ফের নোংরা রাজনীতির অভিযোগ

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত চিত্রপুরী

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) আন্তঃসংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ, বয়কট-পাল্টা বয়কট ও দলাদলি দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পী সমিতি ও চলচ্চিত্রের 'মাদার অরগানাইজেশন' খ্যাত সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নেতাদের প্রকাশ্য বিরোধ চোখে পড়ার মতো। তাদের একে-অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে রীতিমতো উত্তপ্ত চলচ্চিত্রপাড়া। কেউ কেউ আবার বিষয়টিকে নোংরা রাজনীতির সঙ্গেও তুলনা করছেন। জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রযোজক সমিতিসহ ১৮টি সংগঠন মিশা ও জায়েদ খানের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্রের স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ এনে তাদের বয়কট ও জায়েদের সদস্য পদ স্থগিত করে। এরপর তাদের এফডিসিতে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রযোজক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জায়েদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। জায়েদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে দাবি করে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকে প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জায়েদ খানের সদস্য পদ স্থগিত করার বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা দিয়ে তাকে সাধারণ সদস্য হিসেবে তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে যেন বাধা না দেওয়া হয় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রযোজক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু যায়যায়দিনকে বলেন, 'যে ডিপার্টমেন্ট থেকে কমিটি ভেঙে দেওয়ার রায় এসেছে, নিয়ম হলো সেখানে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করা যায়। আমরা এই সুযোগটি গ্রহণ করব। সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। তাছাড়া আমরা মন্ত্রী মহাদয় ও সচিব স্যারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজছি। দেখি কী হয়।' প্রযোজক সমিতির এই নেতা আরও বলেন, 'তদন্ত কমিটির কাছে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর যেসব অভিযোগ ছিল, আমরা মৌখিক ও লিখিত আকারে সেসব ব্যাখ্যা ও উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে আমাদের কোনো কথাই ওদের কাছে সত্য বলে গ্রহণ হয়নি। এমনকি আমরা জায়েদকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে যে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছিলাম, সেটাও আমাদের ঠিক হয়নি বলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। অদ্ভুতভাবে অভিযোগকারী যে যে অভিযোগ দাখিল করেছেন সেগুলোই সেখানে সত্য বলে গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে মোটা দাগে অভিযোগ ছিল- আমরা নাকি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ঈর্শান্বিত হয়ে এসব করেছি। এছাড়াও আমরা হাইকোর্টের তথ্য গোপন করে নির্বাচন করেছি বলে অভিযোগ করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা যখন নির্বাচন করি তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন উচ্চপদস্থ কর্মকতার উপস্থিতিতেই সেটি অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে তারাও কি জানত না হাইকোর্টেও নিষেধাজ্ঞার কথা?' এদিকে সোমবার প্রকাশিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর আওতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাণিজ্য সংগঠন। এই সংগঠনে ২০১৯-২০২১ মেয়াদি নির্বাচনের অনিয়মের বিরুদ্ধে জেড কে মুভিজের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান লিখিতভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করেন। মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে একজন উপসচিবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। সেই তদন্তে জায়েদ খানের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে জায়েদ খানকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এতে আরও বলা হয়েছে, 'তদন্তে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে সমিতির সভাপতি, প্রযোজক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুসহ চারজন প্রযোজক নেতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিধি বহির্ভূতভাবে তথ্য গোপন করে গত বছরের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেন। এজন্য প্রযোজক ও পরিবেশ সমিতির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সমিতি সচল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নূরুল হককে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে ওই প্রজ্ঞাপনে। মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি এফডিসি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। পাশাপাশি যে অভিযোগের জেরে কমিটি ভেঙে দেওয়ার আধ্যাদেশ জারি করেছে সে অভিযোগও সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্রের সংগঠনের নেতারা। জায়েদ খানের উপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, 'যে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নতুন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেটি সত্যি নয়। জানি না বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসছি। দ্রম্নতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সদ্য বিলুপ্ত প্রযোজকদের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতি হিসেবে খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শামসুল আলম কখনোই সংঘবিধি ও সংঘস্মারকের ৫(৫) ধারা লঙ্ঘন করেননি। এটা মিথ্যে অভিযোগ। প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।' এ সময় তারা মিশা ও জায়েদকে আজীবন বয়কট করার হুমকিও দেন।