শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কতটা এগোচ্ছে অনুদানের চলচ্চিত্র?

মাসুদুর রহমান
  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
'ভালোবাসার প্রীতিলতা' চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে নুসরাত ইমরোজ তিশা

সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের দু'বছর অন্তর অন্তর বিশেষ অনুদান দিয়ে আসছে সরকার। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট একটা সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ নির্মাতাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করে সরকারের ঘরে জমা দিতে পারেন না। কোনো কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে ১০-২০ বছর লেগে যায়। কোনোটি আবার আলোর মুখই দেখে না। প্রতি বছরের মতো ২০১৯-২০ অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি, শিশুতোষ দুটি, সাধারণ শাখায় ১১টিসহ মোট ১৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও নয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ নিয়ে ২৫ জুন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি চলচ্চিত্র শুটিং শুরু করলেও প্রজ্ঞাপন জারির ৬ মাস পার হয়ে গেলেও বাকি চলচ্চিত্র এখনো রয়েছে শুটিংয়ের বাইরে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অন্যতম চলচ্চিত্র 'ভালোবাসার প্রীতিলতা'। স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য চট্টগ্রামের বিপস্নবীদের যে বিস্ময়কর ও সাহসিকতাপূর্ণ অভু্যত্থান ঘটেছিল সেই ইতিহাসকে ধারণ করে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস 'ভালোবাসা প্রীতিলতা' অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন প্রদীপ ঘোষ। এ চলচ্চিত্রে বীরকন্যা প্রীতিলতার চরিত্রে অভিনয় করছেন আলোচিত অভিনেত্রী নূসরাত ইমরোজ তিশা। বিপস্নবী রামকৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন মনোজ প্রামাণিক। অক্টোবরের মাঝামাঝির দিকে প্রথম লটের শুটিংয়ের পর ১৩ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা আরমানিটোলা ও বকশি বাজারের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে দ্বিতীয় লটের শুটিং হয়েছে। এরপর নভেম্বরের শেষদিকে শুটিং হয় তৃতীয় লটের। এই লটে ইউরোপিয়ান ক্লাব, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু এলাকায় শুটিং হয়। এ ছবির শুটিং প্রায় শেষদিকে। চলতি মাসের মধ্যেই এর দৃশ্যধারণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

অপু বিশ্বাস ও নিরব জুটির সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র 'ছায়াবৃক্ষ'। তানভীর আহমেদের চিত্রনাট্যে এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন বন্ধন বিশ্বাস। এর শুটিং শুরু হয় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ইতোমধ্যে ছবির প্রায় ৪০ শতাংশ শুটিং শেষ হয়েছে। ১ মার্চ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে শুটিং শুরু হচ্ছে 'ফিরে দেখা' চলচ্চিত্রের। এটি পরিচালনা করছেন চিত্রনায়িকা রোজিনা। অনুদানপ্রাপ্ত এ ছবির কাজ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুটিং শুরুর কথা থাকলেও ওই এলাকায় নির্বাচন থাকার কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। শুটিংয়ের আগে এর গান নিয়ে কাজ করেন রোজিনা। এ চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন রোজিনা। অভিনয় করবেন ইলিয়াস কাঞ্চন, নিরব প্রমুখ। রোজিনা বলেন, 'আসলে আমার সিনেমাটি ১৯৭১ সালে চোখে দেখা সত্য ঘটনা অবলম্ব্বনে নির্মিত হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এর প্রেক্ষাপট। আমি সেখানেই শুটিং শুরু করতে চাই আসছে মার্চ থেকে। কাজ আগেই শুরু করতাম, কিন্তু এর মধ্যে দেশের বাইরে লম্বা সময়ের জন্য থাকতে হয়েছে আমাকে। এসে জানতে পারি শুটিং এলাকায় নির্বাচনী আবহাওয়া। সেটি শেষ না হলে কাজ করাটা ঠিক হবে না। তাই দেরি হলো।'

