডিসিতে হচ্ছে না। শাকিব, মাহী ও অর্চিতা স্পর্শিয়া অভিনীত 'নবাব এলএলবি'র শুটিং হচ্ছে ঢাকার তিনশ ফিট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিয়াম আহমেদ ও পরীমনি অভিনীত 'অ্যাডভেঞ্চার অফ সুন্দরবন'-এর শুটিং হচ্ছে যশোর। গত কয়েক বছর ধরেই চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে এফডিসি বিমুখতা তৈরি হয়েছে। তারা এফডিসির শুটিং ফ্লোর রেখে বাইরের লোকেশনে (আউটডোর) শুটিং করতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু কেন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ সময়ই এফডিসি নির্মাতাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের সিনেমা নির্মাণে যে ধরনের ইকিউপমেন্ট লাগে সেগুলো এফডিসিতে নেই। এফডিসির ক্যামেরাও অনেক নিম্নমানের। সেখানে ডিজিটালের ছিটেফোটাও নেই। চলচ্চিত্রের বেশির ভাগ কাজই এখন বাইরে করতে হচ্ছে। তা ছাড়া কালার কারেকশনের ব্যবস্থাও নেই এখানে। প্রজেক্টরের ভেতরে ফ্যানের আওয়াজের কারণে ঠিকমতো ডাবিং করাও যায় না। ফলে নির্মাতারা আউটডোর শুটিংয়ের প্রতি ঝুঁকছেন। আর বছরের পর বছর এফসিডি হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।

এদিকে রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেল, ভেঙে ফেলা হয়েছে এফডিসির ঐতিহ্যবাহী তিন ও চার নম্বর শুটিং ফ্লোর। ভাঙার শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। ভাঙা শেষ হলে এখানে গড়ে উঠবে ১৫ তলা আধুনিক ভবন। নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হতে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার এফডিসির আধুনিকায়ন করার জন্য ৯৪ কাঠা জমির ওপর নতুন এ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে এফসিডি আবারও তার যৌবন ফিরে পাবে সে আশায় বুকে স্বপ্ন বেঁধেছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112816 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1