মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে আলোকিত নারী নির্মাতারা

মাসুদুর রহমান
  ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যুগ বদলালেও নারী নির্মাতার সংখ্যা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে নগণ্যই। নানান ঘাত-প্রতিঘাত সত্ত্বেও পুরুষদের পাশাপাশি নির্মাণে এগিয়ে আসেন নারীরাও। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৭০ সালে। প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে হাতে ক্যামেরা তুলে নিয়েছিলেন রেবেকা। তার পরিচালিত 'বিন্দু থেকে বৃত্ত'র মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণে নারীর পথচলা শুরু হলেও দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানি সরকার এর একমাত্র নেগেটিভ ধ্বংস করে ফেলে সে সময়। তবে থেমে যায়নি নারীদের নির্মাণ। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নারী নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন। তাদের চলচ্চিত্র জাতীয় পর্যায়ে তো বটেই, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সুনাম কুড়িয়েছে। আলোকিত এসব নির্মাতাদের মধ্যে চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রোজী আফসারী, অভিনেত্রী সুজাতা, অভিনেত্রী সুচন্দা, কবরী, মৌসুমী, মেহের আফরোজ শাওন, তানিয়া আহমেদ, নার্গিস আক্তার, রুবাইয়াত হোসেন, সামিয়া জামান ও শাহনেওয়াজ কাকলীর নাম উলেস্নখযোগ্য।

১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় 'আশা নিরাশা' এ ছবিটি নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রোজী আফসারী। এটিও ব্যবসাসফল ছিল। এর দুই বছর পর ১৯৮৮ সালে অভিনেত্রী সুজাতা নির্মাণ করেন 'অর্পণ'। প্রেক্ষাগৃহে এটিও সাড়া ফেলে। এর এক দশক পর নির্মাণে আসেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ছিল 'বিদেশ যাত্রা'।

এটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালে সুচন্দা পরিচালনা করেন 'সবুজ কোট কালো চশমা'। ২০০২ সালে কহিনূর আক্তার সুচন্দা ফের নির্মাণ করেন জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে সরকারি অনুদানে 'হাজার বছর ধরে'।

রিয়াজ, শশী ও এটিএম শামসুজ্জামন অভিনীত এ চলচ্চিত্রটি দর্শক-প্রশংসার পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ কয়েকটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।

২০০৩ সালে 'কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি' দিয়ে চিত্রনায়িকা মৌসুমী চলচ্চিত্র

\হ

পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে মৌসুমী পরিচালনা করেন 'মেহের নিগার'। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন মৌসুমী এবং একজন আফগান যুবকের ভূমিকায় চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এ ছাড়া ২০০৬ সালে চিত্রনায়িকা কবরী নির্মাণ করেন 'আয়না'। ছবিটি সর্বমহলে দারুণ সাড়া ফেলে। দীর্ঘ বিরতির পর কবরী ফের নির্মাণে হাত দিয়েছেন। সরকারি অনুদানে তিনি নির্মাণ করছেন 'এই তুমি সেই তুমি' চলচ্চিত্রটি। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূূন আহমেদের 'কৃষ্ণপক্ষ' উপন্যাস অবলম্বনে মেহের আফরোজ শাওন নির্মাণ করেন 'কৃষ্ণপক্ষ' নামের চলচ্চিত্রটি। চলচ্চত্রিটির প্রিমিয়ার হয় ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রম্নয়ারি, তবে সারাদেশে মুক্তি পায় ২৬ ফেব্রম্নয়ারি। এতে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, মাহিয়া মাহি প্রমুখ।

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র 'ভালোবাসা এমনই হয়'। লন্ডনে চিত্রায়িত এ ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। ছবিতে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মীম, সাজ্জাদ, মীর সাব্বির, তানজিকা আমিন, মিশু সাব্বির, রবার্ট ইয়ং, সোহেল খান, তারিক আনাম খান প্রমুখ।

২০০২ সালে এইচআইভি এইডস বিষয়ক সচেতনতামূলক চলচ্চিত্র 'মেঘলা আকাশ' মুক্তি পায় নার্গিস আক্তারের হাত ধরে। মৌসুমী, শাকিল খান, শাবানা আজমি, আইয়ুব খান, পূর্ণিমা অভিনীত এই ছবিটি জাতীয় পুরস্কারেও নন্দিত হয়। সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার জিতে নেন নার্গিস। ২০০৫ সালেও বহু বিবাহের অন্যায়কে নির্দেশ করে সেলিনা হোসেনের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন 'চার সতীনের ঘর'। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'মেঘের কোলে রোদে' এর গল্প আবর্তিত হয় এইডস সম্পর্কে সচেতনতাকে উদ্দেশ্য করে। চলচ্চিত্রটি ৩৩তম জাতীয় পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী, সেরা কাহিনিসহ ছয়টি বিভাগে জয় লাভ করে। ২০১০ সালেও বিজয় নিশান উড়ান এই গুণী পরিচালক। ববিতা, নিপুণ, ফেরদৌস অভিনীত 'অবুঝ বউ' লগ্নিকৃত অর্থ তুলে আনার পাশাপাশি ৩৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও সেরা চিত্রনাট্য, সুর ও সম্পাদনার তিনটি পুরস্কার ঘরে তোলে। পাঁচ বছর বিরতির পর ববিতার সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'পুত্র এখন পয়সাওয়ালা' নির্মাণ করেন নার্গিস। ২০১৬ সালে তার 'পৌষ মাসের পীরিতি' চলচ্চিত্রটিও সাড়া ফেলে। সর্বশেষ সেলিম আল দীনের কথ্য-নাট্য 'যৈবতী কন্যার মন' নির্মাণ করেন নার্গিস। চলতি মাসেই এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে। নারী পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবি নির্মাণেই বাজিমাত করেছেন শিল্পনির্দেশক ও নাট্যনির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত তার পরিচালিত প্রথম ছবির 'উত্তরের সুর' মুক্তি পায় ২০১২ সালে। চলচ্চিত্রটি ৪টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন 'ভালোবাসা এমনই হয়'। ২০০৬ সালের 'রানী কুঠির বাকি ইতিহাস' নির্মাণ করে সামিয়া জামান। পপি, আলমগীর ও ফেরদৌস অভিনীত চলচ্চিত্রটি সুধীজনের কাছে অকুণ্ঠ প্রশংসা পায়। এ নির্মাতার ২০১৪ সালে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র 'আকাশ কত দূরে' মুক্তি পায় সরকারি অনুদান ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে। ২০১১ সালের ' মেহেরজান' দিয়ে আলোচনায় আসেন নারী নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন। ২০১৫ সালে তিনি নির্মাণ করেন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন'। ২০১৯ সালে টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় রুবাইয়াতের 'মেড ইন বাংলাদেশ'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে