শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সা ক্ষা ৎ কা র

সিনেমার বহুমুখী ধারাটি থেমে গেছে

সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। তিনি ছিলেন লাক্স ফটো সুন্দরী ও মডেল। এরপর মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত 'কুলি' ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক। প্রথম ছবিতেই দর্শকের মন কেড়ে নিয়ে চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন করে নেন এ অভিনেত্রী। দেশের চলমান চলচ্চিত্রের অবস্থা নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে...
নতুনধারা
  ০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০
সাদিকা পারভীন পপি

দুরবস্থা আমাকে কষ্ট দেয়...

'কী বলবো, দেশের চলচ্চিত্রের চরম দুরবস্থা চলছে বর্তমানে। দেশের চলচ্চিত্র এখন স্থবির। চলচ্চিত্রের এখনকার দুরবস্থা আমাকে কষ্ট দেয়। কারণ, এই চলচ্চিত্রের জন্যই আমি আজকের পপি। যে সময়টায় চলচ্চিত্রে আমার যাত্রা শুরু, সে সময়ে সিনেমার গল্পে বৈচিত্র্য ছিল। বিভিন্ন ধরনের গল্পের সিনেমা নির্মিত হতো। আমি ভাগ্যবান, ওই সময়ে ভালো গল্পের সিনেমা দিয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল। দর্শক গ্রহণ করেছিল। কারণ, সে সময়কে ধারণ করে দর্শকের চাহিদা মতো সিনেমা নির্মাতারা নির্মাণ করেছেন। বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা অনেক শক্তিশালী ছিল।

আমাদের সময় বহুমুখী ধারা ছিল...

সময়ের সাথে সাথে এ ধারার পরিবর্তন হয়। একটি ধারার সিনেমা দেখতে দেখতে দর্শকের বিরক্তি সৃষ্টির আগেই তার পরিবর্তন ঘটিয়ে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতে হয়। সামাজিক, পারিবারিক, অ্যাকশন, রোমান্টিক ধারার গল্পের সাথে ফোক-ফ্যান্টাসি কিংবা কল্পিত ধারার থ্রিলিং গল্পের সংযোজন করতে হয়। আমার সময়ে সিনেমার এমন বহুমুখী ধারা ছিল। একটি ধারার সিনেমা না চললে নির্মাতারা আরেকটি ধারা ধরতেন। এভাবে ধারা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সিনেমা এগিয়েছে এবং দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছে। হঠাৎ করেই যেন সিনেমার এই বহুমুখী ধারাটি থেমে গেল। বলতে গেলে কোনো ধারাই বহমান থাকেনি।

বিচ্ছিন্নভাবে সিনেমা হচ্ছে...

বিশ্বের যেকোনো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেখানে একবার এক ধরনের সিনেমা নির্মাণ করে দর্শককে মাতিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাতারা ভিন্ন ধারার দিকে ধাবিত হয়। আমাদের দেশে এখন এ ধারাটি নেই। দর্শক উপযোগী সিনেমাও নেই, ধারাও নেই। প্রযুক্তির এ যুগে আমাদের নির্মাতারা তাল মেলাতে পারেননি। এখন আর প্রথাগত গল্প ও নির্মাণ দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে চলবে না।

দর্শক কেন সিনেমা দেখবেন...

সারাবিশ্বেই সিনেমার ধরন বদলে গেছে। এখন আমরা যদি সেই আগের চেনা-জানা গল্পের সিনেমা নির্মাণ করতে থাকি, তাহলে দর্শক গ্রহণ করবে কেন? প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব থাকলেও কিন্তু গল্পপ্রধান সিনেমা নির্মাণ করা অসম্ভব নয়। আমরা দেখেছি, কম বাজেটেও গল্পপ্রধান সিনেমা নির্মাণ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়। গল্প যখন নানা রহস্য আর উত্তেজনা নিয়ে এগিয়ে যায়, তখন দর্শকের অন্যদিকে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ থাকে না। সে গল্পের মধ্যে ঢুকে তার চরিত্রের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। মনে করে, সেও এই নিজেকে সিনেমার চরিত্র ভাবা শুরু করে। সিনেমা তো এমনই হওয়া উচিত।

দর্শকের চাহিদা ধরতে হবে...

দর্শক যদি সিনেমার গল্পের সাথে একাত্ম হতে না পারে কিংবা তাকে যদি একটি স্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে না দেওয়া যায়, তবে সে কেন সেই সিনেমা দেখবে? আমাদের নির্মাতাদের বর্তমান প্রজন্মের দর্শকের এই চাহিদা ধরতে হবে। যত বড় বাজেট হোক না কেন, তা দিয়ে প্রথাগত সিনেমা নির্মাণ করলে দর্শক গ্রহণ করবে না।

বসে থাকলে চলবে না...

আমাদের ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের উচিত হবে, সিনেমাকে কীভাবে জাগিয়ে তোলা যায়, এ পরিকল্পনা করা। বসে থাকলে হবে না। সিনেমা চলে না, হল নেই-এ অজুহাত বছরের পর বছর ধরে দিলে হবে না। একের পর এক দর্শক পছন্দের গল্প এবং সুনির্মিত সিনেমা হলে এমনিতেই বাজার চাঙা হয়ে উঠবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে