ঝুলে গেল অনুদানের চলচ্চিত্র

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
অনুদানের চলচ্চিত্র 'ভালোবাসার প্রীতিলতা'র একটি দৃশ্যে নুসরাত ইমরোজ তিশা
মহামারি করোনায় ঝুলে গেল সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শুটিং করতে না পারায় নির্দিষ্ট সময়-সীমার মধ্যে জমা পড়ছে না অনুদানের ১৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। করোনাভাইরাসের কারণে চলচ্চিত্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে অধিকসংখ্যক ছবিকে অনুদান দেওয়া হয়। গত বছরের ২৫ জুন তথ্য মন্ত্রণালয়েরর প্রজ্ঞাপনে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের তালিকা প্রকাশ করা হলেও গত ৯ মাসে একটি চলচ্চিত্রের শুটিংও শেষ হয়নি। এর মধ্যে কোনোটির শুটিং শুরুই হয়নি। আগামী জুন মাসের মধ্যে কোনো চলচ্চিত্র জমা পড়ার সম্ভাবনাও নেই। ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অন্যতম চলচ্চিত্র 'ভালোবাসার প্রীতিলতা'। স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য চট্টগ্রামের বিপস্নবীদের যে বিস্ময়কর ও সাহসিকতাপূর্ণ অভু্যত্থান ঘটেছিল সেই ইতিহাসকে ধারণ করে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস 'ভালোবাসা প্রীতিলতা' অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে এ চলচ্চিত্র। প্রদীপ ঘোষ পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের চরিত্রে অভিনয় করছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। বিপস্নবী রামকৃষ্ণ চরিত্রে দেখা যাবে মনোজ প্রামাণিককে। গত বছরের অক্টোবরে এ চলচ্চিত্রের প্রথম লটের শুটিং হয়। দুই ধাপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় লটের শুটিং হয় নভেম্বরে। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে আটকে এ ছবির বাকি অংশের শুটিং। নাম না প্রকাশের শর্তে এ ছবির এক অভিনয়শিল্পী জানান, 'ভালোবাসা প্রীতিলতা'র শুটিং প্রায় শেষ। করোনার কারণে এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না কবে নাগাদ শুরু হবে এর বাকি অংশের শুটিং। অপু বিশ্বাস ও নিরব জুটির সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র 'ছায়াবৃক্ষ'। তানভীর আহমেদের চিত্রনাট্যে এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করছেন বন্ধন বিশ্বাস। এর শুটিং শুরু হয় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ইতোমধ্যে ছবিটির প্রায় ৬০ শতাংশ শুটিং শেষ হয়েছে। চলতি মাসে এর শুটিং হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনযাত্রা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ চলচ্চিত্র। এতে আরও অভিনয় করছেন- কাজী নওশাবা আহমেদ, সুমিত সেনগুপ্ত, শতাব্দী ওয়াদুদ, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু (বড়দা মিঠু) প্রমুখ। করোনা ও পারিপার্শ্বিক কারণে গত বছর শুটিং শুরু করতে পারেনি চিত্রনায়িকা রোজিনা তার 'ফিরে দেখা' চলচ্চিত্রের। অবশেষে চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম দিনে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থেকে শুটিং শুরু হয় সরকারি অনুদানের এ চলচ্চিত্রের। প্রথম লটের শুটিং শেষ হলেও করোনায় এগুচ্ছে না এর বাকি অংশের কাজ। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলেই ফের এর শুটিং শুরু হবে বলে জানা গেছে। 'ফিরে দেখা' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর অভিনয়ে ফিরেন চিত্রনায়িকা রোজিনা। সেই সঙ্গে ছবিটি পরিচালনাও করছেন তিনি। এ চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন রোজিনা। আরও অভিনয় করছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, নিরব স্পর্শিয়া প্রমুখ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়া 'আশীর্বাদ' চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হয় ২৭ সেপ্টেম্ব্বর পুরনো ঢাকার সূত্রাপুরে। