শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
মিলছে না উত্তর

শাকিব খানের পর কে?

মাসুদুর রহমান
  ০৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০

দেশীয় চলচ্চিত্রে নানা সংকট। গল্প, লোকেশন, মেধাবী পরিচালক ও আধুনিক সরঞ্জামাদিসহ অনেক সংকট। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজ করছে নায়ক সংকট। বলতে দ্বিধা নেই- বিশ্বের চলচ্চিত্র এখনো নায়ক নির্ভর। যদিও গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র নির্মাণের চল শুরু হয়েছে, তারপরও নায়ককেই ধরা হয় চলচ্চিত্রের প্রাণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলিউড ও হলিউডের অনেক নায়ককে ছাপিয়ে বর্তমান সময়টা নিজের করে নিয়েছেন অনেক নতুন নতুন নায়ক। বলিউডের খান সাম্রাজ্যেও ধস নামানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন ও রনভীর সিং, রনবীর কাপুররা। বদলে গেছে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের চালচিত্রও। বদলাচ্ছে না কেবল ঢালিউড তথা ঢাকাই ছবির প্রেক্ষাপট। নায়ক সংকট থেকে কোনোভাবেই মুক্ত হতে পারছেন না ঢাকাই চলচ্চিত্র। গত কয়েক বছরে অসংখ্য নায়ক এসেছেন, পুরনো মুখের পাশাপাশি এসেছে একঝাঁক নতুন মুখ। কিন্তু এখনো নির্মাতাদের আস্থা অর্জন করতে পারছেন না এসব নামসর্বস্ব নায়করা। ফলে চলচ্চিত্রে অনেকদিনের প্রশ্ন, শাকিব খানের পর কার অবস্থান? দীর্ঘদিন ধরেই এর উত্তর মেলেনি। এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় নয়, শাকিবের পর চতুর্থ অবস্থানে কে আছেন? আমতা আমতা করা ছাড়া এ প্রশ্নের সঠিক কোনো জবাব পাওয়া যাবে না।

যদিও এ সংকট দীর্ঘদিনের। সুপারস্টার ইলিয়াস কাঞ্চনের পর সালমান শাহ্‌, এরপর মান্না চলচ্চিত্রে একক নায়ক হিসেবে রাজত্ব করলেও সংকট দেখা দিয়েছে এরপর থেকে। ২০০৮ সালে মান্নার অকাল মৃতু্য আর রিয়াজের চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়ার পর থেকে মূলত এই সংকটের শুরু। মান্নার মৃতু্যর পর থেকে শাকিব খান একাই বইছেন নায়কের ভার। অন্য নায়ক থাকলেও পুরো ইন্ডাস্ট্রি এখন তার ওপরই নির্ভর করছে। প্রতি বছর নতুনদের অভিষেক হলেও গ্রহযোগ্যতা পাচ্ছে না দর্শক-নির্মাতা-প্রযোজকদের কাছে। আস্থা সংকটের কারণে নতুনদের অনেকেই পথ বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। নায়ক সংকট কাটাতে কয়েকবার 'নতুন মুখের সন্ধান' প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ছোটপর্দা থেকে বড় পর্দায় এসেও কেউ নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারছেন না। বছরের পর বছর ধরে এই ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে। নায়কের অভাবে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ঢালিউডে একক প্রভাব বিস্তার করে আছেন শাকিব খান। এই সময়ে অন্যদের থেকে একটু এগিয়ে থাকায় শীর্ষ নায়ক, সুপারস্টারসহ বিভিন্ন খেতাব নিয়ে চলচ্চিত্রে একক আধিপত্য চলছে তার। শাকিব খান ছাড়া চলচ্চিত্র এখন অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে।

বছরে যে কয়টি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে তার ৮০ শতাংশ চলচ্চিত্রেই নায়ক হিসেবে থাকছেন শাকিব খান। বাকি বিশ শতাংশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন অন্য নায়করা। বছরে দু-একটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র থাকলে তা শাকিব খানেরই। তিনি না চাইলেও পরিচালক-প্রযোজকরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তাকে ছাড়া বিকল্প চিন্তা করতে সাহস করেন না।

দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে থাকায় ইতোমধ্যে অনেকটা দক্ষ হয়ে উঠেছেন শাকিব খান। তার অভিনয়, সংলাপ, অ্যাকশান-সবকিছু দেখে এক শ্রেণির দর্শক মুগ্ধ হন। দর্শক মহলেও তার আলাদা গ্রহযোগ্যতা থাকায় সব নায়কের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে প্রেক্ষাগৃহে অপেক্ষকৃত দর্শক সমাগম বাড়ে। চলচ্চিত্রে তার গুরুত্ব এতটাই বেড়েছে যে, দেশের বিগ বাজেটের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে কাজ করেন। কলকাতার স্থানীয় চলচ্চিত্র থেকেও তার ডাক পড়ে। দেশের সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায় শাকিব খানের কদর বাড়লেও বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। বরং অনেকটা হুমকিই বলা যেতে পারে। কারণ শাকিব খানের পর মানসম্পন্ন নায়ক নেই দেশীয় চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে একক নয়, একাধিক মানসম্পন্ন নায়কের দরকার। একটা সময় যেমন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে ছিলেন রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, ফারুক, জসিম, ওয়াসীম। ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে তখন ভরপুর ছিল ইন্ডাস্ট্রি। দেশজুড়ে ছিল চলচ্চিত্রের রমরমা ব্যবসা। কিন্তু এখন চলচ্চিত্রে সেটা নেই। নায়ক সংকটের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে চলচ্চিত্রের সোনালি গৌরব। রাজ্জাক-আলমগীরদের যুগে নায়কদের মধ্যে যে প্রচেষ্টা ছিল এখন তা চোখে পড়ে না। মান্না মারা যাওয়ার পর সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিলেন বলেই হয়তো আজ শাকিব খানের যত খ্যাতি। মান্নার উত্তরসূরী শাকিব খান হলেও শাকিব খানের উত্তরসূরী হিসেবে কেউ নেই। কেউ কেউ চেষ্টা করলেও ভাগ্যলক্ষ্ণী ধরা দেয়নি। আরিফিন শুভ, বাপ্পী চৌধুরী, সায়মন সাদিক, ইমন, নিরব, আনিসুর রহমান মিলন, সিয়াম আহমেদসহ অনেক নতুনের আগমন হলেও সময়ের সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করতে পারছেন না। এদের দু-একটি চলচ্চিত্র আলোচনায় এলেও নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারেননি।

এদের মধ্যে ছোটপর্দা থেকে রুপালি পর্দায় এলেও 'হালে পানি না পাওয়া'য় ফের ছোটপর্দায় থিতু হচ্ছেন অনেকেই। আবার অনেকে ছোটপর্দায় ব্যাপক প্রশংসিত হলেও ক্যারিয়ারের কথা ভেবে সাহস করছেন না চলচ্চিত্রে। আরিফিন শুভ, সিয়াম আহমেদ ও বাপ্পী চৌধুরীকে নিয়ে পরিচালক-প্রযোজকরা স্বপ্ন দেখলেও তার ইঙ্গিত মিলছে না বলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। অনেকে চলচ্চিত্রের নায়ক সংকটের জন্য মানহীন চলচ্চিত্রকে দায়ী করেছেন। আবার কেউ কেউ যোগ্যতার অভাব বলে মনে করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে