সা ক্ষা ৎ কা র

যোগ্যতাই হচ্ছে বড় কথা

চিত্রনায়িকা শাকিবা বিনতে আলী। ২০০৫ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের পরিচালনায় 'ভন্ড নেতা' ছবির মধ্য দিয়ে ঢালিউডে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। আর দর্শকের সামনে আসেন 'জীবনের গ্যারান্টি নাই' ছবির মাধ্যমে। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, ছবি মুক্তির আগেই একটানা এক ডজনেরও বেশি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢালিউডে রীতিমতো ঝড় তোলেন তিনি। এরপর লম্বা বিরতির পর 'রোহিঙ্গা' ছবির মাধ্যমে ফের রুপালি পর্দায় প্রত্যাবর্তন ঘটে এ নায়িকার। সিনেমার পাশাপাশি ইদানীং তাকে টিভি নাটকেও দেখা যাচ্ছে। ৩৩টি ছবির নায়িকা শাকিবার সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাৎকারটি সাজিয়েছে মাতিয়ার রাফায়েল

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শাকিবা বিনতে আলী
আবার লকডাউন, ঝুঁকি, সংক্রমণ... এমনিতেই যা তা অবস্থা, তারপর আবার লকডাউন। দেশের যে পরিস্থিতি, এখন সবাইকেই তো সম্মিলিতভাবে ব্যাপারটাকে নিয়ে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। 'জীবনের মতো কাজেরও গ্যারান্টি নেই... আসলে আমি সিনেমায় সবসময় পড়ে থাকার মতো কাজ কখনোই করিনি। এটা আমার প্যাশনও ছিল না। আপনি দেখেন যে, এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কয়জন বিবিএ, এমবিএ করা গোল্ড মেডেলিস্ট আছে। আমি তো 'গোল্ড মেডেলিস্ট'। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কয়জন উচ্চশিক্ষিত নায়িকা আছে? এ সমস্ত কারণেই অনিয়মিত ছিলাম। তা ছাড়া একটা সময়ে মনে হয়েছে, একটা বয়সে আমরা কিন্তু সবাই ফ্যামিলির দিকে পা বাড়াই। যেটাকে বলা হয় বিয়ে করা, বাচ্চা-কাচ্চা, সংসার করা। তখন মা শিক্ষিত না হলে সন্তান-সন্ততিরা শিক্ষিত হয় না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আজকাল যে যুগ পড়েছে যে, মা শিক্ষিত না হলে তার সন্তানরাই বলে, তুমিতো ম্যাট্রিক পাস, ফাইভ পাস, ইন্টারমিডিয়েট পাস, তুমি কাকে কি বুঝ দিবা, তুমি নিজেই বুঝো না, তুমি অন্যকে কি বোঝাবা- এইগুলো ওভারকাম করতে হলে শিক্ষাটা কিন্তু জরুরি হয়ে পড়ে। বেছে বেছে কাজ করব... এই যে আমার বর্তমান বয়স ও রূপ যৌবনকে যে চরিত্রে কাজে লাগাচ্ছি, কালকে এই চরিত্র নাও পেতে পারি, তখন এত চাহিদা, পারিশ্রমিক, দর্শকের আগ্রহ কিছুই থাকবে না, জীবন তো একটা বয়স থেকে আরেকটা বয়সে যায়, যাবেই। অনেক নায়িকা আছে, একটা বয়সে এসে যারা সমস্যায় পড়ে যায়। কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে জীবন-নির্বাহ করে। এখন কান্নাকাটি করে বললাম, আমি তিনশ ছবি করেছি, কিন্তু এখন যা করছি, তা হচ্ছে, আমি কোনো দোকানে ফল বিক্রেতা, বই বিক্রেতা, বা অনৈতিক কাজকর্ম দিয়ে আমার জীবন নির্বাহ করছি। কিন্তু আমি চাই সামাজিক, পারিবারিক মর্যাদাকেও অক্ষুণ্ন রাখবো এবং পাশাপাশি সিনেমাও করব। বেছে বেছে কাজ করব। পুতুল দিয়ে কী করব... জাতীয় সম্মান তো সামাজিক সম্মান ছাড়া আসে না। আমাকে জাতীয় সম্মান দেওয়া হলো কিন্তু পেছনে বলা হলো, আমি খারাপ মানুষ, আমি এই করি, সেই করি, তাতে কী লাভ হলো? ওই পুতুল দিয়ে কি করবো? আর যিনি সামাজিকভাবে খারাপ হিসেবে পরিচিত, তাকে জাতীয় সম্মান দেওয়া হবে? আগে পরিবার তারপর অন্যকিছু... প্রতিটি মানুষের পরিবারই সবার আগে। যদিও পারিবারিক ব্যাপার ছাড়াও সামাজিক ব্যাপার বলে একটা কিছু আছে। তাই না! পরিবার সমাজের কাছে দায়বদ্ধও। এই দায়বদ্ধতা থেকেই কিন্তু তখন সেটার একটা উত্তর থাকতে হয়। উত্তর দিতে হয়। আমার কাছে পেশা নয়, যোগ্যতাই হচ্ছে বড় কথা। অভিনয়ে আসার পেছনে অনুপ্রেরণা... অনুপ্রেরণা আসবে কোত্থেকে? আসলে আমাদের পরিবারের কেউ মিডিয়ায় আসেনি। আমিই প্রথম। এই যে আমি যখন সিনেমায় এলাম, তখন কিন্তু আমার বাবা প্রথম এক বছর আমার সাথে একপ্রকার কথাও বলেননি। মা বলেছেন, 'এই কাজে কেন? এটা ছাড়ো।' বাবা মারা গেছেন তিন বছর হলো। একপর্যায়ে বাবা বললেন, ঠিক আছে, তোমার যখন এটা পছন্দ, তুমি তোমার কাজ করো। কিন্তু তুমি কখনোই কোনো অনৈতিক কাজে নিজেকে জড়াবে না। নৈতিকভাবে কাজ করবে। পড়াশোনা শেষ করবে। ভালো ফলাফল করতে হবে। বাবার ধারণা ছিল সিনেমায় অভিনয় মানেই খারাপ কিছু হয়ে যাওয়া। এই আশঙ্কা থেকেই তিনি চাননি আমি চলচ্চিত্রে কাজ করি।