শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পারিশ্রমিক বাড়াচ্ছেন চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীরা

কী বলছেন সিনিয়র তারকারা!

মাসুদুর রহমান
  ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

চাহিদাসম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনায় নাট্যাঙ্গন অচল হয়ে পড়ার পর নতুন করে যখন নির্মাতারা নাটক নির্মাণে ব্যস্ত হচ্ছেন, তখনই নতুন বছরের শুরুতে বেশ কয়েকজন শিল্পী তাদের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে টেলিপাড়ায়। একদিকে নাটকের বাজেট কমছে, আর অন্যদিকে শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না নাট্যাঙ্গনের অনেকেই। একে কান্ডজ্ঞানহীন, দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে নাট্যজন ড. ইনামুল হক বলেন, 'খবরটি আমি শুনেছি। যেহেতু অনেকেই অভিনয়টা এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, তাই সময়ের ব্যবধানে, যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন শিল্পী তার পারিশ্রমিকও বাড়াতে পারেন। তবে সেটা বাস্তবতার আলোকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। শুধু নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অবাস্তব দাবি করা অন্যায় হবে। শিল্পী হিসেবে দায়বদ্ধতা থাকলে কেউ অযাচিত ডিমান্ড দাবি করতে পারেন না। এখন যারা নায়ক-নায়িকা, এক সময় তারাও কিন্তু বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন। তখন কিন্তু এই পারিশ্রমিক পাবেন না। এখন চাহিদা আছে বলেই অস্বাভাবিক পারিশ্রমিক চাওয়া ঠিক না। কারণ আমাদের নাটকের বাজেট কম। এই অল্প বাজেটের বেশির ভাগ যদি নায়ক-নায়িকার পেছনে খরচ হয়ে যায় তাহলে বাকি অর্থ দিয়ে নাটকের অন্যান্য কাজ কতটুকু মানসম্মত হবে? নাটকের অন্য চরিত্রের শিল্পীরা কেমন পারিশ্রমিক পাবেন? এজন্য নাটকের পার্শ্বচরিত্র কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের নাটক ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এজন্য মিডিয়ার এক শ্রেণির লোকই দায়ী। তারাই নির্দিষ্ট কিছু শিল্পী দিয়ে কাজ করিয়ে অন্য শিল্পীদের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছেন। তারকা শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় হতে, নিজেদের সংস্কৃতিমনা বলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে শিল্প-সংস্কৃতির গুরুত্ব না বুঝে কিছু লোক অর্থের প্রভাবে নাটক প্রযোজনা করছেন। এটা আমাদের নাটকের জন্য হুমকি।'

নির্মাতা ও ডিরেক্টরস গিল্ডসের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, 'শিল্পীদের স্বঘোষিত পারিশ্রমিক মেনে নিতে পারছি না। দিন দিন নাটকের বাজেট কমছে, সেখানে কীভাবে তারা পারিশ্রমিক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। করোনার এই সময়ে বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা পারিশ্রমিক কমিয়েছেন। আমাদের শিল্পীদের চিত্র তার বিপরীতমুখী।' তিনি আরও বলেন, 'একটি নাটকের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত থাকেন। কারও পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে না, শুধু অভিনয়শিল্পীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা কোনোমতেই যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে না। শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবলেই তো হবে না। পারিশ্রমিক বৃদ্ধির বিষয়টি বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে একধরনের ক্রাইম।'

শিগগিরই এ বিষয়ে গিল্ডস সিদ্ধান্ত নেবে উলেস্নখ করে এ নির্মাতা জানান, ডিরেক্টরস গিল্ডসের সাধারণ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে অনেকেই কথা বলেছেন, শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রত্যেক শিল্পীর মিডিয়ার প্রতি দায়বদ্ধ থাকা উচিত। লাভলু বলেন, শিল্পের প্রতি যার দায়বদ্ধতা নেই, সে যা খুশি তাই করতে পারে। এটি কিন্তু ঠিক না। একটা ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে ভাবতে হবে। আমাদের এখনো অনেক কিছু অনিয়মের মধ্য চলছ। এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, 'চাহিদা থাকলে পারিশ্রমিক আপনা আপনি বেড়ে যায়। শিল্পীদের নিজে পারিশ্রমিক নির্ধারণ না করাই ভালো। কোনো শিল্পী যদি বছরে বছরে পারিশ্রমিক বাড়ান, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। অযাচিতভাবে নিজেদের পারিশ্রমিক বাড়ানোকে আমি নিন্দা জানাই।'

অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, 'চাহিদানুযায়ী একজন শিল্পী পারশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের সব দেশেই তারকার সম্মানিনির্ভর করে তার গুরুত্ব-চাহিদানুযায়ী। এমনও হয় একজন শিল্পীর পেছনে টাকা নিয়ে ঘুরেও শিডিউল পান না পরিচালক আবার কেউ কেউ কম পারিশ্রমিকেও কাজ পান না। চাহিদানুযায়ী একজন শিল্পী তার পারিশ্রমিক বাড়াতে পারেন তবে সেটার ভারসাম্য থাকা দরকার। টিভি নাটকে এক ধরনের এজেন্সি কাজ করছে। তাদের কারণে কারও পারিশ্রমিক বাড়ে-কারও কমে। আবার কেউ কেউ কাজের সুযোগ পান না। তাদের কারণে আমাদের নাটক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ফলে নাটক থেকে পার্শ্বচরিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। পারিশ্রমিক কমিয়েও পার্শ্বচরিত্রের শিল্পীরা অনেক সময় কাজ পান না। বলা হয় নাটক সামাজিক সময়ের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু নাটক থেকে যদি সমাজের শিক্ষক, মাতব্বর, মামা-চাচা, ভাবি-বড় বোন, কাজের লোকদের মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো না থাকে তাহলে সমাজের কথা-পরিবারের কথা নাটকে উঠে আসবে কী করে?'

টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, 'এখনো প্রতিদিন নাটকের বাজেট কমছে। সেখানে কিছু মানুষের কারণে তারকাদের বাজেট বাড়ায় আমরা হতাশ।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিশ্রমিক বাড়ানোর তালিকায় অপূর্ব, মোশাররফ করিম, আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব, জোভান, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফা কবির, মিশু সাব্বির, শামীম হাসান সরকারসহ অনেকের নাম রয়েছে। ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার পর্যন্ত পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে