কালজয়ী জুটি

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার
বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন। ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অসংখ্য জুটির আর্বিভাব হলেও তাদের পেছনে ফেলতে পারেনি, ভবিষ্যতেও হবে কি না তা সন্দিহান। আজও তারা উজ্জ্বল হয়ে আছেন বাংলা চলচ্চিত্রে। উত্তম-সুচিত্রা জুটি বেঁধে দর্শককে উপহার দিয়েছেন ৩০টিরও অধিক চলচ্চিত্র যার প্রায় সবগুলোই সিনেমার ব্যবসায়িক মানদন্ডে 'সুপারহিট'। পঞ্চাশ-ষাট ও সত্তর এই তিন দশক রুপালি পর্দায় তো ছিলেনই, স্যাটেলাইট টেলিভিশন আর ভিডিও প্রযুক্তির কল্যাণে উত্তম-সুচিত্রা জুটি জনপ্রিয় পরের প্রজন্মগুলোর কাছেও। রোমান্টিকতায় ভরপুর এ জুটি বাঙালিকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে ভালোবাসতে হয়। কীভাবে রোমান্টিক বাতাবরণ তৈরি করে উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিতে হয় সবাইকে। দুজনেই পরলোকে গেলেও এতটুকু জনপ্রিয়তা কমেনি এ কালজয়ী জুটির। যত দিন বাঙালি থাকবে, বাংলা চলচ্চিত্র থাকবে, তত দিনই এই জুটি অমর হয়েই থাকবেন। উত্তম-সুচিত্রা জুটি রুপালি পর্দার এমনই এক প্রেমিক-যুগল, যা চিরদিনের। এই জুটির পঞ্চাশের দশকের কোনো ছবির একটি রোমান্টিক দৃশ্য দেখলেও আজকের প্রেমিক হৃদয়ে তোলপাড় ওঠে। তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিটি সংলাপ যেন কাল অতিক্রম করে চলে গেছে বহুদূর। আজকের স্মার্টফোন অ্যাপিস্নকেশনস কিংবা কম্পিউটার প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার যুগেও উত্তম-সুচিত্রার রসায়ন তরুণ প্রজন্মকে মুগ্ধ করে। উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম হিট ছবি 'সাড়ে চুয়াত্তর'। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া হাসির এ ছবিটিতে উত্তম কুমার কিংবা সুচিত্রা সেন কেউই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি। এ ছবিটি যখন মুক্তি পায়, তখন ছাপানো পোস্টারে উত্তম-সুচিত্রার কোনো পাত্তাই ছিল না। ছবির প্রদর্শকরা ব্যবসায়িক মানদন্ডে চরিত্রাভিনেতা তুলসী চক্রবর্ত্তীকে পোস্টারের প্রধান মুখ বানিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটিতে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক অভিনয় বাংলা সিনেমার জগতে যেন এক প্রলয়ের ডাক দিয়ে যায়। একটি চমৎকার রোমান্টিক জুটির জন্য হাপিত্যেশ করে ফেরা কলকাতার চলচ্চিত্রশিল্প যেন পেয়ে যায় এক কোরামিন। যে কোরামিন কলকাতার চলচ্চিত্রশিল্পকে স্বর্ণ সময়ে প্রবেশ করায়। এরপর 'পথে হলো দেরী', 'মরণের পর', 'শাপমোচন', 'শিল্পী', 'সাগরিকা', 'হারানো সুর', 'সবার উপরে', 'সূর্যতোরণ', 'চাওয়া-পাওয়া', 'সপ্তপদী', 'জীবনতৃষ্ণা', 'রাজলক্ষ্ণী', 'শ্রীকান্ত', 'ইন্দ্রাণী', 'চন্দ্রনাথ', 'আলো আমার আলো'র মতো ৩০টির বেশি ছবিতে এই জুটি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে চলচ্চিত্রে রোমান্টিসিজমের ধারাটাই পাল্টে দেন সম্পূর্ণরূপে। হয়ে যান নারী-পুরুষের সম্পর্কের রোমান্টিকতার ধারণায় বাঙালির চিরকালীন এক আইকন। রোমান্টিক জুটি হিসেবে উত্তম-সুচিত্রা নিজেদের নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক জগতে। তাদের জনপ্রিয়তা ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনায় আজও কোনো ক্লান্তি আসার কথা নয়। সুচিত্রার পোশাক অনুকরণ করতেন সেকালের যুবতীরা প্রায় সবাই। তার শাড়ি পরা কিংবা চুল বাঁধার কেতা ছিল সেই সময়ে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কলকাতা, ঢাকার বাঙালি সমাজে অভিজাত্য ও ফ্যাশন-সচেতনতার প্রতীক। উত্তম কুমারের চুলের কেতাও অনুকরণীয় ছিল যুবকদের মধ্যে। তার শার্টের কলার কেমন ধাঁচের কিংবা তার সু্যটের কাটিং সবই ছিল অনুকরণীয়। উত্তম-সুচিত্রার পোশাক-পরিচ্ছেদ এতটাই আধুনিক ও কালোত্তীর্ণ যে এই প্রজন্ম মনে করে সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমারের হাতে একটি মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ কিংবা একটি আইপ্যাড না থাকাটাই যা একটু অপূর্ণতা। এই আধুনিক গ্যাজেটগুলো ছাড়া উত্তম-সুচিত্রা চিরকালীন ও সর্বকালের একটি ব্যাপার। উত্তম কুমার তার জীবদ্দশায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না। এ আমার বিশ্বাস। আজ আমি উত্তম কুমার হয়েছি কেবল ওর জন্য।'