কিংবদন্তি অভিনেতার প্রস্থানে স্তব্ধ দুই বাংলা

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের অভিভাবকতুল্য অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে টানা চলিস্নশ দিন মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেছেন সত্যজিতের 'অপু'। রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় মধ্য কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় অভিনেতাকে হারিয়ে ব্যথার সাগরে ভাসছেন সহকর্মী থেকে শুরু করে দর্শক-ভক্তরা। বেদনার এই সুর বিষাদের বাঁশি হয়ে বাজছে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনেও। সৌমিত্রের মৃতু্য সংবাদে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে যায় তার বিভিন্ন সংলাপ ও কবিতার পঙ্কতির মাধ্যমে। পাশাপাশি শোক প্রকাশ করছেন দুই বাংলার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বরাও। সারাজীবন লড়াই করে শেষ জীবনে হেরে যাবেন 'হীরক রাজার দেশে'র অভিনেতা, বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সৌমিত্রকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, 'পর্দায় তিনি যখন অভিনয়ের গরিমা ঝেরে ফেলে চরিত্রের আচরণ ফুটিয়ে তুলেছিলেন, ভারতবর্ষের শিল্পভুবনে সেটা শুধু বিস্ময়কর একটা ঘটনাই ছিল না, ছিল এক নতুন যুগের সূচনা। বিশ্ব-চলচ্চিত্রের অভিনয়ের প্রথম সারিতেই তার স্থান। কিন্তু অমন যে ইতিহাসের স্রষ্টা, অমন যে শিখরে ওঠা শিল্পী, মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন এক মহাসাগর। যে মহাসাগর অতলান্ত কিন্তু শান্ত। তার মৃতু্য নেই!' সৌমিত্রকে নিজের অভিনয় গুরু স্বীকার করে ওপার বাংলার আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রম চট্টোপাধ্যায় লিখেন, 'অনেকে ওনাকে গুরু মানেন, শিক্ষক বলেন। আমার কাছেও অবশ্যই তাই। আমার নিজের, একান্ত নিজের উদয়ন মাস্টার তিনি। কিন্তু সব ছাড়িয়ে উনি ছিলেন একজন পরম বন্ধু। গত দেড় বছরে ওনি আমার কাছে আরও সখ্য হয়ে উঠেছিলেন। এরমধ্যে ছোটখাটো মতান্তরও হয়েছিল। আজ (রোববার) জীবনের একটা অংশ চলে গেল। বাদ হয়ে গেল। একই সঙ্গে একজন শিক্ষক, পথপ্রদর্শক এবং বন্ধু হারালে কি রকম লাগে সেটা বলার চেষ্টা করা বৃথা। সে পথে যাব না। কাজের কারণে হিমাচল প্রদেশে আছি। শেষ যাত্রায় থাকতে পারছি না। একদিকে ভালোই, এ দুঃখ নিভৃতে, নির্জনে, একান্তে মানায়। এ বিয়োগ বড় ব্যক্তিগত, এ কষ্ট শব্দের নয়, একার।' এদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃতু্যর খবর শোনে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন সুপারস্টার দেব। সৌমিত্রের ছবি শেয়ার করে ছোট্ট করে একটা ক্যাপশন জুড়ে দিয়েছেন 'তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো। তোমাকে খুব মিস করবো ছানা দাদু।' অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার আরও ছোট্ট করে লিখেছেন, 'ভালো থেকো, চিরঞ্জীব অপু..'। সৌমিত্রের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করেছিলেন এ দেশের ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানভীন সুইটি। সে স্মৃতি স্মরণ করে সুইটি তার ফেসবুকে লিখেন, 'সৌভাগ্য হয়েছিল এই গুণী শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার। অসাধারণ একজন মানুষ তিনি। মুগ্ধ হয়েছি তার ব্যবহারে। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি।' ঢাকাই চলচ্চিত্রের আরেক অভিনেতা ওমর সানি বলেন, 'সৌমিত্রদা একটা ইতিহাস। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কলকাতার লোকাল প্রোডাকশনের দুটি সিনেমায় দাদাকে সহশিল্পী হিসেবে পাওয়া। উনাকে দেখার পর আমি তাকিয়ে থাকতাম। খুব ইচ্ছা ছিল কলকাতায় গিয়ে দাদার আশীর্বাদ নিয়ে আসব, আর হলো না। দাদা, তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, পুরোবাংলা ভাষাভাষী মানুষের শ্রদ্ধা, বিগ বস।' দেশের আরেক খ্যাতিমান অভিনেত্রী ববিতা বলেন, 'সৌমিত্রদা আমার অনেক আপন। একটা সিনেমা করেছি বলে নয়, ওই একটা সিনেমায় সৌমিত্রদা যা দিয়েছেন আমাকে তার জন্য আমি আজীবন তাকে কৃতজ্ঞতাভরে মনে রাখব। শুটিং সেট যে আপন জায়গা হতে পারে, সেটা সৌমিত্রদার কাছ থেকেই বুঝেছি। সেই সৌমিত্র দা চলে গেলেন, আমি বলে বোঝাতে পারব না আমি কি হারালাম।' কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন তার বিপুল বৈচিত্র্যের একেকটি দিক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সবকিছু নিয়েই অনন্য। তিনি এমনই এক শিল্পী, যার মূল্যায়ন নিয়ে কোনো পন্ডিতি-তর্ক তোলার অবকাশ রাখে না। বলা হতো সময়ের ধুলা তার আভিজাত্যের সৌন্দর্য স্পর্শ করতে পারে না। সেই সৌমিত্রের সময় চিরতরে থেমে গেল, ৮৬-তে এসে থামলেন তিনি।