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়া 'আশীর্বাদ' চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হয় ২৭ সেপ্টেম্ব্বর পুরান ঢাকায় সূত্রাপুরে। এর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। 'আশীর্বাদ' সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও জিয়াউল রোশান। এটি হতে যাচ্ছে এই জুটির প্রথম সিনেমা। এতে আরও অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, সীমান্ত প্রমুখ। সত্তর দশকের ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি ধাপে সিনেমার গল্প সাজানো হয়েছে। পর্দায় তরুণ ও বৃদ্ধ দুই বয়সে মাহিকে দেখা যাবে। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনার পাশাপাশি এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তাহেরা ফেরদৌস জেনিফার। সংলাপ লিখেছেন আব্দুলস্নাহ জহির বাবু।

ইস্পাহানি আরিফ জাহানের 'হৃদিতা'। অনুদানের জন্য নির্বাচিত হলেও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এ চলচ্চিত্রের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সিনেমাটির নির্মাতাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাদুকাঠি মিডিয়ার কর্ণধার মো. মিজানুর রহমান এই নোটিশ পাঠান। জানা যায়, ২৪ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ই-মেইলে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অনিয়ম এবং অনুদানের শর্ত ও নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনুদান বাতিল ও শুটিংসহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে। ২৩ জুলাই আলোচিত চিত্রনায়ক এবিএম সুমন ও চিত্রনায়িকা পূজা চেরি এ চলচ্চিত্রে সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।

গিয়াস উদ্দিন সেলিমের 'কাজলরেখা' চলচ্চিত্রটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অনুদান পায়। মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে এর গল্প তৈরি। নির্মাতার ১০ বছরের পরিকল্পনার এ চলচ্চিত্রের শুটিং এখনো শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তারও নির্দিষ্ট কোনো দিন তারিখ বলতে পারেননি পরিচালক। পরিচালক সেলিম বলেন, 'এখনো এ চলচ্চিত্রের কোনো খবর নেই। কবে শুরু করব তাও কিছু বলতে পারছি না। চলচ্চিত্রটির জন্য ৫০০ বছর আগের সময়ে ফিরে যেতে হবে আমাকে। লোকেশন, আবহ?সব সে সময়ের জন্য তৈরি করতে হবে। মৈমনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখার যে পালা আছে, সেখান থেকেই ছবির গল্প। ফলে কাজটি বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।' জানা যায়, ৫০০ বছর আগে ৯ বছর বয়স হলেই সমাজের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে দিতে হতো। কাজল রেখার বয়স যখন ৯ হয়, তখন এক নতুন গল্প তৈরি হয়। সেটিই উঠে আসবে সেলিমের এবারের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায়।

মুশফিকুর রহমান গুলজারের 'টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী' চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হবে আগামী ফেব্রম্নয়ারি থেকে। গুলজার বলেন, 'করোনার কারণে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেকদিন শুটিং বন্ধ ছিল। শুটিং শুরু হওয়ার পরও অনেকে ক্যামেরা অপেন করতে পারেননি নানা কারণে। আমি 'টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী' চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু করব ফেব্রম্নয়ারি থেকে।' এই পরিচালক বলেন, 'প্রথমবার অর্থ দেওয়ার পর থেকেই সময় হিসাব করা হয়। ৯ মাস সময় বেঁধে দিলেও নানা কারণে এ সময়ের মধ্যে শেষ করা যায় না। সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে সময় মন্ত্রণালয় সময় বাড়িয়ে দেয়। এবার করোনার কারণে সময় বাড়ানোর কথা।' গত ৬ মাসেও শুটিং শুরু হয়নি ইফতেখার আলম পরিচালিত 'লেখক' চলচ্চিত্রের। খবর নেই মনজুরুল ইসলামের 'বিলডাকিনী' চলচ্চিত্রের। একই অবস্থা ফজলুল কবীর তুহিনের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'গাঙকুমারী' চলচ্চিত্রের।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি চলচ্চিত্র-পংকজ পালিতের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'একটি না বলা গল্প', অনম বিশ্বাসের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'ফুটবল ৭১' এসএ হক অলিকের 'যোদ্ধা' চলচ্চিত্রের শুটিং আদৌ শুরু হয়নি। অনেকটা অনিশ্চয়তায় শিশুতোষ দুই চলচ্চিত্র-আমিনুল হাসান লিটুর প্রযোজনা ও আউয়াল রেজার পরিচালনায় 'মেঘ রোদ্দুর খেলা' ও নুরে আলমের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'রাসেলের জন্য অপেক্ষা'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে