তিরানব্বইতে লতা মুঙ্গেশকর

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

বিনোদন ডেস্ক
লতা মুঙ্গেশকর
উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রথিতযশা গায়িকা লতা মুঙ্গেশকর আজ তিরানব্বইতে পা রাখছেন। জন্মেছেন অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। ভারতসহ পৃথিবীর অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত এই কালজয়ী গায়িকা বর্তমান বয়সেও তার মায়াবী সুরেলা কণ্ঠের মধু ধরে রেখেছেন। শুধু হিন্দিতেই নয়, বহু ভাষার দেশ বিশাল ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষাতে গান গাইতে পারার রেকর্ড একমাত্র তারই দখলে। এমএস সুব্বুলক্ষ্ণীর পর ভারতের দ্বিতীয় 'ভারতরত্ন' ও 'পদ্মবিভূষণ' ভূষিত লতা মুঙ্গেশকর দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ ফ্রান্সের 'লেজিওঁ দনরের' অফিসার খেতাবও লাভ করেন। এ ছাড়া ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, দুটি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। লতার পিতা ছিলেন মারাঠী ও কোঙ্কিণী ভাষার প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও মঞ্চ অভিনেতা পন্ডিত দীননাথ মুঙ্গেশকর এবং মাতা হচ্ছেন গুজরাটি নারী শেবন্তী। তিনি দীননাথের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। তার বড় বোন দীননাথের প্রথম স্ত্রী নর্মদা শেবন্তী মারা গেলে তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। তারই গর্ভের লতার পাঁচ ভাইবোনের বাকিরা হচ্ছেন- আশা ভোঁসলে, ঊষা মুঙ্গেশকর, মীনা মুঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মুঙ্গেশকর। সংগীতের আবহে বেড়ে ওঠা সবাই সংগীতশিল্পী। তার মধ্যে আশা ভোঁসলে ভারতের আরেক পেস্ন-ব্যাক সম্রাজ্ঞী প্রবাদপ্রতিম গায়িকা। হৃদয়নাথও প্রতিষ্ঠিত গায়ক। দীর্ঘজীবী তারা দুবোনই গত আশি-বিরাশি বছর ধরে প্রবল প্রতাপের সঙ্গে ভারতের হিন্দি গানের রাজ্য শাসন করে আসছেন। লতার প্রিয় গায়ক ছিলেন ভারতের আরেক প্রবাদপ্রতিম সুরেলাকণ্ঠী গায়ক কেএল সায়গল। এ নিয়ে হৃদয় নাড়া দেওয়ার মতো একটি গল্পও আছে। অসচ্ছল সংসারে দীননাথ যখন রেডিও কিনতে সমর্থ হন তখন লতার বয়স আঠারো। এ সময়ে লতা রেডিওর নব ঘুরাতেই প্রথম যে সংবাদটি তাকে শুনতে হয়, 'কেএল সায়গল আর বেঁচে নেই।' সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওটা ফেরত দেন। ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন এতটাই আবেগপ্রবণ তিনি। এমন প্রগাঢ় আবেগ দিয়েই দীর্ঘকাল ধরে সমানতালে গেয়ে আসছেন তিনি। ভাইবোনেরা সংসারী হলেও অসচ্ছল সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি সংসারী হননি। দেবীর আসনে অধিষ্ঠিত লতাকে নিয়ে ভারতে বহু মিথও প্রচলিত আছে। গায়িকার পরিচয়ের বাইরে সংগীত পরিচালক বা চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে তার খ্যাতি থাকলেও কেউ লতা মুঙ্গেশকরের নাম উচ্চারণ করলেই মানুষের মনের মুকুরে ভেসে ওঠে গোটা ভারতের সংগীতের ইতিহাসেই কালজয়ী এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের কল্পনা। যার গান অনেক শ্রম্নতিমধুর এবং আনন্দঘন। লতা মুঙ্গেশকর মানেই এক আনন্দঘন সুমধুর সুরেলা কণ্ঠের কালজয়ী গায়িকার নাম। নতুন শতাব্দীতে এসেও তিনি একই রকম প্রাসঙ্গিক। গোটা উপমহাদেশের ইতিহাসে হাতেগোনা যে কয়জন কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী আছেন যুগ যুগ তিনি সেই অনড় আসনেই থাকবেন। তার জন্মদিনে আমাদেরও এই কামনা।