বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীত মৌসুমেও নেই উৎসবের আমেজ

মাসুদুর রহমান
  ২০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
গত বছর অনুষ্ঠিত হওয়া 'ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট'-এর একটি দৃশ্য

আবহমানকাল ধরে আসা উৎসবের মৌসুম শীতকাল। প্রতি বছরই শীতের আগমনে উৎসবের আমেজে মুখরিত হয়ে ওঠে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস রীতিমত উৎসবে রূপ নেয়। নাচ-গান, যাত্রাপালা, নাটক-সাহিত্যসহ নানারকম উৎসবে জমে ওঠে মঞ্চ। শীতের আগেই শুরু হয়ে যায় এসব উৎসবের ধারা। একটি শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আরেকটি উৎসব। শুধু শহর-নগরীই নয়, উৎসবে মেতে ওঠে গ্রাম বাংলাও। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা এই রীতির ব্যতিক্রম হচ্ছে এবার। মহামারি করোনোয় থেমে গেছে সব আয়োজন। শীত শুরু হয়ে গেলেও নেই কোনো উৎসব-আয়োজন। অনেকটা সুনসান নীরবতায় কেটে যাচ্ছে এবারের শীত।

গত বছর শীতের মৌসুমে শিল্পকলা একাডেমিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের একাধিক অনুষ্ঠানও ছিল। গত বছরের অক্টোবরে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের 'বাংলা নাট্যোৎসব' ও দুই বাংলার আয়োজনে 'গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব'। ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল তিনদিনব্যাপী বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন ও সেলিম আল দীন নাট্যোৎসব। সারা দেশ থেকে আগত পাঁচ শতাধিক নাট্যকর্মীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। ৭ নভেম্বর থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে বসেছিল সাহিত্য সম্মেলন ঢাকা লিট ফেস্ট। দেশ-বিদেশের প্রথীতযশা সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা, লেখক-পাঠক সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব, বইমেলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল এর অন্যতম আকর্ষণ। এসবের কোনোটাই এবার হচ্ছে না করোনার কারণে।

মহামারি ভাইরাসের কারণে থেমে গেল 'ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট'। গত পাঁচ বছর ধরে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লোকসংগীতের এ উৎসব। প্রতি বছর বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৬/৭টি দেশের শতাধিক লোকসংগীত শিল্পী ও কলাকুশলীরা তিনদিনের এই আয়োজনে অংশ নেন। প্রতি সন্ধ্যায় সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে তোলেন দর্শকদের। গত বছরও এই সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬টি দেশ থেকে ২০০ জনেরও বেশি লোকসংগীত শিল্পী এই উৎসবে শিকড় সন্ধানী গান পরিবেশন করেছিলেন। আয়োজক ছিল ফোক ফেস্টের আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান কমিউনিকেশনসের গ্রম্নপ। কিন্তু এবার আর্মি স্টেডিয়ামে নেই সেই সুরের আয়োজন।

শীতের এই মৌসুমে গত বছরের নভেম্বরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটতলার আয়োজনে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। বালাদেশ ছাড়াও ১১ দিনের এই আসরে অংশ নিয়েছিল ভারত, স্পেন, ইরান ও নেপাল। এবারে নেই সেই আয়োজন।

প্রতি বছরই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় 'আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব'। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত এ উৎসবে প্রায় অর্ধশত দেশের শতাধিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। গত বছরও দুইশ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। ১৫ বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব এবার হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

১৩ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। শেষ আয়োজন ছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে বেশ কয়েকটি বিভাগে সারা বিশ্বের শিশু নির্মাতারা প্রতিযোগিতা করেন। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে এবার তা সম্ভব হচ্ছে না বলে সূত্রে জানা গেছে।

নানা জাতি-গোষ্ঠীর মিলনমেলা ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ১ নভেম্বর রাজধানীর বনানী সিটি করপোরেশনের মাঠে। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এবারের উৎসবের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এশিয়ার ১৫টি দেশের প্রায় দুই শতাধিক নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক ও কোরিওগ্রাফারের অংশগ্রহণে গত বছরের নভেম্বরের শেষে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে বসেছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব 'ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল'। সাড়া জাগানো এ উৎসবটি এবার হচ্ছে না করোনার কারণে। বসছে না সংগীতের সবচেয়ে বড় আয়োজন 'বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব'।

ঢাকার বাইরেও অনেক বড় বড় উৎসব হয় প্রতি বছর। এবারে করোনার কারণে থেমে গেছে সেই আয়োজনগুলোও। বাংলা মাসের ১ কার্তিক অনুযায়ী কুষ্টিয়ায় প্রতি বছর ১৬/১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয় তিনদিনের লালন উৎসব হয়। প্রায় একই সময়ে লালন স্মরণে তিনদিনের আরেকটি আয়োজন 'দোলনপূর্ণিমা' হয় কুষ্টিয়ায়। এ দুটির কোনোটিই এবার হয়নি করোনার কারণে।

দেশের লোকসংগীতের শিল্পী শফি মন্ডল যায়যায়দিনকে বলেন, 'করোনার কারণে এবার অনেক বড় বড় উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে না। লালনকে নিয়ে প্রতি বছর কুষ্টিয়া বিশাল আয়োজনে যে উৎসব হয় সেটা হয়নি। 'দোলনপূর্ণিমা' হয়নি। আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্ট নিয়েও কোনো খবর পাইনি। হলে তো অবশ্যই জানতাম। আসলে এই পরিস্থিতিতে উৎসব আয়োজন করা সম্ভবও নয়। উৎসব ছাড়াই এবারের শীত মৌসুমটা পার হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে