বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
একযোগে মুক্তি পাচ্ছে ভারতীয় সিনেমা

মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনে

রায়হান রহমান
  ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
বলিউডের 'কুলি নাম্বার ওয়ান' ছবির একটি দৃশ্য

আবারও ভারতীয় ছবি আমদানি প্রসঙ্গে উত্তেজনা বিরাজ করছে চলচ্চিত্র মহলে। দেশীয় চলচ্চিত্রের দর্শক কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে হিন্দি ভাষার ছবি প্রেক্ষাগৃহ চালাতে চাচ্ছেন বাংলাদেশ হল মালিক সমিতি। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে একাধিক হিন্দি ছবি একযোগে মুক্তি পাবে দেশের সব কয়টি সিনেমা হলে। হল বাঁচাতে এর বিকল্প নেই বলে মালিকরা জানালেও চলচ্চিত্রাঙ্গনের কেউ কেউ বিষয়টিকে চরম হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন।

মূলত 'সাফটা' চুক্তি কিছুটা আপগ্রেট করে দেশে এসব ছবি চালোনোর জন্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন সমিতির নেতারা। এ সময় তারা বলিউডের দশটি সিনেমা চালানোর প্রস্তাব দেন। তাদের দাবি করোনাকালীন সময়ে দর্শক সংকট ও হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে এমন পদক্ষেপের বিকল্প নেই। তবে তথ্যমন্ত্রী হল মালিক সমিতিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিতে বলেছেন। লিখিত পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয় সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আগেও বেশ কয়েকবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পুরনো হিন্দি সিনেমা মুক্তিও পেয়েছে। তবে চলচ্চিত্রের নানা সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে সেটি খুব একটা সফল হতে পারেনি। ২০১৫-২০১৬ সালে বলিউডের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল চলচ্চিত্রাঙ্গন। ভিন দেশি সিনেমার পোস্টারও পুড়িয়েছিলেন তারা। ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ভারতীয় সিনেমা 'ওয়ান্টেড'। সিনেমাটি সে সময় আমদানি করেছিল 'ইনউইন এন্টারপ্রাইজ'। এ সিনেমা ছাড়াও সে সময় 'থ্রি ইডিয়টস', 'তারে জমিন পার' ও 'ধুম থ্রি' মুক্তি পেয়েছিল। এরপর এসব ছবি বন্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের ব্যানারে ঢাকাই সিনেমার নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা মানববন্ধন করেন। একপর্যায় তোপের মুখে পড়ে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ রাখা হয়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। আগেরবার যারা কফিনের কাপড় পরে আন্দোলনে নেমেছিলেন হিন্দি সিনেমার বিরুদ্ধে। তারাই এবার সম্মতি দিচ্ছেন এসব সিনেমা প্রদর্শনের জন্য। এর মধ্যে অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা যখন আন্দোলন করেছিলাম তখনকার প্রেক্ষাপট ঠিক ছিল। এখন যেটা করছি সেটাও আন্দোলনের অংশ। আমরা চাই সিনেমা হলের সংস্কার হোক। নতুন সিনেমা হল তৈরি হোক। ১৪০০ সিনেমা হল থেকে এখন ১০০টি সিনেমা হলও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ৯ মাসে আমাদের সিনেমা তৈরি হয়নি। তাহলে হল কি দিয়ে চলবে? সিনেমা হল না থাকলে আমরাও সিনেমা বানাতে পারব না। প্রযোজকরাও সিনেমা বানাবে না। সে কারণে আমরা বলেছি সীমিত আকারে কতগুলো বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে বলিউডের সিনেমা মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।' তবে সিনেমাগুলো একযোগে মুক্তি পাবে নাকে পরে, সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ বিষয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'করোনার আগেও আমাদের এখানে ভালো সিনেমার সংকট ছিল। আর করোনার পর তো অবস্থা আরও খারাপ। অনেক আশা করে হল চালু করা হলো। কিন্তু কেউই সিনেমা মুক্তি দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সারা বিশ্বেই এখন করোনাকে মোকাবিলা করেই হলে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে সবাই নির্মাণ শেষ করেও ঘরে সাজিয়ে রেখেছেন। তারা ভাবছেন না সিনেমা না থাকলে হল চলবে কি করে? তাই অবস্থা বিবেচনা করে বলিউডের সিনেমা আমদানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের কনটেন্ট সংকট, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা সারা দেশের হল মালিকরা একমত হয়েছি, আমরা ভারতের ছবি নিয়ে আসব।'

তবে বিষয়টি আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির উপর ব্যাপক হারে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। তাদের মতে দর্শক খরা ও দেশীয় সিনেমার সংকট কাটানোর জন্য বিদেশি সিনেমা চালালে গুটিকয়েক মানুষ ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবেন। এতে দেশীয় সিনেমার আমূল পরিবর্তন হবে না। বিদেশি ছবি চললে বিদেশি ছবিরই দর্শক তৈরি হবে। দেশি সিনেমার দর্শক আরও হারাবে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উচিত, বিদেশি সিনেমা না এনে দেশীয় সিনেমার প্রতি আরও নজর দেওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে