কেমন আছেন করোনামুক্ত আবুল হায়াত

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২১, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
আবুল হায়াত
বিশিষ্ট টিভি ও থিয়েটার ব্যক্তিত্ব বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই তিনি তার অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয়। বহু বছর ধরে টিভি নাটকে, সিনেমায় আর বিজ্ঞাপনে সফলতার সঙ্গে অভিনয় করে আসছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর তার অভিনীত সর্বশেষ তৌকীর আহমেদ পরিচালিত 'স্ফুলিঙ্গ' চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। 'দারুচিনি দ্বীপ' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তার অভিনয় মানেই দর্শকের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজী প্রাণখোলা হাস্যরসের সঙ্গে সহসা বিমর্ষমনা পরিবেশের বিনোদন। তিনি যেন ষাট-সত্তর দশকের মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রাণবন্ত জীবনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে যখন দুই ঈদের নাটক বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি থাকে তখন দেশের নাটকপ্রিয় মধ্যবিত্ত পরিবার তার অভিনয়ের মধ্যে কেউ কেউ যেন নিজ পরিবারের কর্তামুখটিকেই দেখতে পায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও ঈদের কোনো নাটকে বা অনুষ্ঠানে আবুল হায়াতের অনুপস্থিতি একেবারেই অকল্পনীয়। এটা যেন এক প্রকার নিয়মই হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ঈদ নাটকে। কিন্তু এবারই যেন সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়ে গেল। না, এবারের ঈদুল ফিতরে অনুষ্ঠিতব্য কোনো অনুষ্ঠানেই আবুল হায়াতের উপস্থিতি থাকছে না। দেশের কোনো পরিবারই একসঙ্গে মিলে তার প্রাণখোলা হাস্যোজ্জ্বলতার পাশাপাশি স্বভাবসুলভ বিমর্ষ, উদাস মনমরা উপস্থিতি দেখতে পাবে না। কারণ, বেশ কিছুদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৩১ মার্চ করোনা ইতিবাচক প্রতিবেদন পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। একপর্যায়ে পরিবারের পক্ষ থেকে প্লাজমা চেয়ে ফেসবুকে পোস্টও দেওয়া হয়েছিল। সাড়াও পড়েছিল বেশ। পস্নাজমা পেতে দেরিও হয়নি। এতেই প্রমাণিত হয় দেশের টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবুল হায়াত কতটা জনপ্রিয়। এরপর দেশের অসংখ্য গুণগ্রাহীর উদ্বেগ ও শুভকামনায় সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। তার এই ফেরায় চিকিৎসকরাও বেজায় খুশি। এ ব্যাপারে যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে কিছু জানতে চাইলে তিনি এরকম কথাই বলেন। বলেন, 'সবেমাত্র করোনা থেকে মুক্ত হয়েছি। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় অনেকটা ভালো আছি।' এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'অবশ্য কিছু শারীরিক জটিলতা আছে। করোনা থেকে মুক্ত হলেও করোনার রেশে যেসব সমস্যা থেকে যায় তা থেকে এখনও মুক্ত হইনি। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখনও বিশ্রামে আছি। কোনও কাজ করছি না। ঈদের আগে কোনো কাজ করব না। চিকিৎসকরা আমাকে নিরিবিলি থাকতে বলেছেন। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমি সেটাই মেনে চলছি। ধরে নিতে পারেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে অভিনয়ে ফিরছি না। শরীরটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলেই কাজে ফিরব। তবে আগের সেই ব্যস্ততার মধ্যে আর ফিরছি না। বড়জোর পছন্দের অল্প কিছু কাজে যুক্ত হব।' কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে করা এমন কোনো কাজ নেই যা এবারের ঈদে প্রচারিত হতে পারে? এর জবাবেও তিনি বলেন, 'না, এমন কোনো কাজও নেই যা ঈদে প্রচারিত হবে।' অর্থাৎ এবারের ঈদে নতুন রূপে এই জনপ্রিয় অভিনেতাকে দেখা যাচ্ছে না। বড়জোর পুরনো কোনো নাটকে হয়তো তাকে দেখা যেতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথাই জানালেন তিনি। এরপরই এই জনপ্রিয় অভিনেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বর্তমান নাটক যেভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে নায়ক আছে, নায়িকা আছে এছাড়া আর কিছুই নেই। দুজনের সংলাপ দিয়েই শেষ করা হচ্ছে নাটক। তার মানে ওই নায়কের বা নায়িকার কোনো বাবা-মা নেই, প্রতিবেশী নেই, আত্মীয়-স্বজন নেই, আছে শুধু বড়জোর কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণকালীন বন্ধুবান্ধব, এটা কি বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বিষয়টা নিয়ে ইতিপূর্বে অনেকবার আলোচিত হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে পারফর্মারদের তো কিছুই করার নেই। এখানে যারা চিত্রনাট্য লেখেন, যারা নাটক-সিনেমা পরিচালনা করেন বা প্রযোজনা করেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তারাই এর ভালো জবাব দিতে পারবেন, কেন ব্যক্তি জীবনের টোটাল প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে না তাদের নির্মাণ কাজে, এতে কি ধরনের সংকট কাজ করছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি অভিনেতা, যখন যেটা ভালো লাগে তাতে অভিনয় করি, এর বাইরে আমার বলার কিছুই নেই।' তার মানে একসময় নাটকে বা সিনেমায় যারা চরিত্রাভিনেতা বা চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন বর্তমানকালীন নাটক বা সিনেমায় সমাজবিচ্ছিন্ন প্রেমিক-প্রেমিকার হালকা-পাতলা সংলাপধর্মী নাটকে বা সিনেমায় সেই চরিত্রাভিনেতা বা চরিত্রাভিনেত্রীর জায়গাটা একেবারেই ছোট ও সংকীর্ণ হয়ে আসছে, একেবারেই কোণঠাসা হয়ে আসছে? সমাজে মানুষ বলতে যে একটা পরিপূর্ণ মানুষ রয়েছে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন বয়সের জীবন-যাপনের মধ্যদিয়ে, সেখান থেকে কাটছাঁট করে শুধু প্রায় বিশ-ত্রিশ বছরটাই থাকছে, বাদবাকি বয়সগুলো, বয়সের যোগাযোগগুলো একেবারেই শূন্যে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে? এমন এক পশলা কথায় প্রায় ছয় দশকের এই সফল চরিত্রাভিনেতা বলেন, 'আমি আসলে এ নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে অপারগ। তাছাড়া আমি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামে আছি। পরে অন্য কোনো একসময় এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব।'