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এ ছবির শুটিংও শেষ হয়নি। এ চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও জিয়াউল রোশান। আরও অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, সীমান্ত প্রমুখ। সত্তর দশকের ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি ধাপে সিনেমাটির গল্প সাজানো হয়েছে। পর্দায় তরুণ ও বৃদ্ধ দুই বয়সে মাহিকে দেখা যাবে। ইস্পাহানী আরিফ জাহানের 'হৃদিতা'। মূলত করোনায় না হলেও আইনি জটিলতায় আটকে আছে সরকারি অনুদানের এ ছবির কাজ। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের 'কাজলরেখা' চলচ্চিত্রটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অনুদান পায়। ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে এর গল্প তৈরি। নির্মাতার ১০ বছরের পরিকল্পনার এ চলচ্চিত্রের শুটিং এখনো শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তারও নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ বলতে পারেননি পরিচালক। পরিচালক সেলিম বলেন, 'এখনো এ চলচ্চিত্রের কোনো খবর নেই। কবে শুরু করব তাও কিছু বলতে পারছি না। চলচ্চিত্রটির জন্য ৫০০ বছর আগের সময়ে ফিরে যেতে হবে আমাকে। লোকেশন, আবহ? সব সে সময়ের জন্য তৈরি করতে হবে। ময়মনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখার যে পালা আছে, সেখান থেকেই ছবির গল্প। ফলে কাজটি বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।' জানা যায়, ৫০০ বছর আগে ৯ বছর বয়স হলেই সমাজের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে দিতে হতো। কাজল রেখার বয়স যখন ৯ হয়, তখন এক নতুন গল্প তৈরি হয়। সেটিই উঠে আসবে সেলিমের এবারের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায়। করোনা প্রকোপে পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার 'টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী' চলচ্চিত্রের শুটিং করতে পারছেন না। গুলজার বলেন, 'প্রথমবার অর্থ দেওয়ার পর থেকেই সময় হিসাব করা হয়। ৯ মাস সময় বেঁধে দিলেও নানা কারণে এই সময়ে শেষ করা যায় না। সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে মন্ত্রণালয় সময় বাড়িয়ে দেন। এবার করোনার কারণে সময় বাড়ানোর কথা।' গত ৬ মাসেও শুটিং শুরু হয়নি ইফতেখার আলম পরিচালিত 'লেখক' চলচ্চিত্রের। খবর নেই মনজুরুল ইসলামের 'বিলডাকিনী' চলচ্চিত্রের। একই অবস্থা ফজলুল কবীর তুহিনের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'গাঙকুমারী' চলচ্চিত্রের। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি চলচ্চিত্রের খবরও ভালো না। পংকজ পালিত পরিচালনার 'একটি না বলা গল্প' চলচ্চিত্রের ৬০ ভাগ শুটিং শেষ হলেও করোনার কারণে আটকে আছে ৪০ ভাগ শুটিং। ছবিটি নিয়ে পংকজ পালিত বলেন, 'অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি ৬০ শতাংশ শুটিং শেষ করেছি। চলতি মাসে আমার বান্দরবানে শুটিং করার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে পারছি না। বৈশ্বিক পরিস্থিতি না হলে আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ছবিটি জমা দিতে পারতাম।' অপরদিকে অনম বিশ্বাসের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'ফুটবল ৭১' এস এ হক অলিকের 'যোদ্ধা' চলচ্চিত্রের শুটিংও অনিশ্চিত। অনেকটা অনিশ্চয়তায় শিশুতোষ দুই চলচ্চিত্র-আমিনুল হাসান লিটুর প্রযোজনা ও আউয়াল রেজার পরিচালনায় 'মেঘ রোদ্দুর খেলা' ও নুরে আলমের প্রযোজনা ও পরিচালনায় 'রাসেলের জন্য অপেক্ষা'। ২০১৯-২০ অর্থবছর ছাড়াও সরকারি অনুদানের অনেক চলচ্চিত্রই আটকে আছে নানা কারণে। এসবের মধ্যে সম্প্রতি একাধিক চলচ্চিত্রের শুটিং গোপনে শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায় করোনার এই সময়ে।