মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে অ্যাকশন সিনেমার ধারা

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা 'মিশন এক্সট্রিম' সিনেমার দৃশ্য

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন বদলে গেছে সবকিছু, তেমনি পাল্টে গেছে চলচ্চিত্রের ধারাও। বর্তমান বিশ্বে অ্যাকশন সিনেমাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শক লক্ষ্য করা যায়। আবার ধাপে ধাপে এ সিনেমাপ্রেমীদের রুচিও অতি দ্রম্নত বদলাতে থাকে। সে জন্য নির্মাতাদেরও ব্যতিক্রম গল্পের জন্য সবসময়ই এক ধরনের হয়রান থাকতে হয়। গত কয়েক বছরে ঢাকাই সিনেমায় অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা হিসেবে একমাত্র 'ঢাকা অ্যাটাক'কেই প্রথম সার্থক কাজ ধরতে হয়। আমাদের দেশে পুলিশকে একতরফা উপজীব্য করে সিনেমা নির্মাণে ঝুঁকি থাকায় আগে নির্মাতারা এ নিয়ে চিন্তা করেননি। যেসব দেশে পুলিশের আধুনিকায়ন ও তার ভাবমূর্তি ভালো সেখানেই পুলিশি অ্যাকশন সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা ভালো। কিন্তু পুলিশ শুধুই 'দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন'ই নয়- আরও বহু কিছু, এটা আগের নির্মাতারা বোঝেননি। যেমন দেখা যায়, চাইনিজ অ্যাকশন সিনেমা 'পুলিশ স্টোরি'তে। গল্পের চাহিদা অনুযায়ী অ্যাকশন সিনেমার বাজেটও মাঝারি থেকে বিশাল। হলিউড অ্যাকশন সিনেমা মিশন ইম্পসিবল এবং বলিউড অ্যাকশন সিনেমা ধুম-২ যখন হয়, তখনকার প্রেক্ষাপটে সেই বাজেট বিশাল। সাফল্যও বিশাল।

দীপংকর দীপনের 'ঢাকা অ্যাটাক'র পর আসছে আরেক অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা 'মিশন এক্সট্রিম'। যার একটি গান 'জানি তুমি ছিলে'তেই নাকি ব্যয় হয়েছে ২৮ লাখ টাকা! 'ঢাকা অ্যাটাক' সিনেমায় 'টুপ টাপ' গানে ব্যয় হয়েছিল তখনকার প্রেক্ষাপটে ১৮ লাখ টাকা। যে টাকায় জাতীয় চলচ্চিত্র বা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার মতো একটি সিনেমাও বানানো যায়! আসলে গানের মান ও লোকেশন অনুযায়ী সৌন্দর্যের সঙ্গে খরচের একটা যোগও থাকে। এখন একটা গানে এত বাজেটের কারণেই অ্যাকশন সিনেমা থেকেই গান কমে আসছে।

উন্নত দেশের অ্যাকশন সিনেমায় যে রকম টেকনোলজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট থাকে ঢাকাই ফিল্ম এখনো প্রায় শিশু। তবে গত কয়েক বছরে অন্তত আগের চেয়ে উৎকৃষ্ট কালারিং এডিটিং গ্রাফিক্স ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়ছে ভালো গল্পে। আমাদের নির্মাতারা ভারত থেকে উন্নত প্রযুক্তি ক্যামেরা, কালার গ্রেডিং কর্জ করে আনতে পারলেও ভালো গল্প না পেয়ে একসময় নানা গোঁজামিল দিয়ে সিনেমা ছেড়ে দিচ্ছিলেন। সেই গোঁজামিল থেকে বেরিয়ে একটা ঝুঁকি নিয়েই দীপংকর দীপন যেভাবে 'ঢাকা অ্যাটাক' বানিয়ে ফেললেন, সেটা চাট্টিখানি কথা নয়। গল্পটির গাঁথুনি এতই শক্ত, কারও খুঁত খোঁজারও সুযোগ নেই। ছবিটির আউটস্ট্যান্ডিং সিনেমাটোগ্রাফি, কালারিং, অভিনয়, ডায়লগস আর ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট-সবমিলিয়ে অ্যাকশন সিনেমার পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে এটিও।

ঢাকাই সিনেমায় অ্যাকশন সিনেমা যারা বেশি বানিয়েছেন. তাদের মধ্যে মনতাজুর রহমান আকবর, কাজী হায়াৎ, মালেক আফসারী, মাসুদ পারভেজ অন্যতম। আশি ও নব্বই দশকেই সবচেয়ে বেশি অ্যাকশনধর্মী সিনেমা হয়। প্রথম অ্যাকশন সিনেমাটি ছিল ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জহিরুল হকের 'রংবাজ'। প্রথম অ্যাকশন হিরো হিসেবে ছিলেন নায়ক রাজ্জাক। এটির প্রযোজকও ছিলেন তিনি। ওই বছর ৩০টি মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে এটিই একমাত্র অ্যাকশনধর্মী সিনেমা ছিল। অ্যাকশন সিনেমার পথপ্রদর্শকও এটি। এরপর থেকে আগুন, নিশান, দোস্ত দুশমন, আসামী হাজির, ওস্তাদ সাগরেদ, মোহাম্মদ আলী, খামোশ, মিস ব্যাংকক, বজ্রমুষ্ঠি, বশিরা, কমান্ডার, খল নায়ক, কুলি, মৃতু্যর মুখে, গুপ্ত ঘাতক, মৃতু্য দাতা, বাঘা আকবর, জলস্নাদ, দুই রংবাজ, আম্মাজান, ভয়ঙ্কর বিশু, ঠেকাও মাস্তান, রংবাজ বাদশাহ, মায়ের জেহাদ, মেজর সাহেব, দাদাগিরি, জিরো জিরো সেভেন, যৌথ বাহিনী, ডেঞ্জার মিশন, গুরু দেব, জীবন এক সংঘর্ষ, ভাইয়ের শত্রম্ন ভাই, পালাবার পথ নাই, কুখ্যাত নুরু প্রভৃতি অ্যাকশন সিনেমা নির্মিত হয়। তবে ১৯৮৬ সালের আগে কোনো বছরে একটি দু'টির বেশি অ্যাকশনধর্মী সিনেমা হয়নি। কোনো বছর একটিও হয়নি বা টানা দুচার বছরে একটিও হয়নি। ওই বছরই প্রথম নয়টি অ্যাকশনধর্মী সিনেমা হয়। এরপরই এ ধারার দর্শকপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সিনেমায় নকলের যুগও আসে অ্যাকশন সিনেমার হাত ধরেই। যেমন- শোলে'র কাট টু কাট নকল 'দোস্ত দুশমন'। নকলবাজরা কখনোই বেশি দিন টিকে না। ফলে গত দশক থেকেই অ্যাকশনধর্মী সিনেমাও কমে আসছিল। এ সময় শুধু রোমান্স, সামাজিক ও মারপিটধর্মী সিনেমা হচ্ছিল। ২০১৭ সালে 'ঢাকা অ্যাটাক' দিয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকশন সিনেমা। এরপরই নির্মিত হতে থাকে-পাসওয়ার্ড, বীর, শাহেন শাহ, নবাব এলএলবি, মিশন এক্সট্রিম, অপারেশন সুন্দরবন, রক্ত প্রভৃতি। এখন দেখার অপেক্ষা, দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যাকশন সিনেমা কতদূর যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে