ঈদেও সিনেমাশূন্য প্রেক্ষাগৃহ!

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
'অপারেশন সুন্দরবন' সিনেমার দৃশ্য
বন্ধ থাকা দেশের বড় এবং ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলগুলো যখন ধীরে ধীরে খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, ঠিক সেই সময় আবারও দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নতুন সিনেমার মুক্তি। এমনকি আসন্ন কোরবানি ঈদেও কোনো সিনেমার মুক্তির সম্ভাবনা নেই। গত বছরের দুই ঈদ ও গেল ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও সিনেমাশূণ্য থাকবে দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো। রোজার ঈদের পর করোনার প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর স্টার সিনেপেস্নক্স। বন্ধ থাকা রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী দুই সিনেমা হল- মধুমিতা ও শ্যামলীও এ মাসের শেষের দিকে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবকিছু ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে ঈদে মুক্তির পরিকল্পনায় থাকা সিনেমাগুলো নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে নির্মাতাদের মনে। ঈদের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে প্রায় ডজনখানেক নতুন সিনেমা। এসব সিনেমার বেশিরভাগই তারকাবহুল-বিগ বাজেটের। এর মধ্যে আরিফিন শুভ-ঐশী অভিনীত 'মিশন এক্সট্রিম', কলকাতার দেব ও বাংলাদেশের জাহারা মিতুর 'কমান্ডো', শাকিব খান-বুবলীর 'বিদ্রোহী', সিয়াম-পূজা চেরীর 'শান' এবং নিরব-বুবলীর 'ক্যাসিনো'। শাকিব খান ও কলকাতার দর্শনা বণিক অভিনীত 'অন্তরাত্মা' সিনেমাগুলো। বড় বাজেটের এসব চলচ্চিত্র ছাড়াও ঈদে মুক্তির আভাস ছিল 'ওস্তাদ', 'অপারেশন সুন্দরবন', 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন', 'শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২', 'আনন্দ অশ্রম্ন', 'ডেঞ্জার জোন' এবং 'পরান' নামের সিনেমাগুলোর। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সবগুলোই অন্ধকারে পড়ে আছে। দুই-একটি সিনেমা হল খোলা থাকলেও সিনেমা মুক্তি দেওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ নেই বলে প্রযোজকরা এই সময় চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে সাহস করছেন না। ঈদের জন্য তৈরি বড় বাজেটের চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রযোজকরা। পরবর্তীকালে এসব সিনেমা মুক্তিতে লোকসানের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রযোজকরা। করোনায় গত বছর দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর সিনেমা হল খুললেও দর্শক সাড়া জাগছেনা সিনেমা হলে। গত বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে চলতি মাসের এ সময় পর্যন্ত ১৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও কোনোটিই সুবিধা করতে পারেনি। হলে দর্শক ফেরাতে ঈদের অপেক্ষায় ছিলেন চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভেস্তে যায় সব পরিকল্পনা। গত ঈদুল ফিতরে প্রেক্ষাগৃহের একমাত্র নতুন চলচ্চিত্র মৌসুমী-ডিপজলের 'সৌভাগ্য' দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। ঈদুল আজহা নিয়ে অনেকটা আশায় থাকলেও হতাশ হতে হচ্ছে প্রযোজক-পরিচালকদের। নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি তো দূরের কথা, শুটিং ও সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু যায়যায়দিনকে বলেন, 'ঈদের জন্য বেশ কিছু তারকাবহুল ও বিগ বাজেটের চলচ্চিত্র তৈরি হয়ে আছে। গত তিন ঈদে সেগুলো মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি করোনার কারণে। কোরবানির ঈদেও সম্ভব হবে কিনা, সেটা অনিশ্চিত। কারণ, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ভালো না। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর এখন তৃতীয় ঢেউয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেটা আরও ভয়ঙ্কর। তবে ঈদের এখনো মাসখানেক সময় বাকি আছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি ভালোর দিকে আসলে হয়ত প্রযোজকরা চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে সাহস করবেন।' অন্যদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, 'করোনার কারণে অনেক সিনেমা হল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। ঈদের জন্য চলচ্চিত্র প্রস্তুত হয়ে থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। লোকসান দিয়ে তো আর প্রযোজকরা চলচ্চিত্র চালাবেন না। তবে আমি আশাবাদী, ঈদে প্রেক্ষাগৃহে নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে। কারণ, এখনো ঈদের অনেক সময় বাকি। আগামী মাসের প্রথম দিকে পরিস্থিতি বোঝা যাবে।'