বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ জন্মদিন রুনা লায়লা

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ১৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
রুনা লায়লা

উপমহাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী, সুরকার রুনা লায়লার জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। মূলত নিজের জন্মদিনটা বিশেষ আয়োজনের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে জন্মদিনটিকে ঘিরে কোনো আয়োজনই থাকছে না বলে জানিয়েছেন এ তারকা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুদিন আগে থেকেই ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। তার জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন অডিও ভিডিও প্রতিষ্ঠানেও ছোট-খাটো আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সময়ের আলোচিত অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রম্নব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে আজ সকালে প্রকাশিত হবে রুনা লায়লার সুর করা গান 'এই দেখা শেষ দেখা' গানটি। গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুর করেছেন রুনা লায়লা এবং সংগীতায়োজন করেছেন রাজা ক্যাশেফ। গত ১২ ও ১৩ নভেম্বর গানটির মিউজিক ভিডিও নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছেন চন্দন রায় চৌধুরী।

গানটি প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, 'যেদিন প্রথম লুইপা'র কণ্ঠে শ্রদ্ধেয় বেগম আখতারের 'জোছনা করেছে আঁড়ি' গানটি শুনি, তখনই মুগ্ধ হয়ে তাকে অভিনন্দন জানাই। পরবর্তীতে যখন 'এই দেখা শেষ দেখা' গানটির সুর করি, তখন তাকে গানটি গাইতে অনুরোধ করি এবং তার প্রতি আমার আস্থা ছিল। অনুরোধ করি এই অর্থে যে আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে শিল্পী এবং প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেককে সম্মান করি তাহলে সার্বিকভাবে আমাদের সংগীতাঙ্গন আরও সুন্দর হবে। আমার প্রত্যাশার চেয়ে লুইপা অনেক ভালো গেয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ধ্রম্নব গুহকে উদ্যোগী হয়ে গানগুলো করার জন্য।'

ধ্রম্নব মিউজিক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, রুনা লায়লা'র জন্মদিন উপলক্ষে একে একে প্রকাশিত হবে আঁখি আলমগীরের কণ্ঠে 'কোথায় রেখেছো আমায়', তানি লায়লার কণ্ঠে 'কেন হয়ে গেছি পর' ও হৈমন্তী রক্ষিতের কণ্ঠে 'আকাশে মেঘ জমেছে' গান তিনটি। তানি লায়লার গানটির গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। বাকি দুটো গান কবির বকুলের লেখা। গানগুলোর সংগীতায়োজন করেছেন রাজা ক্যাশেফ। রুনা লায়লা প্রথম সুর করেন আলমগীর পরিচালিত 'একটি সিনেমার গল্প' সিনেমায়। 'গল্প কথার ঐ কল্পলোকে জানি' গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সংগীতায়োজন করেছেন ইমন সাহা। রুনা লায়লার সুরে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আঁখি আলমগীর। এই গানেরই সুর করে প্রথম সুরকার হিসেবে রুনা লায়লা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। গত বছর রুনা লায়লার সুরে 'লিজেন্ড ফর এভার' অ্যালবামে গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলে, হরিহরণ, রাহাত ফতেহ আলী খান ও আদনান সামী। রুনা লায়লা জানান, আরও নতুন কিছু গানের সুর সৃষ্টি করছেন। করোনার কারণে সেসব সুর করা গানের কাজ আপাতত বন্ধ আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বিস্তারিত সবাইকে জানান দেবেন রুনা লায়লা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা। তিনি বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। পাকিস্তানে তার গান 'দমাদম মাস্ত কালান্দার' অত্যন্ত জনপ্রিয়।

রুনা লায়লা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীতশিল্পী। তাঁর মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী। রুনা লায়লার যখন আড়াই বছর বয়স, তখন তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। ১৯৬৬ সালে লায়লা উর্দু ভাষার 'হাম দোনো' চলচ্চিত্রে 'উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা; গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে পরিবেশনা করতে থাকেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতায় 'সাধের লাউ' (সিলেটি গান)-এর রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বাইয়ে তিনি প্রথমবারের মতো কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময়ে দিলিস্নতে তার পরিচালক জয়দেবের সাথে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। তিনি 'ও মেরা বাবু চেল চাবিলা' ও 'দমাদম মাস্ত কালান্দার' গান দিয়ে ভারতজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

রুনা লায়লা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'শিল্পী' নামক চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক আলমগীরের বিপরীতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শিল্পী চলচ্চিত্রটি ইংরেজি চলচ্চিত্র 'দ্য বডিগার্ড'-এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে, রুনা লায়লা তিনবার বিয়ে করেন। প্রথমবার তিনি খাজা জাভেদ কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার তিনি সুইস নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে বিয়ে করেন। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশি অভিনেতা আলমগীরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একমাত্র কন্যা তানি লায়লাও একজন কণ্ঠশিল্পী। তার দুই নাতি জাইন এবং অ্যারন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে