শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পপ সংগীতের প্রচারক জানে আলম আর নেই

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৪ মার্চ ২০২১, ০০:০০
জানে আলম

একের পর এক প্রথিতযশা শিল্পীর মৃতু্যতে ক্রমশ শূন্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের শোবিজ অঙ্গন। গত বছর অনেক নামিদামি ও খ্যাতিমান শিল্পীকে আমরা হারিয়েছি। নতুন বছরের শুরুটাও হয়েছে মৃতু্য দিয়েই। বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের পর এবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন আরেক গুণী কণ্ঠশিল্পী জানে আলম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

খবরটি নিশ্চিত করেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি চয়েসের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম সোহেল। তিনি জানান, এক মাস আগে জানে আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর করোনা নেগেটিভ হলেও নিউমোনিয়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন। এর জন্য গেল এক মাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সোহেল বলেন, 'অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার জানে আলম ভাইকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আলম ভাই আমাদের একা ফেলে চলে গেলেন। সারাক্ষণ হাসিখুশি মানুষটা এভাবে হুট করে চলে যাবেন, ভাবতেও পারছি না।' এদিকে সংগীত প্রযোজকদের সংগঠন এমআইবির মহাসচিব এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু জানান, বুধবার মগবাজার জানে আলমের বাসভবন এলাকায় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জন্মস্থান মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে চির শায়িত হন এই নন্দিত শিল্পী।

পাপ্পু বলেন, 'করোনা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে ভাবি (জানে আলমের স্ত্রী) মারা গেলেন। এখন ভাই নিজেই করোনার আঘাতে চলে গেলেন। তাদের দুটো ছেলে অল্প সময়ের মধ্যে এতিম হয়ে গেল। সাংগঠনিকভাবে আলম ভাই ও তার পরিবারের পাশে আমরা সব সময় ছিলাম, এখনো আছি। আলম ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি।'

জানে আলম শুধু কণ্ঠশিল্পীই নন, তিনি একজন সুরকার, গীতিকার, প্রযোজকও ছিলেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম দোয়েল প্রোডাক্টস।

পপ ও ফোকের মিশ্রণে তৈরি গান করে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান ৭০'র দশকে। ঢাকা রেকর্ডস থেকে প্রকাশিত প্রথম অ্যালবাম 'বনমালী' দিয়ে তৈরি হয় বেশ পরিচিতি। তার গাওয়া বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে 'একটি গন্ধমের লাগিয়া', 'স্কুল খুইলাছেরে মাওলা', 'কালি ছাড়া কলমের মূল্য যে নাই', 'তুমি পিরিতি শিখাইয়া', 'দয়াল বাবা কেবলা কাবা' প্রভৃতি। জানে আলমের গাওয়া গানের সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। এছাড়া তার লেখা, সুরে রয়েছে প্রায় তিন হাজার গান। সত্তরের দশকে স্বাধীন বাংলাদেশে পপ গানের ৫ স্থপতি হিসেবে সমধিক পরিচিত- ফিরোজ সাঁই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, জানে আলম ও ফকির আলমগীর। যার মধ্যে এখন শুধু বেঁচে আছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ ও ফকির আলমগীর।

জানে আলমের মৃতু্যতে ফেরদৌস ওয়াহিদ

অন্যদিকে জানে আলমের মৃতু্যর খবরে শোকের মাতম দেশের সংগীতাঙ্গনে। ভেঙে পড়েছেন অনেক তারকা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অশ্রম্নসিক্ত নয়নে লম্বা স্মৃতিচারণ করলেন বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় সিনিয়র সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন যে যার মতো গাইবার চেষ্টা করছিলাম, ১৯৭২ সালের তেমনই এক ঘোরলাগা সন্ধ্যায় আমাদের পরিচয়। কারণ, আমরা তো মূলত একই পথের পথিক। আমাদের রক্তে বইছিল তখন পপ গানের স্রোত। অথচ 'আমাদের' জন্ম, গ্রাম, শিক্ষা, বেড়ে ওঠা- পুরো আলাদা আলাদা আবহে। এখানে আমি 'আমাদের' বলতে বোঝাচ্ছি- ফিরোজ সাঁই, আজম খান, আমি (ফেরদৌস ওয়াহিদ), জানে আলম আর ফকির আলমগীরের কথা। মানে যাদের সবাই বলে থাকেন বাংলা পপ গানের স্রষ্টা ও প্রচারক। এটা তো সত্যি, আমরা এই কজনই তখন সময় ও স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি গান দিয়ে। যেটি শেষে দাঁড়াল পপ গানে।

বলতে চাইছি, এই পাঁচ পপ শিল্পীর মধ্যে জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা ও ভাগ্য- কারও কম কারও বেশি। এটা তো স্বাভাবিক, না? ফিরোজ সাঁই তো গাইতে গাইতে সেই কবে মারাই গেলো। গানের ফসল আর ঘরে তুলতে পারলো না। আজম খানকে আমরা পপ গানের মুকুট বলি। এটাও একদম সত্যি। কিন্তু জানে আলমকে তো নাকচ করার সুযোগ নেই। সেও কম জনপ্রিয় ও কম যোগ্য নন। আমি নিজে তার অসংখ্য স্টেজ শো দেখেছি। তার জনপ্রিয়তাও বাঁধভাঙা। হতে পারে সুপারস্টার খ্যাতিটা জানে আলম পাননি। কারণ, তার পুরো জীবনটাই কেটেছে ডাউন টু আর্থ ওয়েতে। অথচ এই মানুষটাই করোনায় বিছানায় পড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত গানের জন্য কাজ করে গেছেন নিরন্তর। শুরু থেকেই নিজে যেমন গাইতেন তেমনি অন্যদের গাওয়ানোর জন্য হাসিমুখে জীবন দিয়ে দিতেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে