শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গুরুত্ব কমছে তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমার!

মাসুদুর রহমান
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

বিগত কয়েক বছর ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হলেও এবার সেই বিতর্ক নেই। তবে কানাঘুষা শুরু হয়েছে তথাকথিত বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র নিয়ে। গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকায় অ্যাকশন, নাচ-গানে সর্বস্ব সিনেমার প্রাধান্য থাকলেও ২০১৯ সালে জায়গা করে নিয়েছে মনস্তাত্ত্বিক কিংবা তথাকথিত বিকল্প ধারার সিনেমাগুলো। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক ছবির বাইরে ভিন্ন ধারার সিনেমার গুরুত্ব বেড়েছে। গুণী নির্মাতা ও সময়ের আলোচিত তারকারাও এসব ছবিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে কী তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমার কদর কমে যাচ্ছে? এ নিয়ে কথা হয় এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্যদের এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ সালের জুরি বোর্ডের সদস্য ও ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নিজামুল কবির বলেন, 'বোর্ডের সদস্যদের বিচার-বিশ্লেষণে এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনেক ভালো হয়েছে। বাণিজ্যিক কিংবা ভিন্ন ধারা বলতে কোনো ছবিকে মূল্যায়ন করা হয়নি। সব ছবিকে একইভাবে বিচার করা হয়েছে। যার অভিনয় সবচেয়ে ভালো হয়েছে তিনিই সেরা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়েছেন। জাহিদ হাসান অভিনয়ের কারণেই সেরা খলচরিত্রের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন। একইভাবে যে ছবির গল্প, নির্মাণশৈলী ভালো হয়েছে সেটা শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রতিটি ক্যাটাগরিতেই তাই হয়েছে।'

তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমার চেয়ে এখন ভিন্ন কিংবা বিকল্প ধারার ছবিই বেশি নির্মাণ হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, 'সহস্রাধিক সিনেমা হল এখন ৭০-৮০তে নেমে এসেছে। হলে দর্শক নেই। নতুন ছবির সংকট। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা ভালো যাচ্ছে না এ কথায় সবাই একমত। চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে ভিন্ন চিন্তা করছেন অনেকেই। তারই ফলশ্রম্নতিতে অনেক নির্মাতা তাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, দর্শকদের সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনতে ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন।'

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ সালের জুরি বোর্ডের সদস্য ও চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার একটি বড় পুরস্কার। এটা সবার ভাগ্যে হয় না। যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই অর্জন হয়। এবারের যে প্রজ্ঞাপন হয়েছে সেটা অনেক ভালো হয়েছে। জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমি বলব সবচেয়ে ভালো কাজের মূল্যায়ন করা হয়েছে। কমার্শিয়াল কিংবা আর্টফিল্ম বলে কোনো বাচ-বিছার করা হয়নি এবং কমার্শিয়াল-আর্টফিল্ম বলতে কোনো ক্যাটাগরিও নেই। যেসব ছবিগুলো জমা পড়েছে সেখান থেকে যে ছবিটি সবচেয়ে ভালো হয়েছে সেটাই সেরা হয়েছে। একইভাবে যার অভিনয়, নির্মাণ, গল্প সব ক্যাটাগরিতে একইভাবে গুণগত মানের বিচার করেছি আমরা।'

অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস বলেন, 'ছবি ভিন্ন ধারার হয় না। সব ছবিই এক- আমার কাছে এটাই মনে হয়। তবে কে কীভাবে বানাবে সেটা তার ব্যাপার। এই ধারণা নিয়েই সারা পৃথিবীতে ছবি নির্মাণ হচ্ছে। আগের মতো ছবি এখন পাই না। তবে এখনও কিছু কিছু ছবি ভালো হচ্ছে। যে ছবিগুলো ভালো হয়েছে, যার অভিনয় জুরি বোর্ডের সদস্যদের ভালো লেগেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য সে ছবি, সে অভিনয়শিল্পী বিজয়ী হয়েছেন। এখনকার অনেক বাণিজ্যিক ছবির চেয়ে আর্টফিল্মগুলো ভিন্ন চিন্তায় নির্মিত হয়।'

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'খাপ ছাড়া গল্প, অযৌক্তিক অ্যাকশন, অভিনয়-সংলাপ, অপ্রয়োজনীয় নাচ-গান দর্শক চান না। দর্শক ভালো কিছু চান। ভিন্ন স্বাদ। তাই বাণিজ্যিক ছবির দর্শক কমছে। ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে সবার আগ্রহ বাড়ছে। এসব ছবি বানাতে খরচও কম লাগে। কম বাজেটই একটি সুন্দর আর্টফিল্ম বানানো সম্ভব। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ছবি বানাতে প্রচুর টাকা লাগে। বাজেট ভালো না হলে একটি বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ করা যায় না। বেশি বাজেটে ছবি নির্মাণ কজন করতে পারে। সব মিলিয়ে আমাদের দেশে এখন ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের গুরুত্ব বাড়ছে। অপরদিকে বাণিজ্যিক ছবি বাজার হারাচ্ছে। সেই হিসেবে এবার হয়তো জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরস্কারের জন্য বাণিজ্যিক ছবি কম জমা পড়েছিল। যা জমা পড়েছে তা ভালো লাগেনি জুরি বোর্ডের।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে