‘বতর্মান যুগ হীরকময় হওয়া উচিত ছিল’

দেশি চলচ্চিত্রে আশির দশকের শক্তিশালী অভিনেতা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল। প্রথম চলচ্চিত্র সুভাষ দত্তের ‘বিনিময়’। এরপর অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সম্প্রতি ‘শাহেনশাহ’ চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন গুণী এই অভিনেতা। সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আকাশ নিবির

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল
বতর্মানে ... সম্প্রতি তরুণ পরিচালক শামীম আহমেদ রনির ‘শাহেনশাহ’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এ ছবির প্রস্তুতি নিয়েই ব্যস্ত আছি। এর বাইরে অভিনয় নিয়ে তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। তবে আরও কয়েকটি ছবিতে কাজের ব্যাপারে কথা চলছে। গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই তাতে অভিনয় করব। আসলে আমার তো বয়স হয়েছে। তাই খুব বেশি ব্যস্ত থাকা সম্ভব না। তবে শুরু থেকে এখন পযর্ন্ত টিকে আছি, এটি সব থেকে বড় ব্যাপার। অভিনয়ের বাইরে নানা রাজনৈতিক কমর্কাÐে জড়িত আছি। একাল-সেকাল ... চলচ্চিত্রের দশর্ক, কলাকুশলী, সংশ্লিষ্টসহ অনেকেই বলে আমাদের সময় নাকি স্বণাির্ল যুগ ছিল। আমার মতে, তখন তো আমরা এত ভালো সুবিধা পেতাম না। অনেক কষ্ট করে আমাদের কাজগুলো করতে হতো। আর বতর্মান তো সোস্যাল মিডিয়া আর ইন্টারনেটের যুগ। গুগলে এক মিনিটেই সব খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের যুগ যদি স্বণাির্ল হয়, তাহলে তো বতর্মান যুগ হীরকময় হওয়া দরকার ছিল। কেন হচ্ছে না? এজন্য সব শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, বিনোদন সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে সমাস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। প্রথম ছবির অভিজ্ঞতা ... যখন প্রথম ছবিতে অভিনয় করি তখন চলচ্চিত্রের বিষয়াদি কিছুই জানতাম না। সুভাষ দত্তের মতো বড় মাপের পরিচালকের সামনে গিয়ে কথা বলব ভেবেই ভয় পেতাম। প্রথম দিন শুটিং ছিল রাঙামাটির বিশাল উঁচু পাহাড়ে। সবাই নিচে থেকে আমাকে জোরে কোনো আওয়াজ দেবে। সেটি শোনার পর আমাকে শট দিতে হবে। কিন্তু আমাকে এত উপরে উঠিয়ে দেওয়া হয় যে নিচ থেকে কাউকে দেখা বা কোনো শব্দই শুনতে পাচ্ছিলাম না। তাই ভয়টা আরও বেড়ে যায়। তখন তো রিলে শুট করা হতো। শুধু এটা মনে ছিল একবার ভুল হলে কখনও ছবিতে কেউ কাজ দেবে না। আমি শট দিচ্ছিলাম না বলে এক পযাের্য় পরিচালক ও তার সব প্রোডাকশনের লোক চিল্লানো শুরু করেন। পরে আমি শট দিই। প্রথম ছবিতে না বুঝেই কাজ করলেও তা সুপারহিট হয়। পরে কাজ আর কাজ। সবচেয়ে স্মরণীয় দিন ... অনেক আগের কথা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএম হলে থাকাকালে মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তখন চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের ‘বিনিময়’ ছবির জন্য একজন নায়ক খুঁজছিলেন। পরিচিত একজন পরিচালকের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করে দেন। তিনি আমাকে দেখেই পছন্দ করেন। ওই দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। অভিনয়জীবনে অপ্রাপ্তি ... মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো কিছু পেতে আমি চলচ্চিত্রে আসিনি। তবুও নামডাক, অথির্বত্ত সবই পেয়েছি। তাই অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই। তবে একটি বিষয় খুব কষ্ট দেয় আমাকে। আর তা হলো- আগের মতো চলচ্চিত্রে তেমন আর সাড়া নেই। ভেতরে ভেতরে অনেক রাজনীতি। আমাদের সময় বছরে ১১০ থেকে ১২০টি দেশি ছবি রিলিজ হতো। এখন হয় ৪০ থেকে ৪৫টা ছবি। তখন সিনেমা হলের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০, এখন বড় জোর ৩০০ থেকে ৩২০টিতে নেমে এসেছে। চলচ্চিত্র শিল্পী উন্নয়নে করণীয় ... প্রথমে সরকারিভাবে আগে প্রেক্ষাগৃহ বাড়াতে হবে। এফডিসিতে সেন্ট্রাল সাভার্র বসাতে হবে। অনেক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে দশর্কদের আকৃষ্ট করতে হবে। আমার বিশ্বাস এবং মনেপ্রাণে প্রত্যাশা করি, চলচ্চিত্রের সংকট কেটে যাবে। সেগুলো না করে এখন সবাই আড্ডাবাজিতে মগ্ন। নিজেকে গা ভাসিয়ে দিলে হবে না। নিজেকে শক্তিশালীভাবে তৈরি করে টিকে থাকতে হবে। এফডিসি নিয়ে স্মৃতি ... এফডিসি নিয়ে স্মৃতির শেষ নেই। আসলে এফডিসির প্রতিটি ইট, বালুতে আমার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। একসময় এই এফডিসির প্রতিটি ফ্লোরে, প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আমার অবাধ বিচরণ ছিল। এই দেশের চলচ্চিত্রে অনেক গুণী মানুষ রয়েছেন। বিশ্বাস আমার তাদের সংস্পশের্ আসার সুযোগ পেলে আমাদের একটা মজবুত প্রজন্ম গড়ে উঠবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ... যতদিন বেঁচে আছি ততদিন চলচ্চিত্রের সঙ্গেই থাকব। ভবিষ্যতে হয়তো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকব। বতর্মানে একটি রাজনৈতিক দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত আছি। আমার কাছে মানুষের যেমন প্রত্যাশা, তেমনটি প্রত্যাশা আমারও। সবাই আমার ও পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। যেন আল্লাহর রহমতে ভালো থাকতে পারি।